অ্যাপশহর

‘রবিনহুড ’কে হারিয়ে শোক তেলুগু পাড়ায়

অনেকের কাছে মাফিয়া ডন হিসেবে পরিচিত শ্রীনুই যে ছিলেন তাঁদের রক্ষাকর্তা

EiSamay.Com 13 Jan 2017, 11:13 am
চিত্রদীপ চক্রবর্তী ও সমীর মণ্ডল ■ খড্গ়পুর
EiSamay.Com people feel sorrow after srinus murder at telegu para
‘রবিনহুড ’কে হারিয়ে শোক তেলুগু পাড়ায়


খড়গপুরের বিখ্যাত বোম্বাই সিনেমা হলে তখন রমরম করে চলছিল পূজা নাইডু ফিল্ম প্রোডাকশনের ছবি ‘সাথিয়া৷ ’ সেই ছবিতে সাত মিনিটের ভিলেনের রোল ছিল শ্রীনিবাসন নাইডুর৷ স্থানীয় বাসিন্দারা হই হই করে সেই সিনেমা দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছিল সেখানে৷ কিন্ত্ত প্রথম কয়েক দিনের পর তা আর পছন্দ হয়নি শহরের এক পানওয়ালা থেকে ডন বনে যাওয়া বছর পঁচিশের যুবকের৷ মূলত তাঁরই নির্দেশে হল থেকে সরে যায় সেই সিনেমা৷ আসলে তিনি তখন রবিনহুড ইমেজ তৈরিতে ব্যস্ত , কাজেই এই সিনেমা লোকে বেশি দেখলে তাঁর জনপ্রিয়তা টাল খাবে , তাই শ্রীনুর এই নির্দেশ !এহেন ‘রবিনহুড ’-এর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে খড়গপুরের তেলুগু সম্প্রদায়ের মধ্যে৷ নিউ সেটলমেন্ট এলাকায় অধিকাংশ বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি এ দিন৷

অনেকের কাছে মাফিয়া ডন হিসেবে পরিচিত শ্রীনুই যে ছিলেন তাঁদের রক্ষাকর্তা৷ দুশ্চিন্তা -ভয় -ভীতি নয় , এলাকার মানুষ নিশ্চিন্তে থাকত তাঁর জন্য !বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নিউ সেটলমেন্ট এলাকায় কাউন্সিলার অফিসের সামনে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো৷ এই তৃণমূল কার্যালয়ের পিছনেই রেল কোয়ার্টারে স্ত্রী পূজা নাইডু ও ছেলে তরুণকে নিয়ে থাকতেন খড়গপুরের ডন৷ শ্রীনুর অফিসের কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আঁচলে চোখের জল মুছছিলেন লক্ষ্মীকুমারী৷ বলছিলেন , ‘আমাদের ভগবান মারা গেল৷ ’ অবসরপ্রান্ত রেলকর্মী ডি ডি রাওয়ের কথায় , ‘শ্রীনু মারা যাওয়ার পর এলাকার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল৷ ’ শশীকুমারী , সিএইচ আপ্পা রাও , আপ্পান্নারা একযোগে বলছিলেন , কারও সঙ্গে কোনও দিন খারাপ ব্যবহার করেননি শ্রীনু৷ সবার বিপদে পাশে পাওয়া যেত তাঁকে৷ দরাজ হাতে সাহায্য করতেন সবাইকে৷ আর সম্মানও করতেন সবাইকে৷

কেমন ছিল এহেন রবিনহুডের জীবনযাত্রা ? খড়গপুরে শ্রীনুর সঙ্গে ঘুরত ৫৬ জন যুবকের একটি গ্যাং৷ কিন্ত্ত কেন ? স্ত্রী তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকে ঘনিষ্ঠ মহলে শ্রীনু দাবি করেন , একজন ৫৬ ইঞ্চির ছাতি দেখাতে পারেন আর আমি ৫৬টা লোক সঙ্গে দেখাতে পারব না ? রেল শহরে রামবাবু নামে এক ডনের যখন সুসময় , ঠিক তখন বাবার পানের দোকানে বসতে হত শ্রীনুকে৷ বাবা মারা গেলে রেলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর চাকরিটা পাকা হয় তার৷ কিন্ত্ত কিছুদিনের মধ্যেই শহরের একটি বড় শপিং মলের ডাকাতির ঘটনায় জড়িয়ে যায় বছর আঠেরোর ছেলেটির নাম৷ জেলার অভিজ্ঞ পুলিশকর্তাদের বক্তব্য , সেই শুরু৷ তার পর থেকে রেলের চাকরির পাশাপাশি খুন -ডাকাতি -তোলাবাজি থেকে কোন অপরাধে জড়ায়নি শ্রীনুর নাম !খড্গ়পুরের মাফিয়া ডন রামবাবুকে পছন্দ না -করলেও , রামবাবুর অপারেশনের স্টাইল কার্বন কপি করে নিয়েছিলেন শ্রীনু৷ ‘বড় দান মারো , ছোট জায়গায় বিলিয়ে ইমেজ তৈরি করো ’--- এই থিয়োরিতে খেলা শুরু করে সফলও হন শ্রীনু৷

ফ্ল্যাট কেনেন কলকাতায়৷ বোনকে পাঠিয়ে দেন সৌদি আরবের চাকরিতে৷ বোম্বে রোডের ধারে যে বড় বড় কারখানা গড়ে উঠেছে , সেখানে নিজের লোকেদের ঢোকানোর কাজও শুরু করেন৷ এ ভাবেই গড়ে ওঠে তাঁর ‘গ্যাং অফ ৫৬ ’৷ ফলে তিনবার আক্রমণের শিকার হওয়া সত্ত্বেও কোনও দেহরক্ষী রাখতেন না শ্রীনু৷ কিন্ত্ত সঙ্গী হিসেবে সঙ্গে রাখতেন এমবিএ পাশ যুবককেও৷ ভগবানে বিশ্বাসী শ্রীনু রোজ প্রার্থনা করার জন্য রেল আবাসনের পেছন দিকে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করে একটি প্রাসাদোপম শীতলামন্দিরও তৈরি করেছিলেন৷ ঠিক তার পিছনে কাজ শুরু হয়েছিল শিশুদের জন্য একটি পার্কেরও৷ গৌতম চৌবে এবং মানস চৌবে খুনের ঘটনার পর একাই রেল -শহরের ডন হয়ে ওঠেন৷ বছর দুয়েক আগে প্রথমে বিজেপির দিকে ঝুঁকলেও , পরে স্ত্রীর জন্য শাসকদলের সংস্পর্শে আসেন শ্রীনু৷ বদল ঘটে রাজনৈতিক ভাবনায়৷ শুধু একটা ব্যাপারে বদল ঘটেনি৷ শ্রীনু নাইডুর রবিনহুড ইমেজে !

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল