অ্যাপশহর

নিগ্রহে পেশায় অনীহা, সেলুন খুললেন ডাক্তার

লাগাতার নিগ্রহ আর মেডিকো-লিগ্যাল ঝামেলার জেরে তিতিবিরক্ত বহু চিকিৎসক। এমনই সন্ধিক্ষণে নৈহাটির এক অর্থোপেডিক সার্জেন সত্যি সত্যিই বিকল্প পেশার পথে হাঁটতে শুরু করলেন হেয়ার কাটিং সেলুনে ভর করে।

EiSamay 14 Sep 2018, 12:10 pm
অনির্বাণ ঘোষ
EiSamay.Com 17997195-health-care-insurance-cuts-with-a-three-dimensional-stethoscope-being-cut-by-metal-scissors-as-a-med


লাগাতার নিগ্রহ আর মেডিকো-লিগ্যাল ঝামেলার জেরে তিতিবিরক্ত বহু চিকিৎসক। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ঘনিষ্ঠ মহলে বিকল্প পেশার কথা বলছেন বেশ কিছু দিন ধরে। ডাক্তারদের ফেসবুক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ গ্র‌ুপেও এ আলোচনা আজকাল নতুন নয়। এমনই সন্ধিক্ষণে নৈহাটির এক অর্থোপেডিক সার্জেন সত্যি সত্যিই বিকল্প পেশার পথে হাঁটতে শুরু করলেন হেয়ার কাটিং সেলুনে ভর করে।

নৈহাটির বাসিন্দা ওই অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞের নাম নীলাদ্রি বিশ্বাস। ফেসবুকে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের পেজে হেয়ার কাটিং সেলুন খোলার পরিকল্পনার কথা তিনি জানান কয়েক দিন আগে। তিনি বলেছিলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে চিকিৎসক সমাজকে, তার কারণেই তিনি সেলুনের ব্যবসাকে বিকল্প পেশা হিসেবে গড়ে তুলতে আগ্রহী। সিংহভাগ চিকিৎসকই বিশ্বাস করেননি সে কথা। অনেকে আবার অবাকও হয়েছিলেন। বিস্মিত সতীর্থদের সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশ্য সত্যিই নীলাদ্রি চালু করে দিলেন তাঁর ইউনিসেক্স পার্লার। বারাসতে রবিবার সেটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও হয়ে গিয়েছে। ডাক্তার-নার্স ও চিকিৎসাকর্মী আর তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩০% ডিসকাউন্টের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে সেখানে।

স্বাভাবিক ভাবেই একজন ডাক্তারবাবুর সেলুন খোলাকে কেন্দ্র করে জোর কানাঘুষো শুরু হয়েছে চিকিৎসক মহলে। ডাক্তারির পাশাপাশি চিকিৎসকদের অন্য ব্যবসা অথবা পেশায় ঢোকা অবশ্য খুব বিরল নয়। অনেকেই চিকিৎসক হয়েও অন্য পেশায় যুক্ত। কিন্তু পুরোদস্তুর ডাক্তারি করতে করতে পরিস্থিতির চাপে আচমকা সেলুন খোলার মতো অভিনব সিদ্ধান্ত নিতে যে সচরাচর দেখা যায় না, তা কবুল করছেন চিকিৎসকরাই। স্থানীয় এবং অর্থোপেডিক অ্যাসোসিয়েশন সূত্রের খবর, এনআরএস থেকে এমবিবিএস এবং আরজি কর থেকে এমএস (অর্থোপেডিক্স) পাশ করার পর অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে বারাসত, হাবরা, বনগাঁয় খুব কম বয়সেই যথেষ্ট ভালো পসার জমিয়েছেন নীলাদ্রি। তাঁর সঙ্গে কোনও নিগ্রহের ঘটনাও ঘটেনি। সে জন্যই তাঁর পার্লার খোলায় বিস্মিত অনেকেই।

নীলাদ্রির অবশ্য বক্তব্য, 'এর মধ্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে হ্যাঁ, ডাক্তারি এখনও ছাড়িনি। কিন্তু সেলুনটা দাঁড়িয়ে গেলে হয়তো ছেড়েই দেব প্র্যাকটিস।' যদিও সরকারি ভাবে পার্লারের মালিক তিনি নিজেই, না তাঁর পরিবারের কেউ, তা খোলসা করেননি তিনি। নীলাদ্রি জানান, গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার বেড়ে চলা চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা তাঁকে বিচলিত করেছিল আগেই। ঠিক এক বছর আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক সর্বজনশ্রদ্ধেয় চিকিৎসকের গায়ে রোগী-পরিজন বিষ্ঠা মাখানোর পরেই তিনি বিকল্প পেশার সন্ধান শুরু করেছিলেন।

'পার্লার ব্যাপারটার প্রতি আগ্রহ ছিলই। তাই ধারদেনা করে একটি সেলুন কিনে সেটিকে সাজিয়ে-গুছিয়ে ইউনিসেক্স পার্লারের রূপ দিয়ে মায়ের হাতে উদ্বোধন করিয়ে দিলাম রবিবার,' মন্তব্য নীলাদ্রির। তিনি জানিয়েছেন, তিনি নিজে চিকিৎসক বলেই চিকিৎসা পেশার সঙ্গে যুক্ত ও তাঁদের পরিবারের জন্য ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা রেখেছেন।

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল