দয়াময় পাল আউশগ্রাম থেকে ভেদিয়ার দিকে কালো পিচ রাস্তাটা সোজা চলে গিয়েছে জঙ্গলের বুক চিরে। দুপাশে শাল-পলাশের জঙ্গল। রাস্তার ডানদিকে উত্তর রামনগর। যার এক দিকে হিন্দু অন্য দিকে মুসলমান। রামনগরের গায়ে লেগে থাকা গ্রামের নাম দ্বারিয়াপুর। মাঝে কয়েক ঘর বেদে মাল। অভাব যাঁদের সর্বাঙ্গে।
বেদে শব্দটা আর ব্যবহার হয় না। সাপ-খেলা পূর্বপুরুষের আমলেই শেষ। এখন শুধু মাল। তবে পূর্বপুরুষ থেকে এঁটোকাঁটা খাওয়া জীবনটা আজও রয়ে গিয়েছে। হিন্দুর বাড়িতে গিয়ে যেমন পুজোর ভোগ, তেমনই কুরবানি ঈদে পাওয়া মাংস এনে বাড়িতে রান্না। শুধু পুজো-পরব নয়, যে কোনও ভোজবাড়িতে খাবারের আশায় যান তাঁরা। অতিথিরা খাওয়ার পর তাঁরা পাবেন উচ্ছিষ্ট। ধর্মের আঁচ ছুঁতে পারে না ছোট ছোট মাটির ঘর। বেশির ভাগ খড়ের ছাউনি। বর্ষায় খড় পচে চালা ফুটো। শরতের রোদ ঢোকে। দু-একটা ঘরের মাথায় অবশ্য অ্যাসবেসটস।
হ্যাঁ, খাবার বলতে এঁটোকাঁটাই। খিদের কাছে হার মানে ধর্মের গোঁড়ামি। গায়েগতরে খেটে যেটুকু আয়, তা দিয়ে কোনও রকমে পেট চলে। কিন্তু ভালো খাওয়ার আশা কার না থাকে। সেই আশাতেই ভোজবাড়ি দেখলে আজও থালা হাতে ছেলে-বউ নিয়ে হাজির হন মালেরা। বিনা নিমন্ত্রণেই। সেটা হিন্দু হোক বা মুসলমান। অতিথিদের খাওয়া শেষ হলে অবশিষ্ট নিয়ে ঘরে ফেরেন। আর অবশিষ্ট না থাকলে খালি হাতেই ফেরেন। তবে নিরাশ হতে হয় না মুসলমানদের পরবে বা হিন্দুদের পুজোয়। কুরবানিতে দানের মাংস তাঁরা পান। আর দুর্গাপুজোয় এলাকার চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে পাতপেড়ে ভোগ। ধর্মের বেড়া তাঁদের স্পর্শ করে না। তাই নাজির মাল মেয়ের নাম রাখেন আশা।
গ্রামের বৃদ্ধ নুরজাহান। কিন্তু এ তো মেয়েদের নাম। এমন কথা শুনে নুরজাহান বললেন, ‘নামে কী যায় আসে বাবু। নাম তো ডেকে সাড়া পাওয়ার জন্য। তা হলে নুরজাহান আর শাহজাহানে ফারাক কোথায়?’ শুধু নাম নয়, বিয়ে বা মৃত্যু ঘিরে আচার-অনুষ্ঠানেও মৌলিক মালেরা। বিয়ের সময় মৌলবি এসে বিয়ে পড়ান। তারপরে নববধূকে সিঁদুর দান থেকে শাঁখা-পলা পরানো। আবার মৃত্যুর পর দেহে মাটি দেওয়া হয়। মালেদের কথায়, মুসলমান নাকি বৈষ্ণব ধর্মমত জানি না। দেহ পোড়ানোর থেকে দেহে মাটি দিলে দূষণ হয় না--- তা পূর্বপুরুষের আমল থেকে শুনছি। সেটা আজও চালু আছে।
কিছুদিন আগে মহরমে সামিল। এখন দুর্গাপুজো। দল বেঁধে ঠাকুর দেখতে যান মালেরা। দু’হাত ভরে প্রসাদ নিয়ে খান। আর নবমীর দিন পাত পেড়ে খাওয়া। নাজির মালের কথায়, ‘সবার তো ভালো খেতে ইচ্ছে। আমাদের কোনও কালেই সামর্থ্য ছিল না। তা হলে ধর্ম দেখে লাভ কী? আমরা সব পুজোতে, পরবে যাই। খাবারের কেন ধর্ম হবে সেটাই বুঝি না।’
এ বার পুজোয় অবশ্য মাল পাড়ার বাসিন্দারা একটু বেশিই খুশি। জমিদারদের বংশধর তথা প্রাক্তন শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায় এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে নতুন পোশাক পেয়েছেন মালেরা। মালেদের মধ্যে একমাত্র লাভলিই এবার মাধ্যমিক পাশ করেছে। তার কথায়, ‘নতুন পোশাক পরে ঠাকুর দেখতে যাব। খুব আনন্দ।’ সামান্য পোশাক আর নবমীর খাওয়াতেই খুশি গোটা মালপাড়া।
বেদে শব্দটা আর ব্যবহার হয় না। সাপ-খেলা পূর্বপুরুষের আমলেই শেষ। এখন শুধু মাল। তবে পূর্বপুরুষ থেকে এঁটোকাঁটা খাওয়া জীবনটা আজও রয়ে গিয়েছে। হিন্দুর বাড়িতে গিয়ে যেমন পুজোর ভোগ, তেমনই কুরবানি ঈদে পাওয়া মাংস এনে বাড়িতে রান্না। শুধু পুজো-পরব নয়, যে কোনও ভোজবাড়িতে খাবারের আশায় যান তাঁরা। অতিথিরা খাওয়ার পর তাঁরা পাবেন উচ্ছিষ্ট। ধর্মের আঁচ ছুঁতে পারে না ছোট ছোট মাটির ঘর। বেশির ভাগ খড়ের ছাউনি। বর্ষায় খড় পচে চালা ফুটো। শরতের রোদ ঢোকে। দু-একটা ঘরের মাথায় অবশ্য অ্যাসবেসটস।
হ্যাঁ, খাবার বলতে এঁটোকাঁটাই। খিদের কাছে হার মানে ধর্মের গোঁড়ামি। গায়েগতরে খেটে যেটুকু আয়, তা দিয়ে কোনও রকমে পেট চলে। কিন্তু ভালো খাওয়ার আশা কার না থাকে। সেই আশাতেই ভোজবাড়ি দেখলে আজও থালা হাতে ছেলে-বউ নিয়ে হাজির হন মালেরা। বিনা নিমন্ত্রণেই। সেটা হিন্দু হোক বা মুসলমান। অতিথিদের খাওয়া শেষ হলে অবশিষ্ট নিয়ে ঘরে ফেরেন। আর অবশিষ্ট না থাকলে খালি হাতেই ফেরেন। তবে নিরাশ হতে হয় না মুসলমানদের পরবে বা হিন্দুদের পুজোয়। কুরবানিতে দানের মাংস তাঁরা পান। আর দুর্গাপুজোয় এলাকার চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে পাতপেড়ে ভোগ। ধর্মের বেড়া তাঁদের স্পর্শ করে না। তাই নাজির মাল মেয়ের নাম রাখেন আশা।
গ্রামের বৃদ্ধ নুরজাহান। কিন্তু এ তো মেয়েদের নাম। এমন কথা শুনে নুরজাহান বললেন, ‘নামে কী যায় আসে বাবু। নাম তো ডেকে সাড়া পাওয়ার জন্য। তা হলে নুরজাহান আর শাহজাহানে ফারাক কোথায়?’ শুধু নাম নয়, বিয়ে বা মৃত্যু ঘিরে আচার-অনুষ্ঠানেও মৌলিক মালেরা। বিয়ের সময় মৌলবি এসে বিয়ে পড়ান। তারপরে নববধূকে সিঁদুর দান থেকে শাঁখা-পলা পরানো। আবার মৃত্যুর পর দেহে মাটি দেওয়া হয়। মালেদের কথায়, মুসলমান নাকি বৈষ্ণব ধর্মমত জানি না। দেহ পোড়ানোর থেকে দেহে মাটি দিলে দূষণ হয় না--- তা পূর্বপুরুষের আমল থেকে শুনছি। সেটা আজও চালু আছে।
কিছুদিন আগে মহরমে সামিল। এখন দুর্গাপুজো। দল বেঁধে ঠাকুর দেখতে যান মালেরা। দু’হাত ভরে প্রসাদ নিয়ে খান। আর নবমীর দিন পাত পেড়ে খাওয়া। নাজির মালের কথায়, ‘সবার তো ভালো খেতে ইচ্ছে। আমাদের কোনও কালেই সামর্থ্য ছিল না। তা হলে ধর্ম দেখে লাভ কী? আমরা সব পুজোতে, পরবে যাই। খাবারের কেন ধর্ম হবে সেটাই বুঝি না।’
এ বার পুজোয় অবশ্য মাল পাড়ার বাসিন্দারা একটু বেশিই খুশি। জমিদারদের বংশধর তথা প্রাক্তন শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায় এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে নতুন পোশাক পেয়েছেন মালেরা। মালেদের মধ্যে একমাত্র লাভলিই এবার মাধ্যমিক পাশ করেছে। তার কথায়, ‘নতুন পোশাক পরে ঠাকুর দেখতে যাব। খুব আনন্দ।’ সামান্য পোশাক আর নবমীর খাওয়াতেই খুশি গোটা মালপাড়া।