অ্যাপশহর

আকাঙ্ক্ষাকে কি সরতে হল উদয়নের জারিজুরি ধরে ফেলেই

উদয়নের মিথ্যাচার কি ধরে ফেলেছিলেন আকাঙ্ক্ষা ?

EiSamay.Com 10 Feb 2017, 10:21 am
এই সময় , বাঁকুড়া : উদয়নের মিথ্যাচার কি ধরে ফেলেছিলেন আকাঙ্ক্ষা ? উদয়নের আসল রূপ জেনে পালাতে চেয়েছিলেন বলেই কি খুন হতে হল বাঁকুড়ার ওই তরুণীকে ? আপাতত তেমনটাই অনুমান করছেন তদন্তকারীরা৷ টানা জেরা করা হলেও মোটেও ভাঙেনি উদয়ন৷ বরং তদন্তে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে৷ আকাঙ্ক্ষাকে খুনের আসল কারণ এখনও বুঝে উঠতে পারেননি তদন্তকারীরা৷ জেরায় বারবার ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্কের আভাস দিচ্ছে সে৷ তবে সে প্রসঙ্গে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ৷ আকাঙ্ক্ষার বাবা -মায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছে উদয়ন৷ বিদেশযাত্রার প্রমাণ মিললেও তার পাসপোর্টে থাকা আমেরিকার স্ট্যাম্পটি ভুয়ো বলে জানতে পেরেছে পুলিশ
EiSamay.Com may be akankha knows every thing about udayon
আকাঙ্ক্ষাকে কি সরতে হল উদয়নের জারিজুরি ধরে ফেলেই


আকাঙ্ক্ষার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও পাসবুক থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে , ২০১৬ -র ১২ জুলাই অনলাইনে ভোপাল থেকে হাওড়া ফেরার ট্রেনের টিকিট কেটেছিলেন আকাঙ্ক্ষা৷ ওই দিন তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ডেবিট হয়েছে৷ তবে কত তারিখের ট্রেন , তা এখনও জানা যায়নি৷ তাই আপাতত পুলিশের ধারণা , ১২ জুলাইয়ের পর কোনও এক দিন আকাঙ্ক্ষাকে খুন করেছে উদয়ন৷ তদন্তকারীরা মনে করছেন , উদয়ন সম্পর্কে হয়তো কিছু জেনে ফেলেছিলেন বাঁকুড়ার ওই তরুণী৷ তাই বাড়ি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি৷ আকাঙ্ক্ষা পালাতে চাইছেন বুঝতে পেরেই হয়তো তাঁকে খুন করে উদয়ন৷

উদয়নের ব্যবহারে ‘অতি বিনয় ’ নিয়েও সন্দিহান তদন্তকারীরা৷ কথায় কথায় ‘থ্যাঙ্কস ’ আওড়াচ্ছে সে৷ এ দিন গাড়িতে ওঠার সময় এক পুলিশকর্মী তাকে জিজ্ঞাসা করেন , সে ঠিক মতো বসেছে কি না৷ প্রত্যুত্তরে সে ‘থ্যাঙ্কস ’ জানাতে ভোলেনি৷ এতেই তদন্তকারীরা মনে করছেন , তা হলে কি গত ৫ -৬ মাস ধরে মানসিক প্রস্ত্ততি নিয়েছে সে ? পুলিশ আধিকারিকরা মনে করছেন , উদয়ন বুঝতে পেরেছিল , তাকে ধরা পড়তেই হবে৷ তাই পুলিশকে কী ভাবে ‘ফেস ’ করবে , তার প্রস্ত্ততি কয়েক মাস ধরে নিয়েছে সে৷

সেই প্রস্ত্ততির অঙ্গ হিসেবেই অক্টোবর মাসে বাঁকুড়ায় আকাঙ্ক্ষার বাড়ি এসেছিল উদয়ন৷ উদ্দেশ্য ছিল , আকাঙ্ক্ষার বাবা -মায়ের হাবভাব -আচরণ জানা৷ আবার আকাঙ্ক্ষাকে বাঁচিয়ে রাখতে তার হোয়াটস্অ্যাপটি অ্যাকাউন্টটিও ধরা পড়ার আগে পর্যন্ত চালু রেখেছিল উদয়ন৷ খুনের পর সেটি উদয়নই অপারেট করত৷ পুলিশ হেফাজতে জেরায় ভেঙে না পড়লেও উদয়ন অনুশোচনা করছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর৷ বাবা -মায়ের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেছে সে৷ এমনকী , আকাঙ্ক্ষার বাবা -মায়ের সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চাইবে বলেও তদন্তকারীদের জানিয়েছে সে৷

২৪ এপ্রিল উদয়নের জন্মদিন৷ সূত্রের খবর , গল্পের ছলে জনৈক পুলিশকর্মীকে উদয়ন জানিয়েছে , ‘এ বারের ২৪ এপ্রিল আর দেখতে চাই না৷ ’ বিদেশযাত্রা করলেও কখনও আমেরিকা যায়নি উদয়ন৷ তার পাসপোর্ট খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সিঙ্গাপুর , ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ভিয়েতনাম ও ২০১৩ সালের এপ্রিলে মস্কো গিয়েছিল সে৷ তার পাসপোর্টে আমেরিকার স্ট্যাম্প থাকলেও সেটি ভুয়ো বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হিরা৷ তিনি বলেন , ‘আকাঙ্ক্ষাকে আমেরিকায় চাকরির নামে উদয়ন যে ভুয়ো নিয়োগপত্রটি দিয়েছিল , তা উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ আকাঙ্ক্ষা আগে কখনও বিদেশ যাননি৷ ভুয়ো নিয়োগপত্রটি দেখে সত্যি বলেই ভেবেছিলেন তিনি৷ ’বুধবার বিকেল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পুলিশ লাইনে উদয়নকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷

তার আগে পুলিশকর্মীর কাছ থেকে সিগারেট চেয়ে খেতে দেখা যায় তাকে৷ তার আচরণে খানিকটা দুশ্চিন্তার ছাপ খেয়াল করেছেন তদন্তকারীরা৷ কারণ বুধবার রাত ২টো অবধি জেগে পায়চারি করতে দেখা গিয়েছে তাকে৷ তদন্ত জানা গিয়েছে , রায়পুরে বাড়ি বিক্রির পর মায়ের বেশ কিছু গয়না এবং সেই সঙ্গে আকাঙ্ক্ষাকে খুনের পর তাঁরও কয়েকটি গয়না ভোপালের একটি গয়নার দোকানে বিক্রি করে সে৷ তবে আকাঙ্ক্ষার দেহের হদিস মেলার পর তাঁর গলায় একটি চেন পাওয়া গিয়েছিল , যা দেখে তাঁর মৃতদেহটি শনাক্ত করেছিলেন ভাই আয়ুষ৷

‘বড়লোকি ’ চাল দেখানোর প্রবণতা রয়েছে তার মধ্যে৷ তাই রায়পুরের বাড়ি বিক্রির টাকায় বিদেশ ভ্রমণ এমনকী , দামি গাড়িও কেনে সে৷ আকাঙ্ক্ষাকে খুন করার পর তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ৭০ হাজার টাকা তুলে খরচ করে উদয়ন৷ কিন্ত্ত গত কয়েক মাসে তার আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে এসেছিল বলেও অনুমান পুলিশের৷ আর সেই কারণে তিন মাস ধরে কেবল সিঙাড়া খেয়েই কাটাতে হয়েছে তাকে৷ উদয়নের অ্যাকাউন্টগুলিও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা৷ পুলিশকে উদয়ন বলেছে , সে ডান কানে কম শোনে৷ ছোটবেলায় কান খোঁচাতে গিয়ে নাকি তার কানের পর্দা ফেটে যায়৷ জেলার পুলিশ সুপার বলেন , ‘এখনও তদন্তে সাহায্য করে চলেছে উদয়ন৷ একবারও ভেঙে পড়েনি৷ আমরা খুনের মোটিফ জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি৷ ’

বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া থেকে মেয়ের শেষকৃত্য করার জন্য পাটনা রওনা দিয়েছে আকাঙ্ক্ষার পরিবার৷ বুধবার রাতে জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে সে কথা জানান আকাঙ্ক্ষার বাবা শিবেন্দ্রকুমার শর্মা৷ রাতেও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ৷ উদয়ন দাস কী মানসিক রোগী ? ধন্দে রয়েছেন তদন্তকারীরা৷ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উদয়নের সাইকোমেট্রিক টেস্ট করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে এ রাজ্যের তদন্তকারী পুলিশ৷ সমাধানের সূত্র বের করতে ইতিমধ্যেই তদন্তকারীরা কলকাতার পাভলভ মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগও করা হয়েছে৷ পাভলভ সূত্রের খবর , পুলিশকে বাঁকুড়ার আশপাশের কোনও প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়ে ওই কাজ করতে পরামর্শ দিয়েছেন পাভলভ কর্তৃপক্ষ৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল