অ্যাপশহর

কমলালেবুর টানে পর্যটন প্রস্ত্ততি পাহাড়ে

টানা সাড়ে তিন মাসের বন্ধ পাহাড়ে আর যারই ক্ষতি করুক, কমলালেবুর ফলনে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি৷

EiSamay.Com 19 Nov 2017, 12:42 pm
সঞ্জয় চক্রবর্তী ■ কার্শিয়াং
EiSamay.Com nice place for seeing orange orchards and beauty of nature in darjeeling
কমলালেবুর টানে পর্যটন প্রস্ত্ততি পাহাড়ে

টানা সাড়ে তিন মাসের বন্ধ পাহাড়ে আর যারই ক্ষতি করুক, কমলালেবুর ফলনে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি৷ বিশেষ করে কার্শিয়াং এ বার কমলালেবু ফলনের শীর্ষে৷

আর এই মহকুমার সিটং যেন শুধুই কমলালেবুর স্বর্গরাজ্য৷ সেই ফলে ছেয়ে গিয়েছে শিলিগুড়ির বাজার৷ বন্ধের ফলে পাহাড়ের পর্যটন এ বার ব্যাপক মার খেয়েছে৷ এখন পাহাড়ের নিজস্ব এই ফলটির উপরে ভর করে শীতে পর্যটক টানতে প্রস্ত্ততি শুরু করেছে সিটং৷ শিলিগুড়ি থেকে সিটং খুব দূরে নয়৷ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মংপু হয়ে রিয়াং নদী পার হলেই সিটং৷ চারদিক পাহাড় দিয়ে ঘেরা কার্শিয়াংয়ের এই কৃষি বলয়ে চারদিকেই কেবল কমলালেবুর গাছ৷ নভেম্বরের গোড়া থেকে গাছে গাছে ঝুলছে রঙিন কমলা৷ পাকা ফল গাছ থেকে পড়ে আছে রাস্তার ধারে৷

এমন একটি জায়গা কিন্ত্ত পর্যটকদের নজরে এসেছে মাত্র কিছুদিন আগে৷ এলাকাটি চেনা নয় বলে খুব বেশি পর্যটক যান না সচরাচর৷ গত বছর সিটংয়ে গিয়েছিলেন বড় জোর হাজার দু’য়েক পর্যটক৷ রাত্রিবাসের জন্য বড় হোটেল নেই৷ রাত্রিবাস করতে হলে ভরসা হোম স্টে৷ কিন্ত্ত এলাকাটির পরিচিতি বাড়াতে স্থানীয় সিটং ইকো ট্রাভেলার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটি এলাকার লেপচা ফলস -সহ আশপাশের জায়গাগুলিকে সাজিয়ে তুলতে শুরু করেছে৷ সংস্থার মুখ্য পরামর্শদাতা দেবাশি চক্রবর্তী জানিয়েছেন , রিয়াং নদীর ধারে তাঁবুর ভিতরে রাত কাটানোর ব্যবস্থা হচ্ছে৷ সেটা কমলালেবুর পাশাপাশি আর এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হবে৷ গাছ উপচে ফল ধরায় বেজায় খুশি কমলা চাষিরা৷ স্থানীয় মাহিন্দ্র রাই বলেন , ‘ঝড় -শিলাবৃষ্টিতে গত বছর ভালো ফলন পাইনি৷ এ বার ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন৷ ’বন্ধে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে , তা পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে চাষিরা আশা করছেন৷ স্থানীয় ট্যুর অপারেটর তিয়াস লেপচা আবার কমলালেবুর মরসুমে পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসা চাঙা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন৷ তিনি বলেন , ‘আমাদের গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলে , একবার যে পর্যটক সিটংয়ে বেড়িয়ে গিয়েছেন , তিনি পরের বছর ফের এখানে আসবেনই৷

আশা করছি , এ বার শীতের মরসুমে কমলালেবুর হাত ধরে ফের আমাদের পর্যটন ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে৷ ’ জিটিএ -র উদ্যানপালন বিভাগের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট মহাদেব রাই বলেন , ‘পাহাড়ে কমলালেবুর চাষে নানা সমস্যা থাকলেও গত বছরের তুলনায় এ বার ফলন অত্যন্ত ভালো হয়েছে৷ কমলালেবু পাহাড়ে পর্যটক টেনে আনতে পারলে সবারই লাভ হবে৷ সিটংয়ের চাষিদের উদ্যোগ সফল হবে বলে বিশ্বাস করি৷ ’এ বার ঝড় কিংবা শিলাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে না -হওয়ায় দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের সর্বত্রই প্রচুর কমলালেবু হয়েছে৷ কিন্ত্ত জৈব চাষে আস্থাশীল সিটংয়ের বাগানগুলিতে উপচে পড়ছে কমলা৷ চাষিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ বার পাহাড়ে প্রায় ৯৩০ হেক্টর জমিতে কমলালেবুর ফলন হয়েছে৷ তাতে ১৫ হাজার মেট্রিক টন ফলন হবে বলে জিটিএ কর্তা মহাদেব রাই জানিয়েছেন৷ তবে তিনি বলেন , ‘এটা আনুমানিক হিসাব৷ পাহাড়ে কমলালেবুর চাষ নিয়ে ২০০১ -এর পরে কোনও সমীক্ষা হয়নি৷ এ বার মার্চের মধ্যে সেই কাজ শেষ করা হবে৷ ’ তুলনায় মিরিকে ফলন কম হলেও পাহাড়ের কমলালেবু এ বার ডিসেম্বরে শিলিগুড়ি তো বটেই , কলকাতার বাজার ছেয়ে ফেলবে বলে বলে জিটিএ -র কর্তারা মনে করছেন৷

উদ্যানপালন বিভাগের আধিকারিক মহাদেব বলেন , ‘ইতিমধ্যেই শিলিগুড়িতে নামতে শুরু করেছে দার্জিলিংয়ের কমলা৷ সর্বত্র ফলে এখনও পাকা রঙ না -ধরায় দাম অবশ্য চড়া৷ তবে ডিসেম্বরের প্রথম সন্তাহে পরিস্থিতি বদলাবে বলে আশা করছেন শিলিগুড়ির নিয়ন্ত্রিত বাজারের ব্যবসায়ীরা৷ সিটংয়ে এক একটি ফল চাষিরা বিক্রি করছেন আড়াই থেকে তিন টাকায়৷ শিলিগুড়িতে পাহাড়ের পাশাপাশি ভুটানের কমলালেবুও আসে৷ তবে গন্ধ ও স্বাদে পাহাড়ের কমলার তুলনা এখানকার চায়ের মতোই অতুলনীয়৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল