সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি ও অমিত চক্রবর্তী, কলকাতা
জীবনে এমন অভিজ্ঞতা হবে, কখনও ভাবেননি কলকাতার তারাতলার বিকাশ দাস। লাভায় বেড়াতে এসেছিলেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা ছিল। তাই মঙ্গলবার বিকেলেও বৃষ্টি না-থামায় আর অপেক্ষা করেননি। স্ত্রীকে নিয়ে হোম-স্টে থেকে বেরিয়ে আসেন। ভেবেছিলেন, রাতেই শিলিগুড়িতে নেমে যাবেন। কিন্তু নেওড়াভ্যালি বনাঞ্চলের আশেপাশেই রাস্তায় আটকে যায় তাঁদের গাড়ি। জানা যায়, কালিম্পং-লাভা সড়কে ধস নেমেছে। বিকাশের মতো শতাধিক পর্যটক ধসের জন্যে আটকে পড়েন। প্রথমে মোবাইলে প্রশাসন ও পরে পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধারের আশ্বাস মেলে বটে। কিন্তু টানা বৃষ্টির সঙ্গে ধসের জেরে রাতভর এলাকায় পৌঁছতেই পারেননি কেউ। এ দিকে সঙ্গের জল, খাবারও শেষ হতে বসে। এই অবস্থায় পরিত্রাতা হয়ে ওঠেন স্থানীয় গ্রামের মানুষজনই।
রাতভর বৃষ্টি। তার সঙ্গে জোঁকের উপদ্রব। সামান্য শব্দ হলেই সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন, এই বুঝি ফের ধস নামল। এমন পরিস্থিতিতেও সকাল-সকাল যে ভাবে গ্রামের লোকেরা ফ্লাস্কে করে গরম চা এবং খাবার এনে তাঁদের সামনে তুলে ধরেন, তাতে বিপর্যয়ের সময়েও মানবিকতার স্পর্শে চোখে জল এসে যায় আটকে পড়া পর্যটকদের। কিছু পরে ট্রাক বোঝাই খাবার নিয়ে হাজির হন কালিম্পং জেলা প্রশাসনের কর্তারাও। ততক্ষণে গ্রামের লোকেরাই অবশ্য গাছ কেটে লাভা যাওয়ার রাস্তাও করে দিয়েছেন। শিলিগুড়ি নামতে অবশ্য দুপুর গড়িয়ে যায়।
কেননা, লাভা থেকে গরুবাথান নামার পথে একাধিক জায়গায় ধস। তবে নিরলস ভাবে রাস্তা ঠিক করার কাজ করে চলেছেন কর্মীরা। শিলিগুড়ি নামার সময়ে বিকাশ বলেন, 'নতুন জীবন পেলাম মনে হচ্ছে। কী ভাবে রাত কেটেছে, সেটা ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল। ধন্যবাদ দেব গ্রামের মানুষদের।' ওই এলাকার গ্রামের মানুষজনকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন সিউড়ির স্মৃতিকণা ভদ্রও। পরিবারের সঙ্গে তিনিও আলগাড়া এলাকায় বেড়াতে এসেছিলেন। মঙ্গলবার বিকেলে ধসে আটকে পড়েন। স্মৃতিকণা বলেন, 'যে ভাবে পাহাড়জুড়ে ধস নেমেছে, তাতে গ্রামের লোকেদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই ভাবা উচিত ছিল। কিন্তু আমাদের পাশে ওঁরা যে ভাবে দাঁড়ালেন, তার জন্যে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।'
পরিস্থিতি গুরুতর বুঝে মাঝরাত থেকে ট্যুর অপারেটরের সংগঠনগুলিও প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে। বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগাযোগ করে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে শুকনো খাবার, পানীয় জল পাহাড়ে পাঠানোর ব্যবস্থা শুরু হয়। এরই মধ্যে কিছু অসাধু চালক পাহাড় থেকে পর্যটকদের নামার জন্যে লাগামছাড়া ভাড়া হাঁকায় সঠিক ভাড়ায় গাড়ির ব্যবস্থা করতেও সংগঠনগুলি যোগাযোগের নম্বর দিয়ে তথ্য পাঠাতে থাকে মোবাইলে। এ সবের মধ্যেই বালাসন ব্রিজে ত্রুটি ধরা পড়ায় সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে নতুন করে দুর্ভোগ শুরু হয়।
ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রেকার্স অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি অনিরুদ্ধ বসু বলেন, 'কালীঝোরা থেকে শুরু করে পাহাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা শুকনো খাবার আর জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন। করোনার পরে এ বার পুজো থেকে ব্যবসা সবে শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফের ধাক্কা দিয়ে গেল।'
কালিম্পং জেলা প্রশাসন এবং পর্যটন ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার কালিম্পং-লাভা সড়কে ধসের কারণে প্রায় আড়াইশো পর্যটক আটকে পড়েছিলেন। প্রায় বারো ঘণ্টা তাঁদের রাস্তায় কাটাতে হয়। বুধবার সন্ধ্যার পর প্রশাসন জানায়, বৃষ্টি কিছুটা ধরে আসায় এবং এক টানা কাজ করে কালিম্পংয়ের লাভা রোড আলগাড়া থেকে চলাচলের যোগ্য করা গিয়েছে।
১০ নম্বর জাতীয় সড়কে সেথিঝোরা এলাকা ছাড়া বাকি রাস্তাও চলাচলের যোগ্য হয়েছে। তবে রংপো ব্রিজে গাড়ি চলাচল নিয়ে এখনও পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছেন ইঞ্জিনিয়াররা। এরই মধ্যে ঋষিখোলায় একটি হোম-স্টে পুরো ভেসে যাওয়ার খবরে আতঙ্ক ছড়ায়। কিন্তু ওই বিপর্যয়ের আগেই পর্যটকরা সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
তবে ধসের জন্য সিকিমে এখনও আটকে রয়েছেন বহু পর্যটক। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, বহু এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। ফলে মোবাইলেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্রাভেল ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, 'কালিম্পংয়ে আটকে পড়া আড়াইশো পর্যটককে আজ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিকিমের পর্যটকদের ফেরার ব্যাপারেও নজর দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা করে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমও সাহায্য করছে।'
জীবনে এমন অভিজ্ঞতা হবে, কখনও ভাবেননি কলকাতার তারাতলার বিকাশ দাস। লাভায় বেড়াতে এসেছিলেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা ছিল। তাই মঙ্গলবার বিকেলেও বৃষ্টি না-থামায় আর অপেক্ষা করেননি। স্ত্রীকে নিয়ে হোম-স্টে থেকে বেরিয়ে আসেন। ভেবেছিলেন, রাতেই শিলিগুড়িতে নেমে যাবেন। কিন্তু নেওড়াভ্যালি বনাঞ্চলের আশেপাশেই রাস্তায় আটকে যায় তাঁদের গাড়ি। জানা যায়, কালিম্পং-লাভা সড়কে ধস নেমেছে। বিকাশের মতো শতাধিক পর্যটক ধসের জন্যে আটকে পড়েন।
রাতভর বৃষ্টি। তার সঙ্গে জোঁকের উপদ্রব। সামান্য শব্দ হলেই সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন, এই বুঝি ফের ধস নামল। এমন পরিস্থিতিতেও সকাল-সকাল যে ভাবে গ্রামের লোকেরা ফ্লাস্কে করে গরম চা এবং খাবার এনে তাঁদের সামনে তুলে ধরেন, তাতে বিপর্যয়ের সময়েও মানবিকতার স্পর্শে চোখে জল এসে যায় আটকে পড়া পর্যটকদের। কিছু পরে ট্রাক বোঝাই খাবার নিয়ে হাজির হন কালিম্পং জেলা প্রশাসনের কর্তারাও। ততক্ষণে গ্রামের লোকেরাই অবশ্য গাছ কেটে লাভা যাওয়ার রাস্তাও করে দিয়েছেন। শিলিগুড়ি নামতে অবশ্য দুপুর গড়িয়ে যায়।
কেননা, লাভা থেকে গরুবাথান নামার পথে একাধিক জায়গায় ধস। তবে নিরলস ভাবে রাস্তা ঠিক করার কাজ করে চলেছেন কর্মীরা। শিলিগুড়ি নামার সময়ে বিকাশ বলেন, 'নতুন জীবন পেলাম মনে হচ্ছে। কী ভাবে রাত কেটেছে, সেটা ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল। ধন্যবাদ দেব গ্রামের মানুষদের।' ওই এলাকার গ্রামের মানুষজনকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন সিউড়ির স্মৃতিকণা ভদ্রও। পরিবারের সঙ্গে তিনিও আলগাড়া এলাকায় বেড়াতে এসেছিলেন। মঙ্গলবার বিকেলে ধসে আটকে পড়েন। স্মৃতিকণা বলেন, 'যে ভাবে পাহাড়জুড়ে ধস নেমেছে, তাতে গ্রামের লোকেদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই ভাবা উচিত ছিল। কিন্তু আমাদের পাশে ওঁরা যে ভাবে দাঁড়ালেন, তার জন্যে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।'
পরিস্থিতি গুরুতর বুঝে মাঝরাত থেকে ট্যুর অপারেটরের সংগঠনগুলিও প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে। বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগাযোগ করে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে শুকনো খাবার, পানীয় জল পাহাড়ে পাঠানোর ব্যবস্থা শুরু হয়। এরই মধ্যে কিছু অসাধু চালক পাহাড় থেকে পর্যটকদের নামার জন্যে লাগামছাড়া ভাড়া হাঁকায় সঠিক ভাড়ায় গাড়ির ব্যবস্থা করতেও সংগঠনগুলি যোগাযোগের নম্বর দিয়ে তথ্য পাঠাতে থাকে মোবাইলে। এ সবের মধ্যেই বালাসন ব্রিজে ত্রুটি ধরা পড়ায় সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে নতুন করে দুর্ভোগ শুরু হয়।
ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রেকার্স অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি অনিরুদ্ধ বসু বলেন, 'কালীঝোরা থেকে শুরু করে পাহাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা শুকনো খাবার আর জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছেন। করোনার পরে এ বার পুজো থেকে ব্যবসা সবে শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফের ধাক্কা দিয়ে গেল।'
কালিম্পং জেলা প্রশাসন এবং পর্যটন ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার কালিম্পং-লাভা সড়কে ধসের কারণে প্রায় আড়াইশো পর্যটক আটকে পড়েছিলেন। প্রায় বারো ঘণ্টা তাঁদের রাস্তায় কাটাতে হয়। বুধবার সন্ধ্যার পর প্রশাসন জানায়, বৃষ্টি কিছুটা ধরে আসায় এবং এক টানা কাজ করে কালিম্পংয়ের লাভা রোড আলগাড়া থেকে চলাচলের যোগ্য করা গিয়েছে।
১০ নম্বর জাতীয় সড়কে সেথিঝোরা এলাকা ছাড়া বাকি রাস্তাও চলাচলের যোগ্য হয়েছে। তবে রংপো ব্রিজে গাড়ি চলাচল নিয়ে এখনও পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছেন ইঞ্জিনিয়াররা। এরই মধ্যে ঋষিখোলায় একটি হোম-স্টে পুরো ভেসে যাওয়ার খবরে আতঙ্ক ছড়ায়। কিন্তু ওই বিপর্যয়ের আগেই পর্যটকরা সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে।
তবে ধসের জন্য সিকিমে এখনও আটকে রয়েছেন বহু পর্যটক। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, বহু এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। ফলে মোবাইলেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্রাভেল ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, 'কালিম্পংয়ে আটকে পড়া আড়াইশো পর্যটককে আজ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিকিমের পর্যটকদের ফেরার ব্যাপারেও নজর দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা করে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমও সাহায্য করছে।'