অ্যাপশহর

ঈশ্বরের ভরসায় পঞ্চায়েতে টিকে আছে বামপন্থীরা

এখনও বিরোধীদের হাতে যে ক’টি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে , বরাদ্দের টাকার অভাবে সেগুলি ধুঁকছে।

EiSamay.Com 23 Sep 2016, 8:29 am
এই সময় : বাম আমলে কেশপুর , গড়বেতার মতো জায়গায় অভিযোগ উঠত , বিরোধী দলের সমর্থকদের পুকুরে বিষ মিশিয়ে , ধোপা নাপিত বন্ধ করে সামাজিক ভাবে এক ঘরে করে দিত সিপিএম৷ পাঁচ বছর আগে রাজ্যপাট বদল হলেও পাল্টায়নি গ্রামগঞ্জের সেই চেনা ছবিটায়৷ তৃণমূল আমলেও ঘুরপথে সেই একই কারবার চলছে৷ রাজ্যে বিরোধীদের হাতে থাকা সব ক’টি জেলা পরিষদই দখল করে নিয়েছে শাসকদল৷ প্রায় একই অবস্থা পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রেও৷ ২০১৩ পঞ্চায়েত ভোটে অধিকাংশ পঞ্চায়েত সমিতিই জিতেছিল তৃণমূল৷ কিন্ত্ত তাতে ক্ষান্ত না দিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই ছলে বলে কৌশলে বাকিগুলো দখল হয়ে চলেছে৷ বিভিন্ন জেলায় এখনও বিরোধীদের হাতে যে ক’টি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে , বরাদ্দের টাকার অভাবে সেগুলি ধুঁকছে।
EiSamay.Com no money for panchayet which is ruled by opposition party
ঈশ্বরের ভরসায় পঞ্চায়েতে টিকে আছে বামপন্থীরা


শাসকদলের হাতে থাকা পঞ্চায়েত সমিতিতে যেখানে টাকার অভাব নেই , সেখানে পাশের পঞ্চায়েত সমিতি কেবল বিরোধীদের হাতে থাকার জন্যই সব দিক থেকে বঞ্চিত৷ পাশাপাশি আছে শাসকের দলের চোখ রাঙানি , দল বদলের হুমকি৷ সে সব সহ্য করেও কেউ কেউ টিঁকে আছেন ‘স্রেফ ভগবানের ভরসায় ’৷ সিপিএম পরিচালিত একটি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তো বলেই ফেললেন , ‘দেখুন , আমরা বামপন্থীরা ভগবানে বিশ্বাস করি না ঠিকই৷ তবে যে ভাবে দখলরাজ চলছে , তাতে এখনও যে টিঁকে আছি , সেটা মাথার উপরে ভগবান আছে বলেই৷ ’ কলকাতার উপকণ্ঠে ঠাকুরপুকুর -মহেশতলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের সুষমা হাইকের আক্ষেপ , ‘আমরা সিপিএম বলে দুয়োরানি৷ এলাকার অধিকাংশ কৃষক ধানের চাষ করেন জেনেও তাঁদের সরষে ও সূর্যমুখীর বীজ দেওয়া হচ্ছে চাষের জন্য৷

ফলে মানুষ আমাদের ভুল বুঝছেন৷ ’ গত পঞ্চায়েত ভোটে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মোট ২০টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে বিরোধীরা পেয়েছিল পাঁচটি৷ ইতিমধ্যে বামেদের হাতে থাকা মথুরাপুর ২, কুলতলি এবং ডায়মন্ড হারবার ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূল দখল করেছে৷ বাকি দু’টিও দখলের ছক কষছে শাসকদল৷ কত দিন এ ভাবে চলবে , তা নিয়ে সিপিএমের অন্দরেই সংশয় রয়েছে৷ মুর্শিদাবাদ জেলার পঞ্চায়েত দপ্তরের কর্তারাও আগে কখনও এমন সমস্যায় পড়েননি৷ জেলার গ্রাম পঞ্চায়েত , পঞ্চায়েত সমিতির রেকর্ড রাখতে ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা তাদের৷ খাতার কালি না শুকোতেই এক দলের দখলে থাকা বোর্ড রাতারাতি বদলে যাচ্ছে অন্য দলে৷ ২৬টির মধ্যে ১১টি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছে তৃণমূল৷ বিরোধীদের দখলে আছে ১৫টি৷ শাসকদলের টার্গেট এখন খড়গ্রাম , বেলডাঙ্গা ২, ভরতপুর ২, সুতি-১৷ তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন অবশ্য নাম না করলেও , চারটি পঞ্চায়েত সমিতি যে তাঁদের নজরে আছে তা স্বীকার করেছেন৷ কংগ্রেসের দখলে থাকা কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত ত্রিবেদী বলেন , ‘কাজ করার পরিস্থিতি নেই৷ জানি না কতদিন বোর্ড ধরে রাখা সম্ভব হবে৷

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন , ‘আসলে এখন হাঁস -মুরগির বাচ্চা থেকে জৈব সার , মিনিকিটও আসছে সমিতিতে৷ তা বিলি বণ্টনে যে মাস্টাররোল তৈরি করা হয় , তা স্বচ্ছ রাখা সম্ভব নয়৷ যে কোনও মুহূর্তে সংশ্লিষ্ট সভাপতি বা প্রধান ফেঁসে যেতে পারেন৷ জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে কে বিবাদে যেতে চায় ?’বিরোধীদের এই অভিযোগ মানতে নারাজ শাসকদল৷ দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি , ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক রং দেখেন না৷ বিরোধীরা মনগড়া অভিযোগ করছেন৷ ’ উত্তর ২৪ পরগনায় গত পঞ্চায়েত ভোটে বামেরা পেয়েছিল হাসনাবাদ , হিঙ্গলগঞ্জ , স্বরূপনগর , বাদুড়িয়া এবং দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতি৷ ভোটের পরই হাসনাবাদে খুন হয়ে যান সিপিএমের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গির আলম৷ সিপিএমের অভিযোগ ছিল , তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই সমিতি দখল করার জন্য জাহাঙ্গিরকে খুন করেছে৷ এর পর ওই আসনে উপ নির্বাচন হয়৷ তাতেও জেতে সিপিএম৷

কিন্ত্ত এতেও শেষ রক্ষা হল না৷ কয়েক জন সিপিএম সদস্য দল বদল করায় হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূল দখল করে নেয়৷ পরবর্তীকালে একই ভাবে দখল হয়েছে হিঙ্গলগঞ্জ , স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতি৷ দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতি সিপিএমের হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে যে কোনও মুহূর্তে৷ সবে ধন নীলমণি বাদুড়িয়া এখনও সিপিএমের হাতে রয়েছে৷ তার সভাপতি সোমা আড়ত্দার বলছেন , ‘বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য গোপন করা হচ্ছে৷ গত প্রায় ছ ’মাস ধরে আমার মেলে তথ্য আপডেট করা বন্ধ রাখা হয়েছে৷ পঞ্চায়েতের অনেক বৈঠকের কথা আমি জানতেই পারি না৷ ’হুগলির ১৮টির মধ্যে তিনটি পঞ্চায়েত সমিতি পেয়েছিল সিপিএম৷ বলাগড় , চণ্ডীতলা ১ এবং পাণ্ডুয়া৷ তার মধ্যে বলাগড় দখল করে নিয়েছে তৃণমূল৷ বাকি দুই পঞ্চায়েত সমিতি সিপিএম কোনও মতে চালালেও পদে পদে দখলের ভয় তাড়া করছে৷ বীরভূমে টিম টিম করে জ্বলছে সিপিএমের হাতে থাকা নলহাটি ২ এবং মুরারই ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি৷ মহম্মদবাজারের পঞ্চায়েত সমিতি ইতিমধ্যে হাতছাড়া৷

নলহাটি ১ যাব যাব করছে৷ মুরারই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আলি রেজা মণ্ডলের অভিযোগ , পাশের মুরারই ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের বলে সেখানে এমএসডিপি প্রকল্পে ৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে৷ অথচ তাঁদের বরাতে গত দেড় বছরে একটি টাকাও জোটেনি৷ জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন , ‘শাসকদল টাকার থলি নিয়ে আসরে নেমেছে৷ ’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী এবং জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি , কোথাও বঞ্চনা হচ্ছে না৷ বিরোধীদের কাজের সদিচ্ছা নেই বলেই সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে৷ গোটা বর্ধমান জেলায় সিপিএমের হাতে রয়েছে শুধু কাটোয়া ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি৷ কাটোয়ার সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় স্বীকার করেন , ‘আমাদের সদস্যদের উপর সব সময় একটা চাপ আর ভয় কাজ করছে৷ ’

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল