অ্যাপশহর

করোনা গুজব: সামাজিক বয়কটের মুখে ১২৭ পরিবার

মেদিনীপুর মির্জাবাজারের বাসিন্দা হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, ‘আমার ভাই দুধের ব্যবসা করে। আমি স্পন্দনে কাজ করি বলে ভাইয়ের কাছ থেকে কেউ দুধ নিতে চাইছে না। পরিবারের লোকজনকে আলাদা করে দিয়েছে এলাকার লোকজন। কলে জল নেওয়া, বাজার যাওয়া সব কিছুতেই আলাদা করা হয়েছে আমাদের।’

EiSamay.Com 14 Apr 2020, 1:50 pm
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: অসুস্থতা নিয়ে একজন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন শহরের বেসরকারি হাসপাতালে। কয়েকদিন পর বাড়ির লোকেরা তাঁকে নিয়ে চলে যান ওডিশাতে। সেখানে ধরা পড়ে করোনা পজিটিভ। আর এর জেরেই কার্যত সামাজিক বয়কটের মুখে পড়তে হয়েছে মেদিনীপুরের বেসরকারি হাসপাতাল স্পন্দনের চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী-সহ আরও ১২৭ জনের পরিবারকে। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনই অভিযোগ করেন স্পন্দন হাসপাতালের ডিরেক্টর পার্থ মণ্ডল।
EiSamay.Com 127 families of west midnapore habe being forcefully isolated due to corona rumours
করোনা গুজব: সামাজিক বয়কটের মুখে ১২৭ পরিবার


হাসপাতালের ডিরেক্টর পার্থ মণ্ডল বলেন, ‘গত ২ মার্চ দাঁতনের সাউরি গ্রাম থেকে একজন রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন আমাদের হাসপাতালে। ৭ তারিখ পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে ছিলেন। রোগীর বাড়ির লোকেরা ৭ তারিখ ভুবনেশ্বরে নিয়ে যান। সমস্ত নিয়ম মেনেই তাঁকে ভর্তি নিয়েছিলাম। তখন কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি। ৯ তারিখ আমরা জানতে পারি ওই রোগী করোনা আক্রান্ত। কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্পন্দনের রোগী করোনা আক্রান্ত বলে প্রচার হয়ে যায়। আমরা পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশ মতো ওই রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া সমস্ত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের হোম কোয়ারান্টিনে থাকতে বলি। এরপরেই সমস্যা শুরু হয়। হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজের নিজের বাড়িতে গেলে তাঁদের প্রতিবেশী ও এলাকার লোকজন ঝামেলা করতে থাকে। এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। কর্মীরা নিজেদের বাড়ির মধ্যে ১৪ দিন থাকতে চাইলেও বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের পরিবারকে সামাজিক ভাবে বয়কট করা শুরু হয়।’

স্পন্দনে কাজ করার জন্য অনেকেই এলাকার চাপে বাড়ি ছেড়ে হাসপাতালে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
সূর্যনগরের বাসিন্দা এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি ভাড়ায় থাকি। অথচ গুজবের জন্য এলাকার লোকজন বাড়িতে থাকতে দিচ্ছেন না।’ গত কয়েকদিন ধরে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় স্পন্দন হাসপাতালের কর্মীদের ঘিরে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মীরা বলেন,‘আমরা যেহেতু ১৪ দিন বেরোচ্ছি না তাই পুলিশের কাছেও অভিযোগ করা হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবার কাছে আবেদন করেছেন সবাই যাতে সুষ্ঠু ভাবে বসবাস করতে পারে। তাঁদের সামাজিক বয়কটের শিকার না হতে হয়। তবুও কাজের কাজ কিছু হয়নি। নিজেদের এলাকায় হেনস্থা পর্যন্ত হচ্ছি আমরা।’

হাসপাতালের ডিরেক্টর এ দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালের ১৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, সবার রিপোর্ট নেগেটিভ।’ জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘এই অভিযোগ সত্যি হলে বিষয়টি খুবই অমানবিক। আমরা খতিয়ে দেখছি।’ ঘটনা প্রসঙ্গে জেলার পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এবং তা সত্যি হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পরের খবর