অ্যাপশহর

লটারিতে কোটি জিতেও পেশা ভুলছেন না চা-শ্রমিক

মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বদলে গিয়েছে গোটা দুনিয়াটা। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারটা যে আচমকাই কল্পতরু উৎসবে মেতে উঠেছে। সকালে কাতারে কাতারে মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম এক চালা শ্রমিক আবাসের এক চিলতে উঠোন।

EiSamay.Com 16 Jan 2020, 11:51 am
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বদলে গিয়েছে গোটা দুনিয়াটা। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারটা যে আচমকাই কল্পতরু উৎসবে মেতে উঠেছে। সকালে কাতারে কাতারে মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম এক চালা শ্রমিক আবাসের এক চিলতে উঠোন। মাত্র ছয় টাকার বিনিময়ে নিজের ভাগ্য যাচাই করতে লটারির টিকিট কেটেছিলেন কালচিনির সাঁতালি চা-বাগানের থমাস শ্রমিক লাইনের বাসিন্দা পাইকাস বাক্সলা। মঙ্গলবার বিকেলে পুরোনো হাসিমারার বাজার থেকে কিনেছিলেন ওই লটারির টিকিট। রাত আটটার পরই ঘুরে যায় ওই সাধারণ চা-শ্রমিকের ভাগ্যের চাকা। টিকিট মিলিয়ে জানতে পারেন, কপালে জুটেছে এক কোটি টাকার ঝাঁপি।
EiSamay.Com Tea garden worker wins Rs 1 crore lottery
পাইকাস বাক্সলা।


এই সময়, আলিপুরদুয়ার: মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বদলে গিয়েছে গোটা দুনিয়াটা। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারটা যে আচমকাই কল্পতরু উৎসবে মেতে উঠেছে। সকালে কাতারে কাতারে মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম এক চালা শ্রমিক আবাসের এক চিলতে উঠোন। মাত্র ছয় টাকার বিনিময়ে নিজের ভাগ্য যাচাই করতে লটারির টিকিট কেটেছিলেন কালচিনির সাঁতালি চা-বাগানের থমাস শ্রমিক লাইনের বাসিন্দা পাইকাস বাক্সলা। মঙ্গলবার বিকেলে পুরোনো হাসিমারার বাজার থেকে কিনেছিলেন ওই লটারির টিকিট। রাত আটটার পরই ঘুরে যায় ওই সাধারণ চা-শ্রমিকের ভাগ্যের চাকা। টিকিট মিলিয়ে জানতে পারেন, কপালে জুটেছে এক কোটি টাকার ঝাঁপি।

কয়েক ঘণ্টা আগেও তাঁকে জীবনযুদ্ধের প্রতিটা পলে লড়াই করার কথা ভাবতে হত। তাই প্রাথমিক অবস্থায় নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না পাইকাস। ঘোর কাটতে গড়িয়ে যায় কয়েক ঘণ্টা। দিনান্তে মাত্র ১৭০ টাকা রোজগারের মানুষটা কেমন যেন বিহ্বল হয়ে পড়েন। আচমকাই সব কিছু বদলে যাওয়াতে কয়েক ঘণ্টার জন্য চুপ মেরে যান ওই চা-শ্রমিক। বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে চুপিসারে ফিরে আসেন নিজের ঘরে। মঙ্গলবার তখন রাত ১০টা। নিজের জীবনের চাকা ঘুরে যাওয়ার রূপকথা খুলে বলেন সহধর্মিণী সরোজিনী বাক্সলাকে। দুরুদুরু বুকে রাত জাগেন আদিবাসী দম্পতি। মনে একটাই ভয়, পাছে গুপ্তধনের খোঁজ পেয়ে রাতের অন্ধকারে চড়াও হয় ডাকাত দল। অবশেষে শীতের লম্বা রাত চোখ খুলে কাটিয়ে কয়েক জন নিকটাত্মীয়কে নিয়ে সটান হাজির হন জয়গাঁ থানার হাসিমারা পুলিশ ফাঁড়িতে। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে দরবার করেন পুলিশের কাছে। ঘটনা জানা মাত্রই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন পুলিশ কর্তারা।

জয়গাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুন্তল বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘লটারি সংস্থার দেওয়া চেকের মাধ্যমে ওই চা-শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যাতে টাকা জমা হয়ে যায়, সে বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করবে পুলিশ। নিরাপত্তাও দেওয়া হবে।’

এক কোটি টাকার লটারিকে ঈশ্বরের দান বলেই মনে করছেন ধর্মপ্রাণ পাইকাস বাক্সলা। তাই টাকা মেলা মাত্রই বাগানের ভগ্নপ্রায় চার্চটিকে ঝা-চকচকে করে তুলতে চান। কিছু টাকা সন্তান ও পরিবারের ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিয়ে বাকি টাকা খরচ করতে চান উত্তরবঙ্গের ধু্ঁকতে থাকা চা-বাগানের শ্রমিকদের সহায়তায়। পাইকাস বলেন, ‘আমি এখনও বিশ্বাস করি ঈশ্বরের অশেষ কৃপাতেই ওই বিপুল টাকা মিলেছে। যা আমার স্বপ্নেও ছিল না কোনও দিন। তাই তাঁর আবাসের জন্যই বেশির ভাগটা খরচ করতে চাই। নিজেকে সাধারণ চা-শ্রমিক হিসেবে পরিচয় দিতে আমার কোনও লজ্জা নেই। বাপ-দাদার পেশাতেই থাকতে চাই আমৃত্যু। বন্ধ চা-বাগানের শ্রমিকদের অসহায় দশা দেখে মন কেঁদে ওঠে। জানি আমার এই ক’টা টাকায় তেমন কিছুই হয়তো হবে না। অভাবের পাহাড়ের কাছে এ একেবারেই তুচ্ছ। তবুও চেষ্টা করে যাবে প্রাণপণে।’

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল