অ্যাপশহর

ভিন্ রাজ্যে গাঁয়ের বহু ছেলে, ভয়ে নীল মালদহ

বাড়ির উঠোনে আফরাজুলের দেহ৷ আছাড়িপিছাড়ি কাঁদছেন গুলমোহর৷ আফরাজুলের স্ত্রী৷ বুক কাঁপছে আয়েশা বিবি , জুলেখা বিবিদের৷

EiSamay 9 Dec 2017, 9:04 am
মানস রায় ■ কালিয়াচক
EiSamay.Com large scale protests in west bengal against labourer killed at rajasthan govt announces compensation and job for family
ভিন্ রাজ্যে গাঁয়ের বহু ছেলে, ভয়ে নীল মালদহ

বাড়ির উঠোনে আফরাজুলের দেহ৷ আছাড়িপিছাড়ি কাঁদছেন গুলমোহর৷ আফরাজুলের স্ত্রী৷ বুক কাঁপছে আয়েশা বিবি , জুলেখা বিবিদের৷ ওঁদের মরদও যে ভিন্ রাজ্যে৷ আফরাজুলের দেহের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রৌঢ় সামিউল হোসেন৷ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত তিনিও বিভিন্ন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন৷ এখন তাঁর দুই ছেলে বাইরে৷ নিজের মনেই বিড়বিড় করছিলেন , ‘নিজে যখন যেতাম , তখনও ঝামেলা ছিল৷ আতঙ্কে থাকতে হত , এই বুঝি বাংলাদেশি বলে চালান করে দেয়৷ এখন শুনছি , আরও খারাপ অবস্থা৷ ’ মাস ফুরোলে ছেলেদের ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছেন সামিউল৷ আতঙ্ক আর উদ্বেগ চরমে৷ শুধু কালিয়াচকে নয়৷ গোটা মালদহে৷ বলা ভালো , গোটা রাজ্য থেকেই লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজের সন্ধানে যান ভিন্ রাজ্যে৷

রাজস্থানে কালিয়াচকের আফরাজুলকে পুড়িয়ে খুনের ঘটনায় তাঁরা রীতিমতো ভীত৷ উদ্বিগ্ন ভিন্ রাজ্যে কর্মরতরাও৷ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে টিভির দৌলতে পুড়িয়ে খুনের ছবি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর থেকে ঘুম নেই কারও৷ কালিয়াচকে আফরাজুলের গ্রাম সৈয়দপুরের টুলু শেখ , আয়েশ শেখ , মহম্মদ মোস্তাক , মোক্তার শেখ রাজস্থানেই আছেন এখন৷ আফরাজুলের সঙ্গেই তাঁরা কাজ করতে গিয়েছিলেন৷ টুলু শেখের মা রাজিয়া বিবি নাওয়া -খাওয়া ভুলেছেন৷ আফরাজুলের দেহের দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝেই ডুকরে কাঁদছেন রাজিয়া৷ কথা বলতে গেলে দু’হাত ধরে শুধু বিলাপ করছেন , ‘আপনারাই বলুন , আমার ছেলের কিছু হবে না তো?’ রাজস্থানে আফরাজুলের সঙ্গে একই ঘরে থাকতেন তাঁর ভাই রুম খান৷ তিনিই দাদার দেহ নিয়ে ফিরেছেন৷

তাঁকে আবার ফিরতে হবে৷ কিন্ত্ত মন মানে না রুমের স্ত্রী টুলি বিবির৷ যাঁকে হাতের সামনে পাচ্ছেন , তাঁকেই প্রশ্ন করছেন , ‘আর যেতে না -দেওয়াই ভালো , কী বলেন ?’ কালিয়াচকে দশম শ্রেণির ছাত্রী রেশমি বৃহস্পতিবার থেকে ছটফট করছে৷ তার দাদা থাকে কেরালায়৷ রেশমি বলে , ‘ওখানে বেশি ঝামেলা নেই৷ কিন্ত্ত মন মানে না৷ কাল থেকে ছয় বার কথা হয়েছে দাদার সঙ্গে৷ ’ সবাই চায় ঘরের লোক ঘরে ফিরে আসুক৷ কিন্ত্ত দ্বিধাও কম নয়৷ সামিউল হোসেন বলেন , ‘ছেলেদের ফিরতে বলব যে , এখানে বছরভর কাজ কোথায় ?’ প্রশ্নটা ঘরে ঘরে৷ আফরাজুলের বাড়ি জালুয়াবাথান গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়৷ ওই পঞ্চায়েতে গত বছর ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে লোকে মজুরি পেয়েছেন মাত্র ৩৩ দিন৷

পরিসংখ্যানটা গ্রাম পঞ্চায়েতেরই৷ কত লোক আছেন ভিন্ রাজ্যে ? তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের মালদহ জেলা সভাপতি মানব বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করলেন , কোনও হিসাব নেই৷ রাজ্যে কয়েক লক্ষ তো বটেই৷ গ্রামে ফিরলে কাজ নেই৷

না -ফিরলে কি পরিণতি আফরাজুলের মতো ? শঙ্কায় সিমন খাতুন , জুলেখা বিবিরা৷ এর মধ্যে গুজব ছড়িয়েছে , রাজস্থানে নাকি বাঙালিদের কুচিকুচি করে কাটবে বলেছে৷ শুধু রাজস্থান নয় , মালদহের ঘরে ঘরে উদ্বেগ গোটা উত্তর ভারত নিয়ে৷ লাভ জেহাদই হোক আর বাংলাদেশি বলে ঘৃণাই হোক , পদে পদে বিপদ ওত পেতে আছে৷ মোক্তারের মুখে যেন ভিন্ রাজ্যের সব শ্রমিকের কথা --- ‘কাজ নিশ্চিত৷ রোজগারও কম নয়৷ জীবনটাই শুধু অনিশ্চিত ভিন্ রাজ্যে৷ ’

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল