স্বভাব যায় না... খুবই চেনা প্রবাদ! তবে কড়া নজরদারিতে তাকে কিছুটা ভুল প্রমাণ করতে পেরেছে কলকাতার মেট্রো রেল। নন এসি রেকে দু'কামরার মাঝের ভেস্টিবিউলে পিক-থুথু পড়ত ঠিকই। তবে হালে সব রেক এসি হওয়ার পর কলকাতা মেট্রো ঝকঝকে থাকে। কিন্তু তাতে গড়পরতা কলকাতাবাসীর স্বভাব খুব একটা পাল্টায়নি। কলার খোসা রাস্তায় ফেলার আগে অনেকেরই মাথায় থাকে না, কত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সদ্য রং করা রাস্তার ডিভাইডারে গুটকার পিক ফেলতে কারও বাধে না। পাশে শৌচাগার থাকলেও ফাঁকা জায়গা পেলেই প্রকৃতির ডাক উপেক্ষা করতে পারেন না অনেকে। অথচ মেট্রো স্টেশনে পা রাখলে সেই মানুষটিই হয়ে যান সচেতন নাগরিক। লজেন্স মুখে দিলেও রাংতা মাটিতে না-ফেলে পকেটে রেখে দেন। সবটাই আসলে স্বভাব।
স্বাস্থ্যহানি, ক্ষয়ক্ষতি
থুতু ও পানের পিকে শুধু শহর নোংরা হচ্ছে তা নয়, তা স্বাস্থ্যের পক্ষেও যথেষ্ট ক্ষতিকর। সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, যতবার প্রকাশ্য জায়গায় থুতু বা পানের পিক পড়বে, সেটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬০ জনের শরীরে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে। করোনা ছড়াতেও তা অনুঘটকের ভূমিকা নিতে পারে।
পুরসভার আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, শহরের ট্রাফিক সিগন্যালে সবথেকে বেশি পানের পিক পড়ে। তাতে মিডিয়ান স্ট্রিপগুলো নোংরা হয়। নষ্ট হচ্ছে ফুটপাথের রেলিং। শুরুতে বছরে একবার নীল-সাদা রং করা হতো। এখন বছরে দু'বার, তিনবার রেলিং রং করতে হচ্ছে। এর জন্য বছরে ৫-৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়।
আইন কী বলে?
রাস্তায় থুতু ফেললে কিংবা খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করলে ১০০ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে কলকাতা পুর আইনে। সুব্রত মুখোপাধ্যায় যখন মেয়র ছিলেন, তিনি মাঝেমধ্যেই রাস্তায় টহল দিতে বেরোতেন। কাউকে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে দেখলে লাঠি নিয়ে তাড়া করতেন।
লন্ডনের রাস্তায় থুতু ফেললে ৮০ পাউন্ড (প্রায় ৭ হাজার টাকা) জরিমানা করা হয়। ১০০০ টাকা জরিমানা চালু করেছে মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিং চৌহান সরকার। গত ৯ মাসে বৃহন্মুম্বই পুরসভা ১৯ হাজার নাগরিকের থেকে এই খাতে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার মতো জরিমানা আদায় করেছে। রাস্তায় থুতু ও পানের পিক ফেলা রুখতে ২০০০ টাকা জরিমানা ধার্য করেছে দিল্লির কেজরিওয়াল সরকার। প্রকাশ্যে থুতু ফেলা বন্ধ করতে দিল্লি, মুম্বই, মধ্যপ্রদেশ সরকার যেভাবে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, কলকাতার পুর প্রশাসকরা সে তুলনায় কিছুটা নমনীয়ই আছেন।
কেবল্ জট, হোর্ডিং
রাজপথ থেকে অলিগলি সর্বত্রই ঝুলছে কেবল্ তার। কখনও সেটা রাস্তায় গড়াগড়ি খায়। সম্প্রতি বড়বাজারে আগুন নেভাতে গিয়ে কেবল্ তারের জটে আটকে গিয়েছিল দমকলের মই। লালবাজারের নির্দেশ, কেবল্ তার কম করে ২০ ফুট উঁচুতে রাখতে হবে। সেই নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন অনেকে। বছর দু'য়েক আগে ভবানীপুরের রমেশ মিত্র লেনে রাস্তায় পড়ে থাকা কেবল্ তার চাকার সঙ্গে জড়িয়ে এক বাইক আরোহী উল্টে পড়ে যান।
হেরিটেজ বাড়ির সামনে হোর্ডিং লাগানো নিষিদ্ধ। ইএম বাইপাস থেকে পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড় পর্যন্ত এলাকাকে গ্রিন করিডোর হিসাবে ঘোষণা করেছে পুরসভা। কিন্তু সেখানেও হোর্ডিংয়ে ছয়লাপ। ঝড়ে হোর্ডিং ভেঙে দুর্ঘটনাও ঘটছে আকছার।
কী করছে প্রশাসন
থুতু ফেলা আটকাতে মিডিয়ান স্ট্রিপের উপর ছোট ছোট সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। মাইকে প্রচার চলে। মাঝে মধ্যে কলকাতা পুলিশের তরফে অভিযানও চালানো হয়। পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, কেবল্ জট ছাড়াতে গত জুন মাসে নবান্ন সভাগৃহে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। ছিলেন মুখ্যসচিব, তৎকালীন পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম এবং পুরমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কেবল্ অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অতি দ্রুত তারের জঞ্জাল সরাতে হবে। যদিও তার কিছুই হয়নি।
পুর আধিকারিকদের বক্তব্য, কেবল্ এবং ইন্টারনেট জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়ে। তারা টেলিকম রেগুলেটারি অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার অধীনে পড়ে। আইনি রক্ষাকবচ না থাকায় সহজে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। হেরিটেজ বাড়ির সামনে হোর্ডিং লাগানো পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে পুরসভা। অথচ, অনেকে এজেন্সি বেআইনি ভাবে হেরিটেজ ভবনের সামনে হোর্ডিং লাগিয়ে রেখেছে। মাঝেমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা চিরতরে মেটে না।
'কলকাতাকে কীভাবে আরও সুন্দর রাখা যায় তার জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আর একদল লোক রাস্তায় যেখানে সেখানে কালো তার ঝুলিয়ে রেখে দেবে এবং দৃশ্য দূষণ ছড়াবে, এটা মানা যাবে না। সবাইকে মাটির নীচ দিয়ে কেবল তার নিয়ে যেতে হবে।' ফিরহাদ হাকিম (কলকাতার প্রাক্তন মেয়র)
'জরিমানা নিলেই সব সমস্যার সমাধান হয় না। এর জন্য মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে।' দেবাশিস কুমার (কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ)
'যারা এই কাজগুলো করে তাদের বেশিরভাগ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এদের কড়া নিয়মের মধ্যে রাখতে হবে। বুঝিয়ে কাজ হবে না। মোটা টাকা জরিমানা নিলে তবেই এদের হুঁশ ফিরবে।' কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় (মনস্তত্ববিদ)
স্বাস্থ্যহানি, ক্ষয়ক্ষতি
থুতু ও পানের পিকে শুধু শহর নোংরা হচ্ছে তা নয়, তা স্বাস্থ্যের পক্ষেও যথেষ্ট ক্ষতিকর। সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, যতবার প্রকাশ্য জায়গায় থুতু বা পানের পিক পড়বে, সেটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬০ জনের শরীরে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে। করোনা ছড়াতেও তা অনুঘটকের ভূমিকা নিতে পারে।
পুরসভার আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, শহরের ট্রাফিক সিগন্যালে সবথেকে বেশি পানের পিক পড়ে। তাতে মিডিয়ান স্ট্রিপগুলো নোংরা হয়। নষ্ট হচ্ছে ফুটপাথের রেলিং। শুরুতে বছরে একবার নীল-সাদা রং করা হতো। এখন বছরে দু'বার, তিনবার রেলিং রং করতে হচ্ছে। এর জন্য বছরে ৫-৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়।
আইন কী বলে?
রাস্তায় থুতু ফেললে কিংবা খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করলে ১০০ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে কলকাতা পুর আইনে। সুব্রত মুখোপাধ্যায় যখন মেয়র ছিলেন, তিনি মাঝেমধ্যেই রাস্তায় টহল দিতে বেরোতেন। কাউকে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে দেখলে লাঠি নিয়ে তাড়া করতেন।
লন্ডনের রাস্তায় থুতু ফেললে ৮০ পাউন্ড (প্রায় ৭ হাজার টাকা) জরিমানা করা হয়। ১০০০ টাকা জরিমানা চালু করেছে মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিং চৌহান সরকার। গত ৯ মাসে বৃহন্মুম্বই পুরসভা ১৯ হাজার নাগরিকের থেকে এই খাতে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার মতো জরিমানা আদায় করেছে। রাস্তায় থুতু ও পানের পিক ফেলা রুখতে ২০০০ টাকা জরিমানা ধার্য করেছে দিল্লির কেজরিওয়াল সরকার। প্রকাশ্যে থুতু ফেলা বন্ধ করতে দিল্লি, মুম্বই, মধ্যপ্রদেশ সরকার যেভাবে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, কলকাতার পুর প্রশাসকরা সে তুলনায় কিছুটা নমনীয়ই আছেন।
কেবল্ জট, হোর্ডিং
রাজপথ থেকে অলিগলি সর্বত্রই ঝুলছে কেবল্ তার। কখনও সেটা রাস্তায় গড়াগড়ি খায়। সম্প্রতি বড়বাজারে আগুন নেভাতে গিয়ে কেবল্ তারের জটে আটকে গিয়েছিল দমকলের মই। লালবাজারের নির্দেশ, কেবল্ তার কম করে ২০ ফুট উঁচুতে রাখতে হবে। সেই নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন অনেকে। বছর দু'য়েক আগে ভবানীপুরের রমেশ মিত্র লেনে রাস্তায় পড়ে থাকা কেবল্ তার চাকার সঙ্গে জড়িয়ে এক বাইক আরোহী উল্টে পড়ে যান।
হেরিটেজ বাড়ির সামনে হোর্ডিং লাগানো নিষিদ্ধ। ইএম বাইপাস থেকে পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড় পর্যন্ত এলাকাকে গ্রিন করিডোর হিসাবে ঘোষণা করেছে পুরসভা। কিন্তু সেখানেও হোর্ডিংয়ে ছয়লাপ। ঝড়ে হোর্ডিং ভেঙে দুর্ঘটনাও ঘটছে আকছার।
কী করছে প্রশাসন
থুতু ফেলা আটকাতে মিডিয়ান স্ট্রিপের উপর ছোট ছোট সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। মাইকে প্রচার চলে। মাঝে মধ্যে কলকাতা পুলিশের তরফে অভিযানও চালানো হয়। পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, কেবল্ জট ছাড়াতে গত জুন মাসে নবান্ন সভাগৃহে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। ছিলেন মুখ্যসচিব, তৎকালীন পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম এবং পুরমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কেবল্ অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অতি দ্রুত তারের জঞ্জাল সরাতে হবে। যদিও তার কিছুই হয়নি।
পুর আধিকারিকদের বক্তব্য, কেবল্ এবং ইন্টারনেট জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়ে। তারা টেলিকম রেগুলেটারি অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার অধীনে পড়ে। আইনি রক্ষাকবচ না থাকায় সহজে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। হেরিটেজ বাড়ির সামনে হোর্ডিং লাগানো পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে পুরসভা। অথচ, অনেকে এজেন্সি বেআইনি ভাবে হেরিটেজ ভবনের সামনে হোর্ডিং লাগিয়ে রেখেছে। মাঝেমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা চিরতরে মেটে না।
'কলকাতাকে কীভাবে আরও সুন্দর রাখা যায় তার জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আর একদল লোক রাস্তায় যেখানে সেখানে কালো তার ঝুলিয়ে রেখে দেবে এবং দৃশ্য দূষণ ছড়াবে, এটা মানা যাবে না। সবাইকে মাটির নীচ দিয়ে কেবল তার নিয়ে যেতে হবে।' ফিরহাদ হাকিম (কলকাতার প্রাক্তন মেয়র)
'জরিমানা নিলেই সব সমস্যার সমাধান হয় না। এর জন্য মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে।' দেবাশিস কুমার (কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ)
'যারা এই কাজগুলো করে তাদের বেশিরভাগ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এদের কড়া নিয়মের মধ্যে রাখতে হবে। বুঝিয়ে কাজ হবে না। মোটা টাকা জরিমানা নিলে তবেই এদের হুঁশ ফিরবে।' কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় (মনস্তত্ববিদ)