অ্যাপশহর

পলাশ সার্কিটে রাঙা হাসি পশ্চিমাঞ্চলে

রবি ঠাকুরের সুর বুকে সেই রাঙা হাসির টানেই পর্যটক ছুটে যাক বাংলার পশ্চিমাঞ্চলে৷ ফাল্গুন-চৈত্রের দখিনা হাওয়া গায়ে মেখে পলাশের দেশে তারা মেতে উঠুক প্রকৃতির প্রেমে৷

EiSamay.Com 19 Feb 2017, 10:36 am
​ পরিকল্পনায় পর্যটন দপ্তর, হচ্ছে রোপওয়ে, প্যাকেজের মাধ্যমে পর্যটক টানার ভাবনা
EiSamay.Com now ajodhya hill is a new destination for tourist
পলাশ সার্কিটে রাঙা হাসি পশ্চিমাঞ্চলে


প্রসেনজিত্ বেরা

রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে...

রবি ঠাকুরের সুর বুকে সেই রাঙা হাসির টানেই পর্যটক ছুটে যাক বাংলার পশ্চিমাঞ্চলে৷ ফাল্গুন-চৈত্রের দখিনা হাওয়া গায়ে মেখে পলাশের দেশে তারা মেতে উঠুক প্রকৃতির প্রেমে৷ এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির নির্দিষ্ট পর্যটন কেন্দ্র ধরে পলাশ-সার্কিট তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার৷

এই সময়ে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় পলাশের রঙে লালে লাল হয়ে যায়৷ পলাশের সেই সৌন্দর্য যাতে পর্যটক টেনে নিয়ে যায় তার জন্যই এই সার্কিট তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে পর্যটন দফতর৷ শীতকালে তুষারপাতের আশায় বাঙালি পর্যটক ভিড় করে দার্জিলিংয়ে৷ সূর্যোদয় দেখতে জনতা হাজির হয় টাইগার হিলে৷ সমুদ্রের জলোচ্ছাস দেখতে জনতা দৌড়ে যায় দিঘা-শঙ্করপুর-তাজপুর৷ শাল-পিয়ালের জঙ্গলের টানে বহু মানুষ যায় ঝাড়গ্রাম৷ সেই ঢঙেই পলাশের সৌন্দর্য পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে জনতাকে টেনে নিয়ে যাক, চাইছে রাজ্যের পর্যটন দপ্তর৷ তাই পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব পলাশ-সার্কিট তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছেন৷ প্রাথমিক ভাবে পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা, জয়চন্ডী ও গড়পঞ্চকোটকে মূল অভিমুখ করেছে পর্যটন দফতর৷ পরবর্তী সময়ে বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের বিভিন্ন কেন্দ্রকে এই সার্কিটের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা হবে৷ নাম অবশ্য পলাশ-সার্কিট হবে কিনা তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি৷ তবে আগামী ফাল্গুন-চৈত্রে এই পলাশ-সার্কিট প্যাকেজ আকারে পর্যটন দপ্তর তৈরি করে ফেলবে বলে নিশ্চিত গৌতম দেব৷ তাঁর কথায়, ‘পর্যটনে আমরা বৈচিত্র আনতে চাইছি৷ তাই রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন উপাদানকে পরিকল্পিত ভাবে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে তুলে ধরতে চাইছি৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের পর্যটনে বৈচিত্র আনার নির্দেশ দিয়েছেন৷ সেই নির্দেশ অনুসরণ করেই দোল উত্সবের মরসুমে আমরা পলাশ সার্কিট প্যাকেজ তৈরি করতে চাইছি৷’

রাজ্যের পশ্চাদপদ জেলা পুরুলিয়ার বিস্তীর্ণ পাহাড় ও প্রান্তর এখন পলাশের রঙে রাঙা৷ পর্যটকরা রোপওয়ে চড়ে পাহাড় জুড়ে লাল পলাশের চোখ রাঙানো সৌন্দর্য যাতে দেখতে পারে তার জন্য জয়চন্ডী পাহাড়ে তৈরি হচ্ছে রোপওয়ে৷ শুধু পলাশের মরসুমে নয়, বর্ষায় সজীব হতে থাকা পাহাড়ের শোভা এই রোপওয়ে থেকে দেখতে পাওয়া যাবে৷ গৌতমের কথায়, ‘জয়চন্ডী পাহাড়ে রোপওয়ে তৈরির কাজ চলছে৷ পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ প্রকল্পর অন্তর্গত আপার-ড্যাম ও লোয়ার-ড্যাম দুই এলাকায় পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে৷ পর্যটকরা যাতে গিয়ে পলাশের শোভা উপভোগ করতে পারে তার জন্য কটেজ, রেস্ট হাউস, ইকো-ট্যুরিজমের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে৷’ অযোধ্যা, গড়পঞ্চকোট, জয়চন্ডী সার্কিটকে নিয়ে এই পলাশ-প্যাকেজ শুরু করতে চাইলেও পরে বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর-সুসুনিয়া প্রভৃতি অঞ্চলকে এই প্যাকেজের মধ্যে নিয়ে আসতে চাইছে পর্যটন দফতর৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের কোন কোন অঞ্চলকে এই সার্কিটে অন্তর্ভক্ত করা যায় তার চিহ্নিতকরণের কাজ হচ্ছে৷ ড্যাম ঘিরে থাকা অযোধ্যা পাড়ারের বিভিন্ন এলাকাকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছে পর্যটন দপ্তর৷ এই পাহাড় ও ড্যাম সংলগ্ন গোপালপুর, মুরগুমা, রামুডি, পারাডি প্রভৃতি এলাকা ইতিমধ্যে পিকনিক স্পট হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ এই অঞ্চলে কোথাও গাছ-বাড়ি, কোনও কটেজ, কোথাও হোম-স্টে, কোথাও ফরেস্ট রেস্ট হাউস প্রভৃতির মাধ্যমে এই নতুন এই সার্কিটের সূচনা করতে চাইছে পর্যটন দপ্তর৷ এছাড়া ধীরে ধীরে মাঠা, বাঘমুন্ডি, পাখিপাহাড় প্রভৃতি অঞ্চল চলে আসবে এই সার্কিটে৷ পুরো প্যাকেজের রূপরেখা এখন তৈরির কাজে হাতে দিয়েছে পর্যটন দপ্তর৷ গৌতমের কথায়, ‘আশা করছি আগামী বছর পর্যটকরা এই প্যাকেজ পেয়ে যাবে৷ এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রচার মরসুমের অনেক আগেই শুরু হবে৷ ’

দেশে-বিদেশে এই ধরনের সার্কিট বহুল প্রচলিত এবং অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ ভারতেই উত্তরাখন্ডের গাড়ওয়াল অঞ্চলে নন্দাদেবী বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ রয়েছে৷ ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার নামে পরিচিত উত্তরাখন্ডের চামোলি জেলার এই বনাঞ্চল ২০০৫ সালে ইউনেস্কোর ওয়াল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে৷ প্রায় ৬৫০ প্রজাতির ফুল থাকলেও ব্লু-পপি এবং কোবরা লিলি’র জন্য খ্যাত এই সার্কিট৷ এই সার্কিট থেকে বছরে বিপুল পর্যটন -আয় হয় উত্তরাখন্ড সরকারের৷ দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়ার ব্লু-মাউন্টেন এই রঙিন প্রকৃতির জন্য ভুবনবিখ্যাত৷ সিডনি থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরের এই ৫৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপত্যকা ইউক্যালিপটাস অরণ্যর জন্য ব্লু-মাউন্টেন হিসেবে লক্ষ পর্যটক টেনে নিয়ে যায়৷ ইউরোপেরও এমন বহু সার্কিট রয়েছে৷ পলাশ-সার্কিটকে সেই তালিকায় নিয়ে যাওয়াই পর্যটন দপ্তরের চ্যালেঞ্জ৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল