অ্যাপশহর

মৃত্যুফাঁদ ঢাকার ‘সূর্য ভিলা’,তদন্তে পুলিশ

আশকোনায় ‘সূর্য ভিলা’র একতলার ফ্ল্যাটটিকে শনিবারই জঙ্গিমুক্ত করতে পেরেছে বাংলাদেশ পুলিশ৷ কিন্ত্ত ফ্ল্যাটটি কার্যত মৃত্যুফাঁদ হয়ে রয়েছে৷ তিন কামরার ফ্ল্যাটের বাইরের ঘরে পড়ে রয়েছে নিহত জঙ্গি আফিফ কাদরীর লাশ৷

EiSamay.Com 26 Dec 2016, 10:57 am
ঢাকা: আশকোনায় ‘সূর্য ভিলা’র একতলার ফ্ল্যাটটিকে শনিবারই জঙ্গিমুক্ত করতে পেরেছে বাংলাদেশ পুলিশ৷ কিন্ত্ত ফ্ল্যাটটি কার্যত মৃত্যুফাঁদ হয়ে রয়েছে৷ তিন কামরার ফ্ল্যাটের বাইরের ঘরে পড়ে রয়েছে নিহত জঙ্গি আফিফ কাদরীর লাশ৷ সেই ঘরেই চোখে পড়েছে পাঁচটি গ্রেনেডের৷ যার মধ্যে একটি কাদরীর লাশের পাশে৷ কোনওটি ড্রেসিং টেবিলের ওপর৷ কয়েকটি খাটের ধারে৷ এর মধ্যে দুটি গ্রেনেড খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে৷ দুটিরই পিন খোলা৷
EiSamay.Com death trap in the surya villa of dhaka
মৃত্যুফাঁদ ঢাকার ‘সূর্য ভিলা’,তদন্তে পুলিশ


জানলা দিয়ে উঁকি মারলে দেখা যাচ্ছে যে ঘরে কাদরীরর লাশ রয়েছে, সেখানে দরজার পাশেই পড়ে রয়েছে একটি সুইসাইডাল ভেস্ট৷ আরেকটি সুইসাইডাল ভেস্ট পাওয়া গিয়েছে পাশের ঘরে৷ রান্নাঘরের তাকের ওপরেও গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছে৷ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিজি ছানোয়ার হোসেন বলেন,‘খুবই সতর্কতার সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে৷ কোন গ্রেনেড ঠিক কী অবস্থায় আছে তা এখনও আন্দাজ করা যাচ্ছে না৷’

উত্তরা ফায়ার স্টেশনের অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন,‘শনিবারের অভিযানে ছোড়া গ্যাস ও গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘরটি ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে৷ সেই গ্যাস বের করার কাজ আপাতত শেষ৷’সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটকে ঘটনাস্থলে রেখে দেওয়া হয়েছে৷ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের আরেক এডিজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন,‘গ্যাস বের করার কাজ শেষ হওয়ায় এবারের পুলিশের কাজ শুরু হবে৷ প্রথমে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল গ্রেনেডগুলিকে অকেজো করবে৷ এরপর ফ্ল্যাটে ঢুকে তদন্তের প্রাথমিক কাজ শুরু করবে সিআইডি ও কাউন্টার টেররিজমের ক্রাইম ইউনিট৷ তারপর মৃত জঙ্গির লাশ বের করে আনা হবে৷’জোয়ারদারের কথাতেই পরিষ্কার অযথা ঝুঁকি নিয়ে হুড়োহুড়ি করতে চায় না পুলিশ৷

নির্দিষ্ট সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে দক্ষিণ ঢাকার আশকোনার ‘সূর্য ভিলা’বাড়িটিকে ঘিরে ফেলে পুলিশ৷ টানা ১৬ ঘণ্টার অভিযান শেষে শনিবার বাড়িটিকে জঙ্গিমুক্ত করা যায়৷ পুলিশের ডাকে সাড়া দিয়ে দুই শিশু-সহ দুই মহিলা জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে৷ ‘অপারেশন রিপল ২৪’নামে ওই অভিযানে দুই জঙ্গি নিহত হয়৷ একজন পুলিশের গুলিতে মারা পড়ে৷ অপরজন আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিজেকে উড়িয়ে দেয়৷ আত্মঘাতী ওই মহিলা জঙ্গির সঙ্গে একটি শিশুও ছিল৷ গুরুতর আহত অবস্থায় ওই শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিজি ছানোয়ার হোসেনের কথায়,‘প্রথমে দুটি শিশু নিয়ে দুই মহিলা বেরিয়ে এলেন৷ এরপর সাড়ে বারোটার কিছু আগে আমাদের বেধে দেওয়া সময়ের ঠিক আগে আরেক মহিলাও বেরিয়ে এলেন৷ সঙ্গে একটি শিশু৷ আমি মনে মনে খুশি হলাম৷ ভাবলাম কোনও রক্তারক্তি না-ঘটিয়েই সকলে আত্মসমর্পণ করল৷ কিন্ত্ত দেখলাম ওই মহিলা কেমন রোবটের মতো হাঁটছেন৷ বারবার থামতে বলা সত্ত্বেও কোনও কথা শুনছিলেন না৷ দেখলাম মহিলার পেটের কাছটা ফোলা৷ আমি খারাপ কিছু আঁচ করে পিছনে ছুটলাম৷ দু সেকেন্ডর মধ্যেই বিস্ফোরণ৷ দেখলাম রক্তাক্ত মুখে হাঁটছেন ইন্সপেক্টর শফি৷ তখনই ওই মহিলার সঙ্গে থাকা শিশুটির কথা মনে পড়ল৷ দ্রুত গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালাম৷’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চিকিত্‍সক জেসমিন আক্তার জানান,‘খাদ্যনালীতে ১২-১৩ টি ফুটো নিয়ে হাসাপাতলে ভর্তি হয় শিশুটি৷ তার অস্ত্রোপচারে পাঁচ ঘণ্টার ওপর সময় লাগে৷ খাদ্যনালীর বেশ কয়েকটি জায়গা কেটেও ফেলতে হয়েছে৷ শিশুটির পেটেও স্প্লিন্টারের আঘাতে পাঁচটি ফুটো হয়ে গিয়েছিল৷’হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটির শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ৷ জ্ঞান ফিরে এলেও কথা বলার মতো সুস্থ নয়৷ তবে অস্ত্রোপচারের আগে অক্সিজেন মাস্ক খোলার সময় সে তার নাম বলে সাবিনা৷ বাবা ইকবাল আর মা শাকিরা৷ সাবিনার পরিবারের সঙ্গে জঙ্গি যোগের খোঁজ চালাতে শুরু করে দিয়েছে পুলিশ৷

খোঁজ চলছে মহম্মদ ইমতিয়াজেরও৷ ‘সূর্য ভিলা’র একতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি৷ ফ্ল্যাটের মালকিন জোনাকি রাসেল ওই পাড়াতেই থাকেন৷ শ্যামবর্ণ, দীর্ঘদেহী ইমতিয়াজের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ সেপ্টেম্বরে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন তিনি৷ জোনাকি রাসেলকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে ফ্ল্যাটে থাকতেন মোট চারজন৷ ইমতিয়াজ ও তাঁর স্ত্রী৷ একটি সদ্যোজাত শিশু ও আরেক মহিলা৷ পাড়ায় কারও সঙ্গেই মেলামেশা করতেন না তাঁরা৷ বাড়ির বাইরেও খুব একটা বেরোতেন না৷ ভাড়া আনতে প্রতিমাসে একবার করে ‘সূর্য ভিলা’র ওই ফ্ল্যাটে যেতেন জোনাকি রাসেল৷ তখনই অল্পসল্প কথা হত ইমতিয়াজের সঙ্গে৷ বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে, তাই হিজড়ের ভয়ে তাঁর বেরোন না বলে রাসেলকে বলেছিলেন ইমতিয়াজ৷

তদন্তে নেমে পুলিশ দেখেছে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে ইমতিয়াজের থেকে প্রয়োজনীয় পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি নিয়েছিলেন রাসেল৷ সে গুলি স্থানীয় থানায় জমাও দেন৷ সচিত্র সেই পরিচয়পত্রগুলি সব ভুয়ো ছিল বলে মনে করছে পুলিশ৷ পুলিশের সন্দেহ ফ্ল্যাটটিকে নিহত জঙ্গিদের স্ত্রী-সন্তানদের আশ্রয় দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হত৷ বাড়িওয়ালি রাসেলের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ বুঝেছে নিহত দুই জঙ্গি বা আত্মসমর্পণকারী দুই জঙ্গিকে কখনওই ওই ফ্ল্যাটে দেখেননি তিনি৷ তবে এরা কবে ফ্ল্যাটে ঢুকল সেই নিয়ে ধন্দে রয়েছে পুলিশ৷ গোটা পরিবার নিয়ে বেপাত্তা ইমতিয়াজও৷ - সংবাদসংস্থা

পরের খবর

Worldসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল