অ্যাপশহর

লাগামহীন গুজবের বাড়বাড়ন্ত রুখতে কড়া হচ্ছে পুলিশ

গত বেশ কয়েকদিন ধরে এমন বিভিন্ন গুজবে জেরবার কলকাতা -সহ গোটা রাজ্য

EiSamay.Com 24 Jan 2017, 9:23 am
এই সময় : কোথাও চোর৷ কোথাও বোরখা পরা ডাকাত৷ কোথাও শিশুচোর৷ আবার কোথাও বা বোরখা পরে বাড়ি বাড়ি ঢুকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ৷ গত বেশ কয়েকদিন ধরে এমন বিভিন্ন গুজবে জেরবার কলকাতা -সহ গোটা রাজ্য৷ গুজবের জেরে বেশ কয়েকজনকে গণপিটুনি দিয়েছে জনতা৷ হতাহতও হয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ কোথাও কোথাও এমন গুজবে সাম্প্রদায়িক রংও লেগে গিয়েছে৷ একের পর এক এমন গুজবের জেরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনকে কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছিল৷ এ বার যারা গুজব ছড়াচ্ছে , তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিল রাজ্য প্রশাসন৷ সোমবার সরকারি ছুটির দিনে নজিরবিহীন ভাবে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করে সে বার্তা দিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিত্ করপুরকায়স্থ , কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার এবং এডিজি (আইনশৃঙ্খলা ) অনুজ শর্মা
EiSamay.Com police will take strick action to stop against on uncontrold rumers spreed in all over state
লাগামহীন গুজবের বাড়বাড়ন্ত রুখতে কড়া হচ্ছে পুলিশ


সাম্প্রতিক অতীতে আইনশৃঙ্খলাজনিত অনেক বড় ঘটনা ঘটেছে কলকাতা বা রাজ্য পুলিশ এলাকায়৷ কিন্ত্ত রাজ্য পুলিশের ডিজি ও কলকাতার সিপি যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করছেন , এমন দৃশ্য অধরাই ছিল৷ নবান্ন সূত্রের খবর , একের পর এক গুজব ছড়ানোর পিছনে ‘অন্য গন্ধ ’ পাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র দন্তরের কর্তাদের কাছে তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন৷ তার পরই যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করে কড়া হুঁশিয়ারির বার্তা এল পুলিশের তরফে৷

অবশ্য শুধু সাংবাদিক বৈঠক নয় , গুজব -সন্ত্রাস ও গণপিটুনির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ৷ ডিজি জানান , রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের নাম করে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনায় ২৫ জনকে গ্রেন্তার করা হয়েছে৷ যারা এসব করছে , তাদের উপর রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ নজর রাখছে৷ তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি মুখে মুখেও এ -রকম বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে , যার কোনও ভিত্তি নেই৷ ডিজি -সিপিকে প্রশ্ন করা হয় , এর পিছনে কি কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে ? ডিজি -র জবাব , কারা , কী উদ্দেশ্যে এসব করছে , তা দেখা হচ্ছে৷

নবান্ন যে বিষয়টিকে মোটেই হাল্কা ভাবে দেখছে না তার প্রমাণ , সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর জন্য রবিবারই উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থেকে সজল দাস নামে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রকে পুলিশ গ্রেন্তার করেছে৷ গণপিটুনির ঘটনাতেও মারধরের পাশাপাশি খুনের চেষ্টার মতো গুরুতর ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ৷ তবে প্রশাসনের কঠোর মনোভাবের পরেও গুজবের কমতি নেই৷ এ দিনই পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের শিমুলিয়া এলাকার মোলগ্রামে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িকে ঘিরে গুজব ছড়ায়৷ সেখানে একটি মাদ্রাসা তৈরি হচ্ছে এবং খাগড়াগড়ের মতো সেখানেও মাদ্রাসার আড়ালে জঙ্গি ঘাঁটির কাজকর্ম হবে , এমন গুজবের জেরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান শিমুলিয়া , মোলগ্রাম , মমরাজপুর , মারিচ্যা , ধরমপুর -সহ সাতটি গ্রামের বাসিন্দা৷

পরে পুলিশ গিয়ে বুঝিয়ে -সুজিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে আনে৷ ঘাটালের মহকুমাশাসক পুলিশকে গ্রামবাসীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন৷ এ দিনই গুরুতর জখম অবস্থায় এক ভবঘুরেকে উদ্ধার করে জগদ্দল থানার পুলিশ৷ জগদ্দলের রামনগর এলাকার একটি বাড়ির শৌচালয়ের সামনে ওই ভবঘুরেকে উদ্ধার করে ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়৷ পরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়৷ পুলিশ জানিয়েছে , ওই ব্যক্তির নাম -ঠিকানা পাওয়া যায়নি৷ তাঁর মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল৷ স্থানীয় সূত্রের খবর , এ দিন ভোরে রামনগর এলাকায় ওই ব্যক্তি পড়েছিলেন৷ স্থানীয়রা চোর সন্দেহে চিত্কার -চেঁচামেচি করতে থাকে৷ পরে জগদ্দল থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়৷ চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলেই প্রাথমিক অনুমান পুলিশের৷ গত কয়েকদিনে উত্তর শহরতলির জগদ্দল , ভাটপাড়া , ব্যারাকপুর , নৈহাটি -সহ বিভিন্ন এলাকায় বারবার এমন গুজব ছড়িয়েছে৷

শনিবার রাতে ব্যারাকপুর পলতা এলাকার শক্তিনগরে এক অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে চোর সন্দেহে মারধর করা হয়৷ মৃত্যু হয় ওই অজ্ঞাতপরিচয় বৃদ্ধের৷ জেলার বাগদা , গাইঘাটা এলাকাতেও একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে৷ নদিয়ার শান্তিপুর , রানাঘাট , হবিবপুর , হুগলির বলাগড় , বর্ধমানের কালনার মতো বিস্তীর্ণ জায়গায় বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়েছে৷ বছর কয়েক আগে কলকাতাতেও শিশুচোর সন্দেহে গুজবের জেরে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা ঘটছিল৷ তবে সেক্ষেত্রে কলকাতার ইস্টার্ন সুবার্বন ও সাউথ ইস্টার্ন, এই দুই ডিভিশনের তিলজলা , তপসিয়া , বেনিয়াপুকুর , কড়েয়া থানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল৷ এ বার গুজবের বিস্তৃতি ব্যাপক৷ এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই গুজব একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে ইঙ্গিত করে ছড়ানো হচ্ছে৷ গত ২১ জানুয়ারি বর্ধমানের কালনায় গাছে কীটনাশক স্প্রে করতে গিয়ে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে মারা যান নদিয়ার রানাঘাট থানার হবিবপুর সংলগ্ন রাঘবপুর গ্রামের অনিল বিশ্বাস৷

এর প্রতিবাদে আবার হবিবপুরে কালনা রুটের একটি বেসরকারি বাস আটকে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা৷ হুগলির বলাগড়ে নদিয়ার কল্যাণীর ‘বি ’ ব্লকের বাসিন্দা শিক্ষিকা অপর্ণা ঘোষ ও তাঁর বৃদ্ধা মাকে ছেলেধরা সন্দেহে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়৷ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় গাড়িতে৷ এর আগে কল্যাণীর সগুণা গ্রামের বাজারে সোলেমান নামে এক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখে ডাকাত সন্দেহে পেটানো হয়৷ নদিয়ার বিরহী আয়েশপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কলাবাগানে দু’টি বাইকে পাঁচ অপরিচিত যুবককে ডাকাত সন্দেহে তাড়া করে দু’জনকে গ্রামবাসীরা ধরে ফেলেন৷ ওইদিনই আয়েশপুর থেকে কিছুটা দূরে তিন যুবককে দেখা গেলে , তাদের পালিয়ে আসা তিনজন বলে ধরে নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়৷ নদিয়ারই কোতয়ালি থানার নতুনগ্রামে একটি অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে ফেরার সময় ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয় পাঁচ জনকে৷ প্রশাসনের কর্তারা মনে করছেন , একটি মহল থেকে গুজব ছড়িয়ে আসলে প্রশাসনকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখা হচ্ছে , যাতে তার আড়ালে অন্য কোনও গোপন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা যায়৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল