কমলেশ চৌধুরী
বরফসাদা সিল্করুট। তা-ও কি না মে-র শেষে!
জুলুক থেকে নাথাং উপত্যকার দিকে গাড়ি এগোতেই খুশিতে লাফিয়ে উঠেছিলেন মধ্যমগ্রামের তরুণ গৌরব চক্রবর্তী। সপরিবারে সিকিমে গিয়েছেন ছুটি কাটাতে। প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না কারও! দু’পাশের পাহাড় তো বটেই, হাতের কাছের চড়াই, মায় রাস্তাও পুরু বরফের নীচে। বরফের বল বানিয়ে লোফালুফি খেলছেন পর্যটকরা।
শীতে উঁচু পাহাড়ে এ ছবি পরিচিত। কিন্তু তাই বলে গ্রীষ্মের একেবারে শেষবেলায় এমন তুষারপাত! যখন দেশের উত্তর-পশ্চিম তল্লাট তাপপ্রবাহের গনগনে আগুনে পুড়ছে, দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ব তল্লাটে বর্ষা হাজির, তখনও সিকিমের একটা অংশ তাজা তুষারে ঢাকা! বিশেষ করে এমন একটা মরসুমে, যে বার ভরা শীতে তুষারপাত প্রায় হয়ইনি। ডিসেম্বর, জানুয়ারি, এমনকী ফেব্রুয়ারিতেও হাপিত্যেশ করতে দেখা গিয়েছে গুলমার্গ, পহেলগাম, মানালি, সিমলাকে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ঝুলি ভরেনি পড়শি রাজ্যের লাচেন-লাচুং বা জুলুক-নাথাংয়েরও!
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, জলহাওয়ার হলটা কী!
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, হিমালয়ে তুষারপাতের নেপথ্যে রয়েছে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার ভূমিকা। সুদূর ভূমধ্যসাগর থেকে জলীয় বাষ্প নিয়ে ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান পেরিয়ে কাশ্মীরের পাহাড়ে হাজির হয় এই ‘নিম্নচাপ’। তার পর হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, নেপাল, সিকিম হয়ে চিন বা উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে সরে যায়। এই পর্বেই বৃষ্টি নামে। বরফ ঝরে। দিল্লি-পাঞ্জাব-হরিয়ানার শীতকালীন বৃষ্টিও হয় ঝঞ্ঝার হাত ধরে। সেখানকার ধুলোঝড়ের পিছনেও সে।
শীতের মরসুমে যে তেমন তুষারপাত হয়নি, আবার মে মাসের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে সাদা হয়ে যাচ্ছে সিল্করুট, তার ময়নাতদন্তে উঠে আসছে ঝঞ্ঝার খেয়ালিপনার কথাই। নয়াদিল্লি মৌসম ভবনের আবহবিদ চরণ সিংয়ের পর্যবেক্ষণ, ‘এ বছর শুরুর দিকে ঝঞ্ঝা কম আসছিল। তেমন শক্তিশালীও ছিল না সেগুলি। তাই যথেষ্ট তুষারপাত হয়নি। আবার যদি এপ্রিল, মে মাসের দিকে তাকাই, তা হলে বলতে হয়, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সংখ্যায় ঝঞ্ঝা এসেছে।’
তাই বেশ কয়েকবার ধুলোঝড়ের মুখে পড়েছে দিল্লি-সহ উত্তর ভারত। মৃতের সংখ্যা শতাধিক। আবার মার্চ-মে, পূর্ব এবং উত্তর সিকিমেও বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। গ্যাংটক আবহাওয়া দপ্তরের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘এটা ঘটনা, ডিসেম্বর বা জানুয়ারির চেয়ে পরবর্তী মাসগুলিতে তুষারপাতের পূর্বাভাস বেশি সংখ্যায় দিতে হয়েছে। মে মাসে এতটা অনুকূল পরিবেশ সাধারণত থাকে না। আসলে ঝঞ্ঝার প্রভাবে কখনও ঘূর্ণাবর্ত, কখনও অক্ষরেখা সৃষ্টি হয়েছে। তারাই সঙ্গত করেছে। তবে আমাদের হাতে স্নোগেজ না থাকায় বরফ পড়েছে কি না, তা সরকারি ভাবে বলা মুশকিল।’
মে-র অন্তে বরফ যে পড়েছে, তাঁর সাক্ষী ব্যাঙ্কচাকুরে গৌরব। তাঁর কথায়, ‘মে মাসের ২৯ তারিখ বরফ পাব, একবারের জন্যও ভাবিনি। এই সময় কাশ্মীরের চন্দনবাড়িতে গিয়ে পুরোনো, ধুলোয় ঢাকা বরফ দেখেছিলাম। নাথাংয়ে পেলাম টাটকা বরফ। আমরা যাওয়ার আগের সন্ধ্যায় পড়েছে।’ নাথাংয়ে হোম স্টে চালান কেশং ভুটিয়া। ফোনে বললেন, ‘নাথাং থেকে বাবামন্দির, গোটা রাস্তাটাই বরফে ঢাকা। মে-তে এত বরফ আগে দেখিনি। জানুয়ারিতে পর্যটকেরা তেমন বরফ না পেয়ে মন খারাপ করে ফিরে গিয়েছিলেন, এখন বরফের খবর শুনে ছুটে আসছেন। থাকতে দেওয়ার জায়গা হচ্ছে না!’ গ্যাংটক থেকে লাচেন-লাচুং-ইয়ুমথাংয়ে পর্যটকদের নিয়ে যান গাড়িচালক ভাইচুং ভুটিয়া। ফোনে বললেন, ‘নীচের দিকে বৃষ্টি হচ্ছে। আর উপরে বরফ। মে মাসেই অনেকগুলো দিন বরফ পড়ল এ দিকে।’
পশ্চিমি ঝঞ্ঝার এমন দৌরাত্ম্য বেড়ে গেল কী ভাবে?
মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘এ বছর প্রাক্বর্ষা মরসুমে বঙ্গোপাসাগরে কোনও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়নি। একেবারে শেষে মায়ানমারে আছড়ে পড়ে একটি গভীর নিম্নচাপ। এই কারণে পশ্চিম থেকে পূর্বে সরা পশ্চিমি ঝঞ্ঝা অনেকটা খোলা মাঠ পেয়ে গিয়েছে। উত্তরে না ঝুঁকে কিছুটা দক্ষিণ দিকেও নেমে এসেছে। বরফ পড়ার এটা একটা কারণ।’
পর্যটকদেরও তাই পোয়াবারো!
বরফসাদা সিল্করুট। তা-ও কি না মে-র শেষে!
জুলুক থেকে নাথাং উপত্যকার দিকে গাড়ি এগোতেই খুশিতে লাফিয়ে উঠেছিলেন মধ্যমগ্রামের তরুণ গৌরব চক্রবর্তী। সপরিবারে সিকিমে গিয়েছেন ছুটি কাটাতে। প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না কারও! দু’পাশের পাহাড় তো বটেই, হাতের কাছের চড়াই, মায় রাস্তাও পুরু বরফের নীচে। বরফের বল বানিয়ে লোফালুফি খেলছেন পর্যটকরা।
শীতে উঁচু পাহাড়ে এ ছবি পরিচিত। কিন্তু তাই বলে গ্রীষ্মের একেবারে শেষবেলায় এমন তুষারপাত! যখন দেশের উত্তর-পশ্চিম তল্লাট তাপপ্রবাহের গনগনে আগুনে পুড়ছে, দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্ব তল্লাটে বর্ষা হাজির, তখনও সিকিমের একটা অংশ তাজা তুষারে ঢাকা! বিশেষ করে এমন একটা মরসুমে, যে বার ভরা শীতে তুষারপাত প্রায় হয়ইনি। ডিসেম্বর, জানুয়ারি, এমনকী ফেব্রুয়ারিতেও হাপিত্যেশ করতে দেখা গিয়েছে গুলমার্গ, পহেলগাম, মানালি, সিমলাকে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ঝুলি ভরেনি পড়শি রাজ্যের লাচেন-লাচুং বা জুলুক-নাথাংয়েরও!
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, জলহাওয়ার হলটা কী!
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, হিমালয়ে তুষারপাতের নেপথ্যে রয়েছে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার ভূমিকা। সুদূর ভূমধ্যসাগর থেকে জলীয় বাষ্প নিয়ে ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান পেরিয়ে কাশ্মীরের পাহাড়ে হাজির হয় এই ‘নিম্নচাপ’। তার পর হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, নেপাল, সিকিম হয়ে চিন বা উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে সরে যায়। এই পর্বেই বৃষ্টি নামে। বরফ ঝরে। দিল্লি-পাঞ্জাব-হরিয়ানার শীতকালীন বৃষ্টিও হয় ঝঞ্ঝার হাত ধরে। সেখানকার ধুলোঝড়ের পিছনেও সে।
শীতের মরসুমে যে তেমন তুষারপাত হয়নি, আবার মে মাসের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে সাদা হয়ে যাচ্ছে সিল্করুট, তার ময়নাতদন্তে উঠে আসছে ঝঞ্ঝার খেয়ালিপনার কথাই। নয়াদিল্লি মৌসম ভবনের আবহবিদ চরণ সিংয়ের পর্যবেক্ষণ, ‘এ বছর শুরুর দিকে ঝঞ্ঝা কম আসছিল। তেমন শক্তিশালীও ছিল না সেগুলি। তাই যথেষ্ট তুষারপাত হয়নি। আবার যদি এপ্রিল, মে মাসের দিকে তাকাই, তা হলে বলতে হয়, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সংখ্যায় ঝঞ্ঝা এসেছে।’
তাই বেশ কয়েকবার ধুলোঝড়ের মুখে পড়েছে দিল্লি-সহ উত্তর ভারত। মৃতের সংখ্যা শতাধিক। আবার মার্চ-মে, পূর্ব এবং উত্তর সিকিমেও বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। গ্যাংটক আবহাওয়া দপ্তরের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘এটা ঘটনা, ডিসেম্বর বা জানুয়ারির চেয়ে পরবর্তী মাসগুলিতে তুষারপাতের পূর্বাভাস বেশি সংখ্যায় দিতে হয়েছে। মে মাসে এতটা অনুকূল পরিবেশ সাধারণত থাকে না। আসলে ঝঞ্ঝার প্রভাবে কখনও ঘূর্ণাবর্ত, কখনও অক্ষরেখা সৃষ্টি হয়েছে। তারাই সঙ্গত করেছে। তবে আমাদের হাতে স্নোগেজ না থাকায় বরফ পড়েছে কি না, তা সরকারি ভাবে বলা মুশকিল।’
মে-র অন্তে বরফ যে পড়েছে, তাঁর সাক্ষী ব্যাঙ্কচাকুরে গৌরব। তাঁর কথায়, ‘মে মাসের ২৯ তারিখ বরফ পাব, একবারের জন্যও ভাবিনি। এই সময় কাশ্মীরের চন্দনবাড়িতে গিয়ে পুরোনো, ধুলোয় ঢাকা বরফ দেখেছিলাম। নাথাংয়ে পেলাম টাটকা বরফ। আমরা যাওয়ার আগের সন্ধ্যায় পড়েছে।’ নাথাংয়ে হোম স্টে চালান কেশং ভুটিয়া। ফোনে বললেন, ‘নাথাং থেকে বাবামন্দির, গোটা রাস্তাটাই বরফে ঢাকা। মে-তে এত বরফ আগে দেখিনি। জানুয়ারিতে পর্যটকেরা তেমন বরফ না পেয়ে মন খারাপ করে ফিরে গিয়েছিলেন, এখন বরফের খবর শুনে ছুটে আসছেন। থাকতে দেওয়ার জায়গা হচ্ছে না!’ গ্যাংটক থেকে লাচেন-লাচুং-ইয়ুমথাংয়ে পর্যটকদের নিয়ে যান গাড়িচালক ভাইচুং ভুটিয়া। ফোনে বললেন, ‘নীচের দিকে বৃষ্টি হচ্ছে। আর উপরে বরফ। মে মাসেই অনেকগুলো দিন বরফ পড়ল এ দিকে।’
পশ্চিমি ঝঞ্ঝার এমন দৌরাত্ম্য বেড়ে গেল কী ভাবে?
মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘এ বছর প্রাক্বর্ষা মরসুমে বঙ্গোপাসাগরে কোনও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়নি। একেবারে শেষে মায়ানমারে আছড়ে পড়ে একটি গভীর নিম্নচাপ। এই কারণে পশ্চিম থেকে পূর্বে সরা পশ্চিমি ঝঞ্ঝা অনেকটা খোলা মাঠ পেয়ে গিয়েছে। উত্তরে না ঝুঁকে কিছুটা দক্ষিণ দিকেও নেমে এসেছে। বরফ পড়ার এটা একটা কারণ।’
পর্যটকদেরও তাই পোয়াবারো!