অ্যাপশহর

স্কুলে চাঙড় পড়ে জখম পড়ুয়া, ১১ লক্ষ ক্ষতিপূরণ

একজন পড়ুয়া স্কুলে ভর্তি হলে কর্তৃপক্ষই তার মুখ্য অভিভাবক৷ পড়ুয়ার যাতে কোনও ভাবে ক্ষতি না হয় , তা দেখার দায়িত্বও স্কুল কর্তৃপক্ষেরই৷

Ei Samay 23 Jul 2017, 9:48 am
হিমাদ্রি সরকার
EiSamay.Com the state court ordered the compensation of eleven lakh rupees to the school
স্কুলে চাঙড় পড়ে জখম পড়ুয়া, ১১ লক্ষ ক্ষতিপূরণ

একজন পড়ুয়া স্কুলে ভর্তি হলে কর্তৃপক্ষই তার মুখ্য অভিভাবক৷ পড়ুয়ার যাতে কোনও ভাবে ক্ষতি না হয় , তা দেখার দায়িত্বও স্কুল কর্তৃপক্ষেরই৷ তারপরও কী ভাবে স্কুলে মেরামতির সময় চাঙড় ভেঙে গুরুতর জখম হল চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া সিন্থু, এই প্রশ্ন তুলে কলকাতার এক নামী স্কুলকে ১১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল রাজ্য ক্রেতাসুরক্ষা আদালত৷ বছর পাঁচেক আগে কলকাতার হেস্টিংস এলাকায় ওই নামী স্কুলে টিফিনের সময় বড় চাঙড় খসে পড়ে এস সিন্থুর উপর৷ গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ভর্তি করা হয় কলকাতার সেনা হাসপাতালে৷ সেখানে কিছুদিন চিকিত্সার পর মাদুরাইয়ের একটি নামী অর্থোপেডিক হাসপাতালে দীর্ঘ সময় ধরে তার চিকিত্সা চলে৷ তারপরেও সে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি৷ সে৷ সেই ঘটনায় রাজ্য ক্রেতাসুরক্ষা আদালতের বিচারক সমরেশপ্রসাদ চৌধুরীর বেঞ্চ জানিয়েছে , স্কুল কর্তৃপক্ষকে চিকিত্সার খরচ বাবদ তিন লক্ষ টাকা এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরও আট লক্ষ টাকা দিতে হবে৷

ঘটনাটি ২০১২ সালের জুলাইয়ের৷ স্কুলের ভিতর একটি নির্মাণকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল একটি নামী সংস্থাকে৷ সেই সংস্থার আওতাধীন একটি ঠিকাদার কোম্পানিও কাজ করছিল৷ স্কুলের টিফিন চলাকালীন বাথরুমে যাওয়ার সময় হঠাত্ই একটি বড় চাঙড় পড়ে সিন্থুর উপর৷ তখন ওই স্কুলেই চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত সিন্থু৷ তার পরিবার চিকিত্সার খরচ বাবদ স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা দাবি করে চিঠি দেন৷ স্কুল কর্তৃপক্ষ আবার ওই চিঠি পাঠিয়ে দেয় কাজের দায়িত্বপ্রান্ত সংস্থাটিকে৷ কিন্ত্ত বিস্তর চিঠি চালাচালির পরও কোনও আর্থিক সহযোগিতা পায়নি সিন্থু৷ এরপরই প্রথমে কলকাতা জেলা ক্রেতাসুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয় তার পরিবার৷ সেই আদালতে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ হলেও তাকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য আদালতে যায় স্কুল কর্তৃপক্ষ৷ কিন্ত্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ যে গাফিলতি এড়াতে পারে না , তা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য আদালতও৷ সিন্থুর পরিবারের তরফে আদালতে জানানো হয় , দীর্ঘ চিকিত্সার পরও সে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি৷

স্কুলে দুর্ঘটনায় যে শারীরিক ক্ষতি হয়েছে , তা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে তাকে৷ এর দায় স্কুল কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারে না৷ স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্কুলের অধ্যক্ষা , দুই তরফেই তাদের দায় অস্বীকার করা হয়৷ স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায় , তারা নির্মাণকারী সংস্থাকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নেওয়ার কথা বলেছিল৷ আবার নির্মাণ সংস্থা জানায় , তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়েই কাজ শুরু করেছিল৷ শুধু তাই নয় , কাজের সময় যাতে কোনও অসুবিধা না হয় , সেজন্য নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের কথাও বলা হয়৷ আদালত দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে অবশ্য জানিয়ে দেয় , যাই হয়ে থাক , স্কুল তার দায় অস্বীকার করতে পারে না৷ কারণ , স্কুলে যখন একজন পড়ুয়া ভর্তি হয় , তখন তার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের৷ বিশেষ করে স্কুলের অধ্যক্ষই পড়ুয়াদের অভিভাবক৷ স্কুলে নির্মাণকাজ হলে , ওই চত্বরে নিরাপত্তামূলক বোর্ড থাকা উচিত৷ প্রয়োজনে পড়ুয়াদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়োগ করা দরকার ছিল৷ সে সব কোনওটাই করা হয়নি৷ সে জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ তার দায় অস্বীকার করতে পারে না৷ স্কুল কর্তৃপক্ষ আসলে নির্মাণকাজের উপর নজরই দেয়নি৷ পড়ুয়াদের যাতে অসুবিধায় না পড়তে হয় , সে জন্য প্রয়োজনে ছুটির মরশুমে কাজ করাতে পারত স্কুল কর্তৃপক্ষ৷ কোনও ভাবেই গাফিলতি এড়াতে পারে না স্কুল কর্তৃপক্ষ৷

এই সময়-এর মতযুক্তি -তর্কের ঊর্ধ্বে গিয়ে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত মানবিকতার শর্ত পূরণ করেছে৷ পড়ুয়া যতক্ষণ স্কুলে , তার কোনও দায় স্কুল কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না৷ স্কুলে নির্মাণকাজ চলাকালীন , অন্যের গাফিলতির কারণে যে ছাত্রীটি জখম হল , কোনও মূল্যের অর্থই যথার্থ ক্ষতিপূরণ হতে পারে না৷ এই রায় অন্য স্কুলগুলিকে বাড়তি সতর্কতা নিতে বাধ্য করবে৷ নির্দেশ ক্রেতা কোর্টের৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল