অ্যাপশহর

কামরায় এসি বন্ধ, খাবার জলও নেই

শনিবার রাত সওয়া ১১টা নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশন থেকে পদাতিক এক্সপ্রেস যখন ছাড়ছিল, বি-৪ কামরার তরুণ যাত্রী তন্ময় ভট্টাচার্যের দু’হাত ঠেকানো ছিল কপালে৷

Ei Samay 14 Aug 2017, 10:58 am
চিত্রদীপ চক্রবর্তী ■ চাতরা (বীরভূম)
EiSamay.Com train services disrupted due to heavy rains in west bengal
কামরায় এসি বন্ধ, খাবার জলও নেই

শনিবার রাত সওয়া ১১টা নাগাদ শিয়ালদহ স্টেশন থেকে পদাতিক এক্সপ্রেস যখন ছাড়ছিল, বি-৪ কামরার তরুণ যাত্রী তন্ময় ভট্টাচার্যের দু’হাত ঠেকানো ছিল কপালে৷ স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে ডুয়ার্সে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর৷ রবিবার সকাল সওয়া ১১টায় দেখা গেল , সেই তন্ময় খালি গায়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন ট্রেনের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে৷ কারণ , ততক্ষণে চাতরা স্টেশনে দাঁড়ানো ট্রেনের এসি মেশিনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ ভিতরে দমবন্ধ করা অবস্থা৷ সহযাত্রী হিসাবে আমিও গিয়েছিলাম কোচ অ্যাটেন্ড্যান্টের কাছে৷ কিন্ত্ত তাঁর সেই এক রা-রেলের নিয়মেই নাকি বলা আছে , দাঁড়ানো ট্রেনে এসি চলবে না! আধ ঘণ্টা পরের ছবিটা কী ?

বীরভূমের ওই অজপাড়াগাঁয়ের স্টেশনে চড়া রোদ মাথায় নেমে দাঁড়িয়েছেন ট্রেনের প্রায় সব যাত্রীই৷ প্রত্যেকেরই একই অভিযোগ , বাথরুমের জল ফুরিয়েছে , আশপাশে কোত্থাও খাওয়ার জল নেই৷ একটা চায়ের দোকান পর্যন্ত নেই যে সেখান থেকে জল পাওয়া যাবে৷ আমার ঠিক পাশের কামরা বি -৩ -তে চার বছরের সংযোগ বিস্কুট খেতে চেয়ে বায়না জুড়েছে মায়ের কাছে৷ কিন্ত্ত দেবেটা কে ? দোকানপাটের তো কোনও নামগন্ধই নেই এ তল্লাটে !বন্যার দাপটে কিষানগঞ্জ স্টেশন জলে ডুবে যাওয়ায় শনিবার রাত আড়াইটে নাগাদ উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় মালদহ স্টেশনে৷ দারি্‌র্জলিং মেলকে দাঁড় করানো হয় মুড়ারই স্টেশনে , পদাতিক এক্সপ্রেস রাত তিনটেতেই দাঁড়িয়ে যায় চাতরাতে৷ দীর্ঘ পাঁচ -ছ’ ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও কোনও খবরই ঠিক ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না দেখে আমিও গেলাম স্টেশনমাস্টারের ঘরে৷ কিন্ত্ত তিনিও কোনও ঠিকঠাক জবাব দিতে পারলেন না৷ ফিরে এসে দেখলাম অবস্থা আরও খারাপ৷

পাশের কামরায় ছিলেন শিলিগুড়ির কলেজপাড়ার বাসিন্দা ধনঞ্জয় সরকার৷ কলকাতা থেকে গলব্লাডারের অপারেশন করিয়ে ফিরছেন৷ কামরার গুমোট গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ বেগতিক বুঝে ফোন ঘুরিয়ে ১১টা নাগাদ জানলাম , এই ট্রেনটিকেই আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে শিয়ালদহে৷ যে যাত্রীদের উত্তরবঙ্গে আজকেই ফেরাটা অত্যন্ত জরুরি , তাঁদের অনেককেই দেখলাম স্টেশনের বাইরে গিয়ে গাড়ির খোঁজ শুরু করেছেন৷ সুযোগ বুঝে স্থানীয় চালকরাও চড়া দর হাঁকলেন৷ দু’-আড়াই ঘণ্টার দূরত্বে থাকা মালদহের জন্য ভাড়া চাওয়া হল ৫ -৬ হাজার টাকা৷ আমাদের আর এক সহযাত্রী ছিলেন কলেজপডুয়া রেশমা৷ উত্তরবঙ্গে নতুন চাকরিতে যোগ দিতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর৷ কিন্ত্ত গাড়ির জন্য কাতর আর্জি জানিয়েও ফল হল না৷ অগত্যা ফোনে এক বন্ধুকে জানিয়ে দিলেন , সোমবার বিমান টিকিটের ব্যবস্থা করতে৷

সাড়ে ১২টার পর হঠাত্ দেখলাম , মালদহ স্টেশন ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস চাতরা স্টেশনে এল৷ বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত যাত্রীরা (যাঁদের মধ্যে অনেকেই বয়স্ক , মহিলা ও শিশু ) ব্যাগপত্র নিয়ে তিরবেগে ছুটছেন ওই ট্রেনের দিকে৷ কিন্ত্ত তাঁরা উঠবেন কোথায় ? উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসও তো প্রায় ভর্তি হয়েই এসেছে৷ অপেক্ষাকৃত তরুণরা তা-ও জেনারেল কামরায় উঠতে পারলেন , বয়স্করা তা-ও পারলেন না৷ আমি কোনও ক্রমে ওই ঠাসাঠাসি জেনারেল কামরাতেই একটু জায়গা করে নিলাম৷ নানা জায়গায় থামতে থামতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর শিয়ালদহে এসে পৌঁছল ট্রেনটা৷ গত ২৪ বছর ধরে ট্রেনে শিলিগুড়ি যাচ্ছি৷ এ রকম পরিস্থিতির মুখে পড়িনি কখনও৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল