মানস রায়, মালদহ
পোস্তের বেআইনি চাষ পুরোপুরি বন্ধ মালদহে। শুনে চমকে উঠতে পারেন। কিন্তু তথ্যটা ১০০ শতাংশ সত্যি। জেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশের দেওয়া তথ্য নয়। নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোই (এনসিবি) এই স্বীকৃতি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, গোটা দেশে পোস্তের বেআইনি আবাদ বন্ধে মালদহকেই রোল মডেল হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে। গত মাসে দিল্লিতে এনসিবি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই সাফল্যের নেপথ্য কাহিনী শোনাতে মালদহের প্রতিনিধিরা আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু জাদুকাঠিটা কী, যার ছোয়ায় মালদহের কালিয়াচকের মতো অপরাধের স্বর্গরাজ্য বলে চিহ্নিত এলাকায় পোস্তের চাষ পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হল। এনসিবি এই সাফল্যের কৃতিত্ব প্রশাসন, পুলিশ বা আবগারি দপ্তরকে দিতে রাজি নয়।
মালদহের জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘পঞ্চায়েত সদস্যদের উপর দায়িত্ব চাপিয়ে পোস্তের চাষ আটকানো সম্ভব হয়েছে।’
কিন্তু প্রশাসন তো বছরের পর বছর ধরে সেজন্য গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছে।তাতে তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এনসিবি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোথাও পোস্ত চাষ ধরা পড়লে সেই জমির মালিক বা চাষি তো বটেই, সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে প্রশাসন ঘোষণা করতেই কাজ হয়। ২-৪ জন পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেপ্তার করার পরেই সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্য গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। রাজনৈতিক ক্ষমতা খাটিয়ে, কখনও বা লাঠির জোরে তাঁরা নিজের এলাকায় পোস্ত চাষ বন্ধ করান। তাতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হয়। প্রশাসন এখন স্বীকার করছে, যে কারণেই হোক, জনপ্রতিনিধিদের ‘সদিচ্ছা’ থাকলে যে কোন অন্যায়ই ঠেকানো সম্ভব। দু’বছর ধরে সেই প্রক্রিয়া চালানোর পর এখন এনসিবি ড্রোন উড়িয়েও মালদহের কোথাও পোস্ত চাষের হদিশ পায়নি। ঠিক কত জমিতে মালদহে পোস্ত চাষ হত, তার সঠিক পরিসংখ্যান প্রশাসনের কাছে নেই বটে। কিন্তু বিভিন্ন দপ্তরের রিপোর্টে তা আন্দাজ করা সহজ।যেমন আবগারি দপ্তরের ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরের রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১২ হাজার বিঘা জমিতে পোস্ত চাষ উচ্ছেদ করা হয়েছিল মালদহে।
নাম না-প্রকাশের শর্তে ওই দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘নষ্ট করা জমির পরিমাণই যদি ১২ হাজার বিঘা হয়, তাহলে চাষ হয়েছিল অন্তত তার ৪ গুণ বেশি জমিতে। তার মানে সিংহ ভাগ জমির আবাদই নষ্ট করা যায়নি।’ এই তথ্য যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ সেই বছর কৃষি দপ্তরের রিপোর্ট, যাতে জানানো হয়েছিল যে কালিয়াচকের তিনটি ব্লকে রবি ফসলের চাষ স্বাভাবিকের সিকি ভাগও হয়নি। কিন্তু পোস্ত চাষের সেই মানচিত্রটাই বদলে গিয়েছে গত ২ বছরে। আগে যেখানে পোস্ত চাষ হত, এখন সেখানে ভুট্টা বা অন্য কোন অর্থকরী ফসলের চাষ হচ্ছে।’ জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা বুঝেছিলাম, শুধু পোস্ত চাষ আটকে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য আসবে না। শুধু চোর-পুলিশ খেলা চলবে। তাই আমরা বিকল্প চাষে সচেতন করেছিলাম, প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম। তাতেই সাফল্য মিলেছে।’তিনি জানান, খুশির খবর যে এজন্য মালদহ সারা দেশে মডেল হয়ে গিয়েছে। গত মাসে মালদহে আবগারি দপ্তরের ডাকা একটি বৈঠকে প্রশাসন, পুলিশ, ভূমি দপ্তর, বিএসএফের উপস্থিতিতে নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর আধিকারিক কৌশিক কুণ্ডু ওই কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘মালদহ অসাধারণ উদাহরণ হয়ে উঠেছে। দু’ বছরে মালদহে পোস্ত চাষের আবাদ জিরো ফিগার হয়ে গিয়েছে।’ মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘এই সাফল্য নিয়ে আর কোন প্রশ্ন উঠতে পারে না।
কেননা এই রিপোর্ট আমাদের বা রাজ্য সরকারের তৈরি করা নয়। খোদ এনসিবির রিপোর্ট’ পোস্ত নিরীহ ও জনপ্রিয় খাদ্যদ্রব্য হলেও এর চাষ আমাদের দেশে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত। সরকারি নিয়ন্ত্রণে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে মূলত এর চাষ হয় মরফিন তৈরির জন্য। যা ব্যাথার ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। এই পোস্তের সঙ্গে সাধারণ ভোজ্য পোস্তের পার্থক্য আছে। ভোজ্য পোস্তেরও চাষ হয় উত্তরপ্রদেশে।কিন্তু যে কারণে পোস্ত চাষে এক সতর্কতা, তা হল এর আঠা থেকে আফিম, হেরোইনের মতো মারাত্মক মাদক তৈরির ক্ষমতা। এমনকি, পোস্ত ফলের খোসা ও শুকনো ডাল থেকেও মাদক তৈরি করা যায়। সে কারণে পোস্তর চাষ ও ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন হয়। সেই টানেই মালদহ জেলার কিছুটা প্রত্যন্ত এলাকা কালিয়াচকের ৩টি ব্লক পোস্ত চাষের ঘাঁটি হয়ে উঠেছিল। ক্রমশ সেই চাষ ছড়াচ্ছিল ইংরেজবাজার, গাজোল, হবিবপুরেও।
পোস্তের বেআইনি চাষ পুরোপুরি বন্ধ মালদহে। শুনে চমকে উঠতে পারেন। কিন্তু তথ্যটা ১০০ শতাংশ সত্যি। জেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশের দেওয়া তথ্য নয়। নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোই (এনসিবি) এই স্বীকৃতি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, গোটা দেশে পোস্তের বেআইনি আবাদ বন্ধে মালদহকেই রোল মডেল হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে। গত মাসে দিল্লিতে এনসিবি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই সাফল্যের নেপথ্য কাহিনী শোনাতে মালদহের প্রতিনিধিরা আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু জাদুকাঠিটা কী, যার ছোয়ায় মালদহের কালিয়াচকের মতো অপরাধের স্বর্গরাজ্য বলে চিহ্নিত এলাকায় পোস্তের চাষ পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হল। এনসিবি এই সাফল্যের কৃতিত্ব প্রশাসন, পুলিশ বা আবগারি দপ্তরকে দিতে রাজি নয়।
মালদহের জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘পঞ্চায়েত সদস্যদের উপর দায়িত্ব চাপিয়ে পোস্তের চাষ আটকানো সম্ভব হয়েছে।’
কিন্তু প্রশাসন তো বছরের পর বছর ধরে সেজন্য গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছে।তাতে তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এনসিবি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোথাও পোস্ত চাষ ধরা পড়লে সেই জমির মালিক বা চাষি তো বটেই, সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে প্রশাসন ঘোষণা করতেই কাজ হয়। ২-৪ জন পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেপ্তার করার পরেই সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্য গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। রাজনৈতিক ক্ষমতা খাটিয়ে, কখনও বা লাঠির জোরে তাঁরা নিজের এলাকায় পোস্ত চাষ বন্ধ করান। তাতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হয়। প্রশাসন এখন স্বীকার করছে, যে কারণেই হোক, জনপ্রতিনিধিদের ‘সদিচ্ছা’ থাকলে যে কোন অন্যায়ই ঠেকানো সম্ভব। দু’বছর ধরে সেই প্রক্রিয়া চালানোর পর এখন এনসিবি ড্রোন উড়িয়েও মালদহের কোথাও পোস্ত চাষের হদিশ পায়নি। ঠিক কত জমিতে মালদহে পোস্ত চাষ হত, তার সঠিক পরিসংখ্যান প্রশাসনের কাছে নেই বটে। কিন্তু বিভিন্ন দপ্তরের রিপোর্টে তা আন্দাজ করা সহজ।যেমন আবগারি দপ্তরের ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরের রিপোর্ট বলছে, সে বছর ১২ হাজার বিঘা জমিতে পোস্ত চাষ উচ্ছেদ করা হয়েছিল মালদহে।
নাম না-প্রকাশের শর্তে ওই দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘নষ্ট করা জমির পরিমাণই যদি ১২ হাজার বিঘা হয়, তাহলে চাষ হয়েছিল অন্তত তার ৪ গুণ বেশি জমিতে। তার মানে সিংহ ভাগ জমির আবাদই নষ্ট করা যায়নি।’ এই তথ্য যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ সেই বছর কৃষি দপ্তরের রিপোর্ট, যাতে জানানো হয়েছিল যে কালিয়াচকের তিনটি ব্লকে রবি ফসলের চাষ স্বাভাবিকের সিকি ভাগও হয়নি। কিন্তু পোস্ত চাষের সেই মানচিত্রটাই বদলে গিয়েছে গত ২ বছরে। আগে যেখানে পোস্ত চাষ হত, এখন সেখানে ভুট্টা বা অন্য কোন অর্থকরী ফসলের চাষ হচ্ছে।’ জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা বুঝেছিলাম, শুধু পোস্ত চাষ আটকে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য আসবে না। শুধু চোর-পুলিশ খেলা চলবে। তাই আমরা বিকল্প চাষে সচেতন করেছিলাম, প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম। তাতেই সাফল্য মিলেছে।’তিনি জানান, খুশির খবর যে এজন্য মালদহ সারা দেশে মডেল হয়ে গিয়েছে। গত মাসে মালদহে আবগারি দপ্তরের ডাকা একটি বৈঠকে প্রশাসন, পুলিশ, ভূমি দপ্তর, বিএসএফের উপস্থিতিতে নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর আধিকারিক কৌশিক কুণ্ডু ওই কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘মালদহ অসাধারণ উদাহরণ হয়ে উঠেছে। দু’ বছরে মালদহে পোস্ত চাষের আবাদ জিরো ফিগার হয়ে গিয়েছে।’ মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘এই সাফল্য নিয়ে আর কোন প্রশ্ন উঠতে পারে না।
কেননা এই রিপোর্ট আমাদের বা রাজ্য সরকারের তৈরি করা নয়। খোদ এনসিবির রিপোর্ট’ পোস্ত নিরীহ ও জনপ্রিয় খাদ্যদ্রব্য হলেও এর চাষ আমাদের দেশে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত। সরকারি নিয়ন্ত্রণে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে মূলত এর চাষ হয় মরফিন তৈরির জন্য। যা ব্যাথার ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। এই পোস্তের সঙ্গে সাধারণ ভোজ্য পোস্তের পার্থক্য আছে। ভোজ্য পোস্তেরও চাষ হয় উত্তরপ্রদেশে।কিন্তু যে কারণে পোস্ত চাষে এক সতর্কতা, তা হল এর আঠা থেকে আফিম, হেরোইনের মতো মারাত্মক মাদক তৈরির ক্ষমতা। এমনকি, পোস্ত ফলের খোসা ও শুকনো ডাল থেকেও মাদক তৈরি করা যায়। সে কারণে পোস্তর চাষ ও ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন হয়। সেই টানেই মালদহ জেলার কিছুটা প্রত্যন্ত এলাকা কালিয়াচকের ৩টি ব্লক পোস্ত চাষের ঘাঁটি হয়ে উঠেছিল। ক্রমশ সেই চাষ ছড়াচ্ছিল ইংরেজবাজার, গাজোল, হবিবপুরেও।