অ্যাপশহর

ক্যাম্পাসেই দেদার নেশা,রুখতে কর্মশালা যাদবপুরে

‘বছর তিনেক আগে একটি কমিটি গড়ে ক্যাম্পাসে নেশা করা ঠেকানোর চেষ্টা হয়েছিল৷

EiSamay.Com 24 Oct 2016, 12:23 pm
এই সময় : সন্ধ্যা নামতেই অরবিন্দ ভবনের পিছনের মাঠে , গ্রিন জোনের মাঠে , কখনও বা ঝিল পাড়ে বসে আসর৷ কোথাও মদের বোতল , কোথাও গাঁজার বিন্দাস ঠেক৷ নিরাপত্তারক্ষীরা দেখেও দেখেন না , চোখ উল্টে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্যরা৷ বাইরের লোকজনও ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন অনেক সময়ে৷ রেললাইন লাগানো ঝিলে নামা নিষিদ্ধ হলেও কখনও কখনও সেখানে নেমে স্নান করতে দেখা যায় অনেককেই , যারা মূলত বহিরাগত৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ থেকে পড়ুয়া , কারও অজানা নয় বিষয়টা৷ তবে এতে রাশ টানার উদ্যোগ নেই বললেই চলে৷ বছর তিনেক আগে কমিটি গড়ে ক্যাম্পাসে নেশার সমারোহে লাগাম পরানোর চেষ্টা হয়েছিল ঠিকই , সে কাজেও যে ভাটা পড়েছে , তা স্বীকার করছেন রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ৷ তিনি বলেন , ‘বছর তিনেক আগে একটি কমিটি গড়ে ক্যাম্পাসে নেশা করা ঠেকানোর চেষ্টা হয়েছিল৷ প্রথম দিকে কমিটি কিছুটা সক্রিয়া থাকলেও এখন যে সেটির কাজে ভাটা পড়েছে , সে কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই৷
EiSamay.Com workshop at jadavpur campus for stop adiction
ক্যাম্পাসেই দেদার নেশা,রুখতে কর্মশালা যাদবপুরে


এই পরিস্থিতিতে নেশার কুপ্রভাব নিয়ে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ নার্কোটিক্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ঘটা করে কর্মশালার আয়োজন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এনএসএস সেল৷ কাল , মঙ্গলবার গান্ধী ভবনে সেই কর্মশালা হবে৷ উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের বক্তব্য , ‘আইন তো আছেই৷ তবে আইন করে এ সব জিনিস ঠেকানো সম্ভব নয়৷ তাই আমরা আলোচনার মাধ্যমে এতে রাশ টানার চেষ্টা করছি৷ এই কর্মশালা সেই প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ৷ পরপর এ রকম হতে থাকবে৷ ’ নিয়মিত আলোচনা , সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে র্যাগিং , অশালীন আচরণের ঘটনা গত এক বছরে অনেক কমানো গিয়েছে বলেও তাঁর দাবি৷ তবে কর্মশালা করে , বুঝিয়ে সুজিয়ে কি আদৌ কাউকে নেশা করা থেকে বিরত রাখা সম্ভব ? নাকি এ সব ঠেকাতে ক্যাম্পাসে কড়া দমননীতি নেওয়া দরকার ? উপাচার্যের বক্তব্য , ‘আমি আশা করছি , আলোচনা করে এগুলি বন্ধ করা সম্ভব৷ তা ছাড়া চোখে পড়লে নেশা বন্ধ করার কথা নিরাপত্তারক্ষীদের জানানোই আছে৷ কিন্ত্ত তা দিয়ে চিরস্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়৷ ’

যদিও বিশ্ববিদ্যালয়েরই একাংশ এতখানি আশাবাদী নন৷ কর্মশালার উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও এর ফলাফল নিয়ে অনেকেই সন্দিহান৷ এক আধিকারিক বলেন , ‘অন্যান্য ক্যাম্পাসের পড়ুয়ারা এখানে চলে আসছে নেশা করতে , ড্রাগ নিতে৷ সব জেনেও চোখ বন্ধ করে রাখা হচ্ছে৷ এখন কিছু কর্মশালা করে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি কতটা উন্নত করা সম্ভব , জানি না৷ ’শিক্ষা -গবেষণার দিক থেকে যাদবপুরের স্থান যতই আগে থাক , ক্যাম্পাসে নেশাভাঙের দৌরাত্ম্য সবসময়ই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ৷ হস্টেলে বা কোনও ফাঁকা ক্লাসরুমে লুকিয়ে চুরিয়ে চলে নেশা৷ ক্যাম্পাসে নজরদারি চালানোর জন্য সিসিটিভি বসানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে৷ গ্রিন জোন , মূল প্রবেশ দ্বারগুলির সামনে সিসিটিভি বসাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ৷ তবে আন্দোলনের জেরে সেই প্রক্রিয়া থমকে যায়৷ এখন অবশ্য পড়ুয়ারাও মেনে নিচ্ছেন , সর্বসমক্ষে নেশা করার কথা৷ যদিও এতে জড়িতদের সংখ্যাটা খুব বেশি নয় বলে তাঁদের দাবি৷

ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার ছাত্র সংসদ ফেটসু-র সাধারণ সম্পাদক স্বর্ণেন্দু বর্মন , কলা শাখার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শ্রমণ গুহরা মেনে নিচ্ছেন , ক্যাম্পাসে খোলাখুলি নেশা করতে দেখা যায়৷ তাঁদের বক্তব্য , ‘আমরা মাঝেমধ্যেই ক্লাসরুমে , মাঠের ভিতরে নেশাবিরোধী প্রচার চালাই৷ কখনও কখনও এর জেরে ঝামেলাও হয়৷ আসলে ক্যাম্পাসটা তো সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ তাই নেশা করার সামাজিক সমস্যার প্রভাব এখানেও পড়ছে৷ ’ যাদবপুরে বিষয়টি অনেক প্রকট হলেও কলকাতা , প্রেসিডেন্সিতেও এই সমস্যা ছিল , এখনও আছে৷ প্রেসিডেন্সিতে গত সন্তাহেই নেশা করে ধরা পড়ায় দুই ছাত্রকে সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ তবে সিসিটিভি বসিয়ে , যে সব জায়গায় নেশার রমরমা চলত , তেমন সব জায়গা বন্ধ করে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন কর্তৃপক্ষ৷ এর পরেও লুকিয়ে চুরিয়ে মদ -গাঁজা চলতেই থাকে বলে , নানা সময়ে খবর মেলে৷ অন্যদিকে , কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়িয়ে , সন্ধ্যার পরে আর ক্যাম্পাসে থাকতে না -দেওয়া , বহিরাগতদের আনাগোনায় রাশ টেনে সমস্যা অনেকখানি কমানো গিয়েছে বলে দাবি রেজিস্ট্রার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ তবে রাজাবাজার ও বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ ক্যাম্পাসে নেশাভাঙের সমস্যা এখনও রয়েছে বলেই খবর৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল