অ্যাপশহর

বন্ধ চা বাগান খুলতে এবার উদ্যোগী মমতা

আপাতত উত্তরবঙ্গের বন্ধ সাতটি চা বাগান খোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করবে রাজ্য৷

EiSamay.Com 29 Jun 2016, 8:49 am
সাবেরী গুপ্ত ■ হাসিমারা
EiSamay.Com mamta will request to central govt try to reopen seven closed tea garden at north bengal
বন্ধ চা বাগান খুলতে এবার উদ্যোগী মমতা


উত্তরবঙ্গের ধুঁকতে থাকা চা শিল্পের স্বাস্থ্য ফেরাতে কেন্দ্রের কাছে যাবে রাজ্য সরকার৷ মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ারের হাসিমারায় প্রশাসনিক বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন , আপাতত উত্তরবঙ্গের বন্ধ সাতটি চা বাগান খোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করবে রাজ্য৷ মমতার কথায় , ‘আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করব , নির্বাচনের আগে তাঁরা যে চা বাগানগুলো নেবেন বলেছিলেন , সেগুলো না -ঘর -কা , না -ঘাট -কা হয়ে পড়ে আছে৷ সেগুলো যাতে দ্রুত অধিগ্রহণ করা হয়৷ ’ বাগানগুলিকে অধিগ্রহণের ঘোষণা করার পর থেকেই শ্রমিকদের মজুরি দিতে হবে বলেও দাবি জানাবে রাজ্য৷ ছ’টি বন্ধ বাগান অধিগ্রহণ করে নিলামেরও পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য৷ আলিপুরদুয়ার জেলার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সোমবার এখানে এসে পৌঁছন ‘দিদিমণি ’৷

আলিপুরদুয়ার শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে মালঙ্গিতে রাত কাটিয়ে মঙ্গলবার হাসিমারায় বন দন্তরের একটি জমির উপরে অস্থায়ী ছাউনিতে প্রশাসনিক বৈঠক করেন তিনি৷ রাজ্যের বিভিন্ন দন্তরের সচিবরা তো বটেই , আলিপুরদুয়ারের ছ’টি ব্লকের প্রশাসনিক কর্তা, জেলার পুলিশকর্তা, থানার ওসি , স্থানীয় বিধায়ক সাংসদ ও রাজ্য মন্ত্রিসভার পাঁচ সদস্য এ দিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন৷ মিড -ডে মিল , নতুন বাস রুট , আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে হাতির হামলা ---বৈঠকে এ সব উঠে এলেও এর মধ্যে চা বাগানের সমস্যাই ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান , বেশ কিছু চা বাগান বন্ধ হয়ে পড়ে আছে৷ সেখানকার শ্রমিকদের রাজ্য দু’টাকা কিলো চাল , স্বাস্থ্য পরিষেবা , ইলেকট্রিক বিলের খরচ জোগায়৷

কিন্ত্ত সেখানেই শেষ নয়৷ আরও যে ছ’টি চা বাগান দীর্ঘদিন বন্ধ আছে , সেগুলিকে রাজ্য সরকারই অধিগ্রহণ করে হাল ফেরানোর পরিকল্পনা করছে৷ মমতা বলেন , ‘সেগুলোর ব্যাপারে একটা পলিসি করার চেষ্টা করছি৷ একটু রিভিউ করে দেখা হবে৷ যেটা সম্ভব সেটা সরকার অধিগ্রহণ করে নিলামে যাবে৷ নিলামে যদি ভালো কেউ আসেন তা হলে চা বাগানটা আবার খুলবে৷ ’ যিনি নেবেন , তিনি চাইলে এক অংশে কৃষিকাজ করতে চাইলে শ্রমিক ও চা বাগানের স্বার্থে অনুমতি দেওয়া হবে বলেও জানান মমতা৷ এগুলির তিনটি আলিপুরদুয়ারে , তিনটি জলপাইগুড়িতে৷ মমতা যখন বন্ধ বাগান অধিগ্রহণ ও নিলামের কথা বলছেন , তার খানিক আগে ‘উত্তরবঙ্গে কোনও চা বাগান বন্ধ নেই৷ তাই কোনও কর্মচ্যুতি নেই’ বলে বিতর্ক বাধিয়েছেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক৷ বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে এ কথা বলেন তিনি৷ যদিও বিধানসভার পরে টেলিফোনে মলয় জানান , রাজ্য সরকারের আইন অনুযায়ী ঘোষিত না হলে কোনও বাগানকে বন্ধ বলে ধরা যাবে না৷ তাই তাঁর বক্তব্যে বিতর্কের কিছু নেই৷

বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য যে রাজ্য সরকার উদ্বিগ্ন , মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য প্রশাসনিক বৈঠকের ভিতরেও তার ইঙ্গিত দেন৷ সাংসদ দশরথ তিরকে চা বাগানের শ্রমিকদের নানা সমস্যার প্রসঙ্গ তুলতে গেলে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টই বুঝিয়ে দেন যে বাগানগুলি খোলা আছে , সেখানে কর্মরতদের ব্যাপারে সরকারের কিছু করার থাকতে পারে না৷ তাঁদের শিক্ষা , খাওয়াদাওয়া বা সিনেমার টিকিট কিংবা ঘরের সাজসজ্জার দায়িত্ব নেওয়া যে সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না , তা স্পষ্ট করে দেন তিনি৷ বরং বন্ধ চা বাগানগুলিকে কী ভাবে খোলা যায় , তা নিয়েই আলোচনা করেন মমতা৷ বিডিও , এসডিও , ওসি , অতিরিক্ত এসপি -সহ কর্তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কে কতদিন হল কাজে যোগ দিয়েছেন , কাজ করতে কেমন লাগছে , এলাকায় কী কী সমস্যা আছে , সে সব জানতে চান ও মন দিয়ে শোনেন৷

পুলিশ -প্রশাসনের কর্তাদের ‘সারপ্রাইজ ভিজিট ’-এ যাওয়ার কথা বলেন৷ যাঁরা বাংলা ভালো জানেন না , তাঁদের পরামর্শ দেন নির্ভরযোগ্য কারও সাহায্য নিতে৷ জঙ্গলের নিরাপত্তার জন্য তাঁর সরকার যে কর্মী নিয়োগের পথে যাচ্ছে , তা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন , ‘এই কাজে স্থানীয়দের নিয়োগের উপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে৷ কারণ তাঁরা এদিককার বিষয়টা ভালো বোঝেন৷ ’ বন্যজন্ত্তর আক্রমণে কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন , বৈঠকেই সে তথ্য জানতে চান মমতা৷ জুলাইয়ের মধ্যে খাদ্যসাথী প্রকল্পের কার্ড বিতরণ , নদী পাড় ভাঙনের সমস্যা মেটাতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন৷ বৈঠক সেরেই হাসিমারা থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য সেবকের রাস্তা ধরেন মুখ্যমন্ত্রী৷ জেলা হিসেবে আলিপুরদুয়ার ভালো কাজ করছে বলে সার্টিফিকেট দিয়ে খোশমেজাজেই গাড়ির সামনের আসনে বসে রওনা দেন৷ কোথাও রাস্তার ধারে মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন৷ কোথাও জঙ্গল ঘেরা রাস্তায় নিজেই নেমে পড়ে হনহনিয়ে হেঁটে নেন৷ সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যায় পৌঁছন মমতা৷ আজ , বুধবার সেখানেই সরকারের ১৩০ তম প্রশাসনিক বৈঠক করার কথা তাঁর৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল