অ্যাপশহর

করোনাকালে বর্ষশেষের মেলা-উৎসবে কঠোর বিধি

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য জুড়ে সমস্ত সর্বজনীন পুজো মণ্ডপে ওই ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়। তবে বছরের শেষ দিনগুলো যাতে শহরবাসী বিনোদনের স্বাদ পান, সেই জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার আয়োজন করছে পাখি মেলার।

Ei Samay 25 Dec 2020, 10:14 am
এই সময়: ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল ৫টা। বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে সোহম দত্ত দমদম মেলায় ঢোকার মুখেই তাঁর পথ আটকালেন নিরাপত্তারক্ষীরা। থার্মাল গান গিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গেল, তাঁর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। রক্ষীরা সোহমকে জানিয়ে দিলেন, এই পরিস্থিতিতে তাঁকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে বাকিদের বিপদে ফেলা যাবে না। সোহমের বান্ধবীর থুতনিতে মাস্ক ঝুলছে। তাঁকেও কড়া গলায় জানিয়ে দেওয়া হল, ঠিকঠাক মাস্ক পরলে তবেই তিনি মেলায় ঢুকতে পারবেন।
EiSamay.Com park street
উত্‍সবের মেজাজ কলকাতায়। ছবি কৌশিক রায়।


করোনাকালে এমনই কড়া অনুশাসন বড়দিনের একদিন আগে, বৃহস্পতিবার চোখে পড়ল দক্ষিণ দমদমের সুরের মাঠে আয়োজিত দমদম মেলায়। ২০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া ওই মেলা চলবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। হরেক কিসিমের জিনিসের পাশাপাশি এই মেলায় রয়েছে বিভিন্ন রাইড। তবে এ বার পরিস্থিতি আলাদা, তাই দর্শকদের জন্য একাধিক বিধিনিষেধও আরোপ করেছেন উদ্যোক্তারা। মাস্ক যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনই গেটে ঢোকার মুখে তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখা। দোকানগুলোর একটার সঙ্গে অন্যটার মধ্যেও রাখা হয়েছে বেশ খানিক দূরত্ব। মেলা কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলছেন, 'দর্শকরা নিয়ম মানছেন কি না, সে দিকে রক্ষীরা সর্বক্ষণ নজরদারি রাখছেন।'

এ দিন ছেলেকে নিয়ে ওই মেলায় এসেছিলেন বাঙুরের বাসিন্দা অনুত্তমা দত্ত। তাঁর বক্তব্য, 'সব কিছু যখন চালু হয়ে গিয়েছে, তখন মেলা হতে আপত্তি কোথায়? বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য মেলা হওয়া দরকার।' অনুত্তমা মনে করেন, উদ্যোক্তারা যে নিয়ম চালু করেছেন, তা মেনে চললে সমস্যা হবে না।

এ দিনই ভিআইপি রোড সংলগ্ন শ্রীভূমি সার্ভিস রোডে শুরু হয়েছে উত্তর-পূর্ব কলকাতা পৌষ পার্বণ ও ক্রিসমাস উৎসব। পার্ক স্ট্রিটের ধাঁচেই সাজানো হয়েছে গোটা চত্বর। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। করোনার কথা মাথায় রেখে এই উৎসবেও এ বার বেশ কিছু নিয়ম। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, রোজ সন্ধ্যায় যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়, সেখানে অন্যান্য বারের তুলনায় আসন সংখ্যা এই বছর ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। নিয়ম করে উৎসবের জায়গা ও চেয়ারগুলো জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মাস্ক। দমকলমন্ত্রী তথা ক্লাবের কর্মকর্তা সুজিত বসু বলেছেন, 'পার্ক স্ট্রিটের স্বাদ যাতে ভিআইপি রোডেই মেলে, এমন সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাবতীয় নিয়ম মেনেই পার্বণ হবে।'

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দুর্গাপুজোর সময়ে মণ্ডপে দর্শকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে পথ দেখিয়েছিলেন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের কর্মকর্তারা। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য জুড়ে সমস্ত সর্বজনীন পুজো মণ্ডপে ওই ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়। তবে বছরের শেষ দিনগুলো যাতে শহরবাসী বিনোদনের স্বাদ পান, সেই জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার আয়োজন করছে পাখি মেলার। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া মেলা চলবে রবিবার পর্যন্ত।

এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, থার্মাল গান দিয়ে তাপমাত্রা মাপার পর এবং মুখে মাস্ক থাকলে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। একসঙ্গে যাতে বেশি মানুষ ভিড় না-করেন, সে দিকেও নজর রাখছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা সজল ঘোষ বলছেন, 'দুর্গাপুজোয় এক ঘণ্টায় ১০ হাজার লোক ঢোকেন। সেখানে এই মেলায় ওই একই সময়ে বড়জোর ১০০ লোক হয়। তা ছাড়া, দুর্গাপুজোর তুলনায় এখন সংক্রমণের হার কম। তবু স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সব কিছু করা হচ্ছে।'

নিউ টাউন মেলা প্রাঙ্গনে আয়োজিত সরস মেলাতেও দোকানের সামনে গোল দাগ কেটে দেওয়া হয়েছে। যাতে দূরত্ববিধি রক্ষা করা যায়। প্রত্যেক ঘণ্টায় জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণ। মাস্ক যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনই মাঠ জুড়ে বসানো হয়েছে একাধিক স্যানিটাইজার মেশিন। আজ, শুক্রবার সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে শুরু হচ্ছে 'বাংলার তাঁতের মেলা'। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এই মেলাও যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হবে বলে উদ্যোক্তাদের দাবি।

সতর্কতা মেনে আনন্দ

মাস্ক বাধ্যতামূলক

দফায় দফায় স্যানিটাইজেশন

দূরত্ববিধি রক্ষায় গোল দাগ

অনুষ্ঠানে দর্শকাসন ২৫% কম


এই সময় ডিজিটাল এখন টেলিগ্রামেও। সাবস্ক্রাইব করুন, থাকুন সবসময় আপডেটেড। জাস্ট এখানে ক্লিক করুন-

পরের খবর