অ্যাপশহর

পাকিস্তানে ফের মন্দির ভেঙে আগুন ধরাল উন্মত্ত জনতা, নিন্দায় পাকমন্ত্রী

পাকিস্তানে মন্দির ভেঙে আগুন ধরাল উন্মত্ত জনতা। একটি ধর্মীয় সংগঠনের উস্কানি রয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও, ওই সংগঠনটি তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন খাইবার পাখতুনখওয়ার মুখ্যমন্ত্রী।

EiSamay.Com 31 Dec 2020, 5:08 am
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: পাকিস্তানের রক্ষণশীল উত্তরপশ্চিম শহরে উগ্র ইসলামপন্থী দলের নেতৃত্বে একদল উন্মত্ত জনতা হিন্দুদের একটি মন্দির ভেঙে উল্লাসে আগুন ধরিয়ে দিল। খাইবার পাখতুনখওয়ার কারাক জেলায় বুধবার ঘটে যাওয়া এই ঘটনার নিন্দায় সোচ্চার হয়েছেন পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মীরা। এমনকী পাক মানবাধিকার মন্ত্রী শিরীন মাজারিও ঘটনার তীব্র নিন্দা করে, অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারে সংশ্লিষ্ট পুলিশ-প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। জেলা পুলিশ অফিসার ইরফান মারওয়াট জানান, কারাক জেলার টেরি গ্রামে হিন্দুদের একটি মন্দির বুধবার ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
EiSamay.Com Mob vandalises Hindu temple
মন্দির ভেঙে বীরত্ব পাকিস্তানে!


মন্দির ভাঙার খবর সামনে আসার পরেই টুইট করেন পাকমন্ত্রী শিরীন মাজারি। এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে, গ্রেফতারের নির্দেশ দেন পুলিশকে। জেলা পুলিশের প্রধান ইরফান উল্লাহর দাবি, মন্দিরে হামলার ঘটনায় জড়িত অনেককেই ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, উগ্র ইসলামিক গোষ্ঠী জমিয়ত উলেমায়ে ইসলাম পার্টির লোকাল কিছু নেতার উপস্থিতিতে মন্দির ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, স্থানীয় হিন্দুরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় অনুমতি সাপেক্ষে মন্দিরটির সংস্কারে হাত দিয়েছিলেন। কিন্তু, জমিয়তের নেতাদের তা পছন্দ হয়নি। তাই তাঁদের উস্কানিতে কয়েক'শো ধর্মীয় উন্মাদ মন্দিরে চড়াও হয়। মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে গুঁড়িয়ে মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

আর একটি সূত্রে অভিযোগ, ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই ওই এলাকায় উলেমায়ে ইসলাম-এফের একটি র‌্যালি ছিল। সেই পদযাত্রা থেকে বক্তারা প্ররোচনামূলক ভাষণ দেন। তাতেই প্ররোচিত হয়ে স্থানীয় কয়েক'শো উন্মত্ত লোক মন্দিরে চড়াও হয়। মন্দির ভাঙার জেরে এলাকায় প্রবল উত্তেজনা তৈরি হলে, ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। যদিও, অভিযুক্ত সংগঠনের আমির মওলনা আতাউর রহমান অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই। JUI-F এর তরফে মন্দির ভাঙার কড়া নিন্দা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে মন্দির ভেঙে তাণ্ডব, হিন্দু পরিবারগুলিকে বাঁচালেন স্থানীয় মুসলিমরা!

কয়েক সপ্তাহ আগে ইমরান খানের সরকার সংখ্যালঘু পাকিস্তানি হিন্দুদের উদ্দেশে জানায়, পুরনো মন্দিরের সংস্কার বা নির্মাণে কোনও বাধা নেই। সরকারের সেই ছাড়পত্র পেয়েই হিন্দুরা এলাকার পুরনো এই মন্দিরটির সংস্কারে উত্‍‌সাহিত হয়েছিলেন। উগ্র মৌলবাদীদের তা সহ্য হয়নি। এমন ঘটনা পাকিস্তানে এই প্রথম নয়। বিগত বছরগুলিতে সংখ্যালঘুদের একাধিক মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের সরকার ভারত ভেঙে দু'টুকরো করলে, বড় সংখ্যক হিন্দু পাকিস্তানের জমিজমা সব ছেড়ে ভারতে চলে আসেন।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে মন্দির ভাঙায় ক্ষুব্ধ ইমরান, কড়া পদক্ষেপে নির্দেশ

খাইবার পাখতুনখওয়ার মুখ্যমন্ত্রী মহম্মদ খান মন্দিরে হামলার ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন। ঘটনার দ্রুত রিপোর্ট চাওয়ার পাশাপাশি অভিযুক্তদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়স্থানে ভবিষ্যতে যাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা দেখারও আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্দিরগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।


হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা পেশওয়ার হারুন সরব দিয়াল জানান, মন্দির চত্বরে হিন্দুদের ধর্মীয় এক গুরুর সমাধিক্ষেত্র রয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার দেশের নানাপ্রান্ত থেকে হিন্দুরা সেখানে আসেন। শ্রদ্ধা জানাতে। হারুনের কথায়, এই ঘটনা হিন্দুদের আবেগে আঘাত করেছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ৭৫ লক্ষ হিন্দু রয়েছেন। যদিও, হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি, বর্তমানে ৯০ লক্ষ হিন্দু পাকিস্তানে রয়েছেন। এই হিন্দুদের একটা বড় অংশই আবার থাকেন সিন্ধ প্রদেশে। মাঝেমধ্যেই হিন্দুদের উপর জুলুমবাজির অভিযোগ শোনা যায়।

এই সময় ডিজিটাল এখন টেলিগ্রামেও। সাবস্ক্রাইব করুন, থাকুন সবসময় আপডেটেড। জাস্ট এখানে ক্লিক করুন

পরের খবর