অ্যাপশহর

এ বার আসল 'অযোধ্যা'র খোঁজে নেপালে পুরাতাত্ত্বিক খনন !

রামের প্রকৃত জন্মভূমি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন নেপালের বিদেশমন্ত্রী। এ বার সে দেশের পুরাতত্ত্ব বিভাগ ঘোষণা করল, তারা সেই গবেষণার কাজ শুরু করতে চলেছে। একইসঙ্গে থোরিতে পুরাতাত্ত্বিক খননকাজেও তারা হাত দিচ্ছে।

EiSamay.Com 17 Jul 2020, 9:56 am
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: রামজন্মভূমি 'অযোধ্যা'কে মুখের কথায় নেপালের মানচিত্রে ঢুকিয়ে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি যে নয়া বিতর্কের সূচনা করেছেন, তাকে আরও কয়েক কদম সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে এ বার আদাজল খেয়ে মাঠে নামছে নেপালের পুরাতত্ত্ব বিভাগ। রামের জন্মভূমি খুঁজতে অলির দাবি মতো দেশের দক্ষিণে, থোরিতে খননকাজ শুরু করতে চলছে পুরাতত্ত্ব বিভাগ। একই সঙ্গে চলবে গবেষণাও।
EiSamay.Com KP-Oli-759
অযোধ্যা খুঁজতে এ বার খনন...


নেপালের পুরাতত্ত্ব বিভাগের ডিজি দামোদর গৌতম বৃহস্পতিবার জানান, একটি দায়িত্ববান সংস্থা হিসেবে দেশে সাংস্কৃতিক আর ধার্মিক স্থলগুলি নিয়ে পুরাতাত্ত্বিক খনন, অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণ করা হবে। গৌতম বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রীর বয়ানের পর আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে কিছু।’ আর সেই কারণেই নেপালের সঙ্গে রামের সম্পর্ক খুঁজতে নেপাল মরিয়া হচ্ছে।

গৌতমের কথা অনুযায়ী, খুব শিগগির একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। যেখানে ইতিহাসবিদ, সাংস্কৃতিক বিশেষজ্ঞ, ধার্মিক নেতা, শিক্ষক, গবেষকরা উপস্থিত থাকবেন। এর পর খননের প্রধান স্থান নির্ধারণ করা হবে।

নেপাল পুরাতত্ত্ব বিভাগ জানায়, প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির দাবি অনুযায়ী, আপাতত থোরি গ্রামে খননকাজ শুরু হবে। বিগত কয়েক বছর ধরে বারা, ধৌসা আর চিতবন জেলায় খননকার্য চালানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। থোরিতে খননকাজ শুরু করার কারণ অলিই। নেপালের প্রধানমন্ত্রীর দাবি অনুযায়, সেখানকার বীরগঞ্জে থোরিতেই আসল অযোধ্যা অবস্থিত।

নেপালি ভাষায় রামায়ণ অনুবাদ করা কবি ভানুভক্তের জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে সোমবার অলি দাবি করেন, সীতার জন্মস্থল যেমন নেপালের জনকপুরে (আগে নাম ছিল মিথিলা), তেমনই রামের জন্মভূমিও বীরগঞ্জের কাছে থোরিতে। সেটিই আসল অযোধ্যা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তখন যাতায়াত ব্যবস্থা যা ছিল, তাতে ভারতের অযোধ্যা আর নেপালের জনকপুরের দূরত্বে রাম-সীতার বিয়ে হওয়া আদৌ সম্ভব? তাঁর অভিযোগ, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনেই নেপালের হাত থেকে রাম এবং অযোধ্যাকে ছিনিয়ে নিয়েছে ভারত।

অলির এমন দাবি শুনে বিস্মিত নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই। অলিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, 'সীমা ছাড়াচ্ছেন অলি। কলিযুগের নতুন রামায়ণ তিনি লিখবেন।' অলিকে মন্তব্য প্রত্যাহার করতে বলেছেন ক্ষমতায় থাকা নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির নেতা বামদেব গৌতমও।

তবে, এই অযোধ্যা বিতর্কে নেপালের প্রধানমন্ত্রী পাশে পেয়েছেন বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ গিওয়ালিকে। তাঁর বিদেশমন্ত্রী আরও দু-ধাপ এগিয়ে বুধবার দাবি করেন, রামায়ণ সভ্যতার কোনও ভিত্তি নেই। গিওয়ালির কথায়, 'রামায়ণ সভ্যতা নিয়ে এখনও ভারতে ও নেপালে গবেষণা চলছে। কেবল বিশ্বাসের ভিত্তিতে সমস্ত বিষয় আমরা অনুসরণ করে চলেছি। এর মধ্যে কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই।

নেপালের বিদেশমন্ত্রী বলেন, আমরা জেনেছিলাম সীতার জনকপুরে (Janakpur) জন্ম। রাম জন্মেছিলেন অযোধ্যায় (Ayodhya)। কিন্তু, যেদিন গবেষণা এর বাইরে অন্য কিছু প্রমাণ করবে, সেদিন রামায়ণের ইতিহাস (History of Ramayana) নিজেই বদলে যাবে। এর পরেই খানিক সংযত সুরে বলেন, বিষয়টির সঙ্গে বহু মানুষের আবেগজড়িত। তাই এ বিষয়ে খুব বেশি কথা বলে বিতর্ক বাড়াতে চাই না।

ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম ‘অ্যাজেন্ডা’ রামজন্মভূমিকে নেপালের বলে দাবি করে সম্প্রতি বিতর্ক উসকে দেন কেপি শর্মা অলি। তাঁর দাবি ছিল, 'রাম আদতে একজন নেপালি। রামের আসল জন্মভূমি অযোধ্যাও ভারতে নয়, নেপালে। কাঠমাণ্ডুর কাছে সেই ছোট্ট গ্রাম অযোধ্যা। সেখানেই জন্ম হয়েছিল রামের।' অলি বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি সীতা আমাদের দেশের, রামও এই দেশের। যে অযোধ্যায় রাম জন্মেছিল, সেই গ্রাম নেপালে, ভারতে নয়। নেপালের বীরগঞ্জ জেলা থেকে সামান্য পশ্চিমে ছোট্ট গ্রাম-- অযোধ্যা।

পরের খবর