অ্যাপশহর

কলেজে ঘুঘুরবাসা ভাঙতে কড়া দাওয়াই

শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি মুখ্যমন্ত্রীকে বারবার বিড়ম্বনায় ফেলেছে৷ অনেক সময়ে তাঁর নিজের দলের ছাত্র সংগঠনই জড়িয়ে পড়েছে অশান্তিতে৷

EiSamay.Com 7 Jun 2017, 9:38 am
এই সময়: শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি মুখ্যমন্ত্রীকে বারবার বিড়ম্বনায় ফেলেছে৷ অনেক সময়ে তাঁর নিজের দলের ছাত্র সংগঠনই জড়িয়ে পড়েছে অশান্তিতে৷ এ-সব যে তাঁর সরকারের ভাবমূর্তির পক্ষে মোটেই সুখকর নয় তা বিলক্ষণ টের পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাই অশান্তিতে লাগাম টানতে তিনি নয়া বিধি চালু করতে চলেছেন৷ এতে আর্থিক ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিকার ছাত্র সংসদের হাতে থাকবে না৷ ছাত্র সংসদের মাথায় বসিয়ে দেওয়া হবে একজন কলেজ শিক্ষককে৷
EiSamay.Com the state government has completely changed the rules for the constitution of the college students and universities
কলেজে ঘুঘুরবাসা ভাঙতে কড়া দাওয়াই


এতে ঘুঘুর বাসা ভেঙে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে নিঃসন্দেহে৷ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠনের বিধিতে আমূল বদল আনছে রাজ্য সরকার৷ দি ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজেস (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও রেগুলেশন) আইন , ২০১৭ মেনে এটা করা হবে৷ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেন, ‘নয়া বিধি মোতাবেক চলতি বছরেই ছাত্র ভোট হবে৷ দু-চারদিনের মধ্যেই এই বিজ্ঞন্তি জারি করা হবে৷’ ছাত্র ভোট নিয়ে খসড়া বিধিতে ঠিক কী আছে? উচ্চশিক্ষা দপ্তরের এক কর্তা জানান , ক্লাসে ন্যূনতম ৬০% উপস্থিতি না -থাকলে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ভোটে কেউ প্রার্থী হতে পারবে না৷ ছাত্র সংসদের নেতৃত্বে থাকবেন একজন অধ্যাপক৷ যে কোনও আর্থিক দায়ভার তাঁর উপরই ন্যস্ত থাকবে৷ শাস্তিপ্রাপ্ত ও অভিযুক্ত কোনও পড়ুয়া ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না৷ দু’বারের বেশি কেউ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন না৷ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণরা ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন না৷

দলমত নির্বিশেষে শিক্ষামহলের বড় অংশ মনে করছে , এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি এড়াতে এবং সমস্যার মূলে আঘাত করতে চাইছেন মমতা৷ বাম জমানার শেষের দিক থেকেই রাজ্যে ক্ষমতা বদলের ইঙ্গিতে কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভোট ঘিরে অশান্তি ও গোলমাল বারংবার সংবাদ শিরোনামে এসেছে৷ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গোড়ায় কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরোধীদের সঙ্গে শাসক দলের গোলমাল বাধলেও পরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়েই জেরবার হতে হয়েছে তৃণমূলকে৷ শিক্ষক , অধ্যক্ষের গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনাও ঘটে৷ সেই কারণেই নয়া বিধি৷ পরিস্থিতির বদল আনতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং উদ্যোগী হয়েছিলেন৷ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভোট ঘিরে গণ্ডগোল ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি৷ সেই মোতাবেক চলতি বছরে বিধানসভায় বিল এনে রাজ্য সরকার ছাত্র ভোট সংক্রান্ত যাবতীয় নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা উচ্চশিক্ষা দন্তরের হাতে তুলে দেয়৷ সেই আইন মেনেই বিকাশ ভবন ছাত্র ভোটের নয়া বিধি চালু করতে চলেছে৷ তবে সংগঠনহীন ছাত্র ভোটের পথে এখনই হাঁটছে না রাজ্য৷ অর্থাত্, আগের মতোই ছাত্র ভোটে পড়ুয়াদের নাম , রোল নম্বর এবং ক্লাসের উল্লেখ করে ভোটে নামতে হবে৷

অবশ্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের মতে , অনেক নিয়মই আগে ছিল৷ কিন্ত্ত সেভাবে মানা হত না৷ এ বার ছাত্র সংসদের আর্থিক ক্ষমতা অধ্যাপকের হাতে তুলে দিয়ে খেয়োখেয়ি বন্ধ করতে চাইছে সরকার৷ কলেজ অধ্যক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের দাবি , কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের আর্থিক দায়ভার অধ্যাপকের হাতে তুলে দেওয়ায় বিশৃঙ্খলা কমবে৷ বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের নামেই অর্থ বরাদ্দ কার হয়৷ একই ভাবে মহানগরের একাধিক কলেজে ছাত্র সংসদের নামে পৃথক অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানেই কর্তৃপক্ষ টাকা দিয়ে থাকেন৷ বাকি বিধানগুলির ক্ষেত্রেও ওয়াকিবহাল মহল বলছে , এখন যা সরকারি কলেজগুলির জন্য প্রযোজ্য , অদূর ভবিষ্যতে তা সব কলেজে কার্যকর হলে সামগ্রিক ভাবেই শিক্ষাঙ্গনে অশান্তিতে লাগাম টানা অনেকটাই সম্ভব হবে৷ রাজ্যের প্রাক্তন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী অবশ্য ছাত্র ভোট নিয়ে সরকারি বিজ্ঞন্তি নিয়ে কোনও বিতর্ক চাননি৷ তবে তাঁর দাবি , এই বিধিতে অনেক শর্তই রাখা হয়েছে , যেগুলি সাবেকি৷ স্নাতকে ডিসকলেজিয়েট অর্থাত্, কোনও পড়ুয়ার ৬০ শতাংশের কম উপস্থিতি হলে সে পরীক্ষায় বসতে পারে না৷ তাই মাথা না থাকলে মাথা ব্যথা হবে কী করে?

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল