অ্যাপশহর

আবিরে রাঙা আড্ডায় ন্যাড়াপোড়া শুধুই স্মৃতি

আবিরই হোক কিংবা রঙ , খেলার শুরু তো দোলের দিন সকাল থেকেই৷ কিন্ত্ত , আগের সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়ে যেত তার মজা৷

EiSamay.Com 11 Mar 2017, 9:21 am
এই সময়: আবিরই হোক কিংবা রঙ , খেলার শুরু তো দোলের দিন সকাল থেকেই৷ কিন্ত্ত , আগের সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়ে যেত তার মজা৷ যার রেশ কাটতে না -কাটতেই ফুটে উঠতো দিনের আলো৷ তার প্রস্ত্ততিও শুরু হত আরও দিন কয়েক আগে থেকেই৷ খেজুর পাতা কেটে শুকানো৷ পাড়ার এখান -সেখান থেকে কুড়িয়ে আনা শুকনো পাতা আর ডাল৷ দোলের আগের রাতে সে সব শুকনো পাতা আর ডালে তৈরি হত একখানি বাড়ি৷ তার পর তাতে জ্বালানো হতো আগুন৷ পাড়ার ছেলে -ছোকরা মেতে উঠতো ‘ন্যাড়া পোড়া ’-র আনন্দে৷ মুখে মুখে ফিরতো ছড়া - ‘আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া , কাল আমাদের দোল ...!
EiSamay.Com the festival of dolyatra is celebrated with narapora in the state of west bengal
আবিরে রাঙা আড্ডায় ন্যাড়াপোড়া শুধুই স্মৃতি


এখন পাড়ায় পাড়ায় বাড়ির সংখ্যা বেড়েছে , কমেছে খোলা মাঠ৷ আর দোলের রঙের বাহার আর দামি আবিরের বাজার চওড়া হলেও , প্রায় হারিয়েই গিয়েছে সেই ন্যাড়া পোড়া৷ যা ছিল দোল উত্সবেরই অঙ্গ৷ ছেলেবেলায় এই ন্যাড়াপোড়ার স্মৃতি এখনও তাড়া করে গড়িয়ার কামডহরির সৌম্য সাহা কিংবা রামলাল বাজারের কান্তি স্যান্যালদের৷ এখন তাঁরা মাঝবয়সী৷ সৌম্য সাহার আক্ষেপ , ‘আগে যে মাঠটায় আমরা ন্যাড়া পোড়াতাম , এখন তো সেই মাঠটাই নেই৷ তৈরি হয়েছে বহুতল৷ ’ আর কান্তি স্যান্যালের বক্তব্য , ‘ন্যাড়া পোড়ার মাঠেই আগের রাতে হতো একটা গেট টুগেদার৷ পাড়ার ছেলে‌েগের ফিস্ট৷

খুব যে ভালোমন্দ কিছু খাওয়া হতো তা হয়তো নয় , কিন্ত্ত তার মজাটাই ছিল অন্যরকম৷ পরের দিন দোল খেলার প্ল্যানটাও ছকে নেওয়া হতো আগের সন্ধ্যাতেই৷ ’পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি জানান , পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী , রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা রাক্ষসী চেয়েছিল হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে৷ যদিও শেষ পর্যন্ত হোলিকাকেই আগুনে পুড়ে মরতে হয়েছিল৷ সেই ঘটনাই উদযাপন করা হতো ন্যাড়াপোড়া মধ্যে দিয়ে৷ তবে , পন্ডিতদের আরও একটি ব্যাখ্যা রয়েছে ন্যাড়াপোড়াকে ঘিরে৷ দোল পূর্ণিমার দিনেই শুরু হয় বসন্ত৷ শীতকালে বহু গাছের পাতাই ঝরে যায়৷ সেই শুকনো পাতা , ডাল জড়ো করে তাকে পুড়িয়ে দেওয়া মানে এলাকাটিও খানিক পরিষ্কার করা৷ তার মধ্যে দিয়েই শীতকে বিদায় জানিয়ে পরদিন বরণ করে নেওয়া হত বসন্তকে৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপিকা ডালিয়া চক্রবর্তীও এই ব্যাখ্যার শরিক৷ তিনিও বলেন , জীর্ণ যা কিছু তা জ্বালিয়ে নতুনকে বরণ করতেই তা করা হত৷

এখন অবশ্য পরিবেশ সচেতনতা বেড়েছে অনেকখানি৷ শুকনো পাতা , ডাল পোড়ানো মানে কার্বন ডাই অক্সাইড , কার্বন মনো অক্সাইডের মতো গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি৷ শুধু তাই নয় , শহর এলাকায় জনবসতি যে ভাবে বেড়েছে তাতে খোলা জায়গাও মেলে কমই৷ আর উপযুক্ত জায়গা না -থাকলে তা থেকেও ঘটে যেতে পারে বিপদ৷ ফলে ক্রমশ হারিয়েই যেতে বসেছে দোল উত্সবের আগের ন্যাড়াপোড়ার প্রথা৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল