অ্যাপশহর

দেশজুড়ে প্রতারণার জাল, শহরে ধৃত ১৬

দেশজুড়ে জালিয়াতির ফাঁদ পাতা হয়েছিল কৈখালির নিতান্ত মধ্যবিত্ত পাড়ার তস্য গলির একটি দোতলা বাড়ি থেকে৷

EiSamay.Com 12 Apr 2017, 9:01 am
এই সময় : দেশজুড়ে জালিয়াতির ফাঁদ পাতা হয়েছিল কৈখালির নিতান্ত মধ্যবিত্ত পাড়ার তস্য গলির একটি দোতলা বাড়ি থেকে৷ সোমবার রাত দুটো নাগাদ কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স এবং বিধাননগর কমিশনারেটের যৌথ অভিযানে সেই ফ্ল্যাট থেকে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ পরে আরও তিন জনকে পাকড়াও করা হয় বাগুইআটি থেকে৷ ‘নাপতোল ’ নামে একটি অনলাইন শপিং সংস্থার নাম করে জালিয়াতির জাল বিস্তার করা হয়েছিল এই ফ্ল্যাট থেকেই৷ মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (৫ ) বিশাল গর্গ বলেছেন , ‘ধৃতদের মধ্যেই চক্রের পাণ্ডা রয়েছে কি না , তা জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বোঝা যাবে৷ ’
EiSamay.Com salt lake and special task force were arrested 13 people in joint operation
দেশজুড়ে প্রতারণার জাল, শহরে ধৃত ১৬


এই অভিযানের পরে পাড়ার আর একটি ফ্ল্যাট থেকে কয়েকজন যুবক রাতারাতি উধাও বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী৷ পুলিশ তাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে৷ ধৃতদের বেশির ভাগই ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা৷ এই শহরের রয়েছে পাঁচ জন৷ তারা হল গৌরব সিং , মায়াঙ্ক দিদওয়ানিয়া , সৌরভ মিশ্র , বিশাল জয়সওয়াল , দীপক সাউ৷ বাকিরা বিহার , তামিলনাড়ু , কর্নাটক এবং ওডিশার৷ ফ্ল্যাট থেকে ৬০টি মোবাইল , দু’টি ল্যাপটপ , রিজার্ভ ব্যাঙ্ক , একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং নাপতোলের নকল রাবার স্ট্যাম্প , প্রচুর এটিএম কার্ড, কাস্টমার ডেটাবেস , নকল চেক বই, পাসবুক পাওয়া গিয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে , নাপতোলের ভিপি অরুণকুমার সিংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে এই জালিয়াতি চক্রের হদিস পাওয়া গিয়েছে৷ গত ৩১ জানুয়ারি অরুণকুমার তাঁর অভিযোগে জানান , সংস্থার নাম করে নাপতোলের কাস্টমারদের প্রতারণা করা হচ্ছে৷

পুলিশ সূত্রে খবর , নাপতোলের কাস্টমার ডেটাবেস হাতিয়েছিল প্রতারকরা৷ সেখান থেকে ফোন করা হত কাস্টমারদের৷ বলা হত , লাকি ড্রয়ে নাম উঠেছে৷ দেওয়া হবে আকর্ষণীয় পুরস্কার৷ প্রসেসিং ফি হিসেবে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা চাওয়া হত৷ সেই টাকা জমা দিতে বলা হত একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে৷ বিভিন্ন রাজ্যে ক্রেতাদের ফোন করা হত৷ এ ভাবে বছরখানেক ধরে চলছিল এই চক্র৷ যার একটা বড় কাজ কৈখালির ফ্ল্যাট থেকে হত বলে পুলিশের সন্দেহ৷ এদিকে , প্রতিশ্রীতিমতো পুরস্কার না -পেয়ে ক্রমাগত ফোন যেতে থাকে নাপতোলে৷ প্রতারিক গ্রাহকদের অধিকাংশই এই রাজ্যের বলে জানা গিয়েছে৷ সেইমতো প্রথমে চিত্পুর থানা এবং পরে কলকাতা পুলিশের জালিয়াতি দমন শাখায় সংস্থার তরফে অভিযোগ করা হয়৷ পুলিশ জেনেছে , লোক চেয়ে কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল এই চক্র৷ বলা হয়েছিল , কল সেন্টারের জন্য লোক চাই৷

যদিও পুলিশের বক্তব্য , ধৃতদের কেউ না -জেনে এ কাজ করেছে , এমন নয়৷ ধৃতদের বয়স ২৫ -এর আশেপাশে৷ এ দিন তাদের আদালতে তোলা হলে ২১ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজত হয়েছে৷ কৈখালির বিমাননগর এমনিতে শান্ত এলাকা৷ বিশেষ করে সল্টলেকে চাকরি করেন , এমন বহু মানুষ কৈখালির বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াটে হিসেবে থাকেন৷ ফলে বিমাননগরের পার্থ চক্রবর্তীর কাছে যখন ভিন্ রাজ্য থেকে আসা ‘আইটি সেক্টরের কর্মীরা ’ ভাড়া চেয়েছিলেন , তাঁরও কোনও সন্দেহ জাগেনি৷ এলাকাবাসীরও সে ভাবে সন্দেহ হয়নি৷ ঠিক পাশের বাড়ির দীপমালা মণ্ডলের কথায় , ‘বেশ কয়েকটি ছেলে বাইকে করে আসত৷ প্রথমে অল্প কয়েকটি ছেলে ছিল৷ ক্রমশ তাদের সংখ্যা বাড়ে৷ কিন্ত্ত সন্দেহজনক কিছু দেখিনি৷ রাত পর্যন্ত আলো জ্বলত৷ ’ উল্টো দিকের বাড়ির সহস্রাক্ষ নন্দীর কথায় , ‘বাড়ি থেকে কখনও হুল্লোড়ের শব্দ আসেনি৷ ফলে , অভিযোগ জানানোর অবকাশ নেই৷ ভাড়াটে তো কতই রয়েছে এই পাড়ায়৷ তবে ভাড়া দেওয়ার আগে বাড়িওয়ালাদের উচিত সব দিক খতিয়ে দেখা৷ ’

পার্থ চক্রবর্তীও স্বীকার করেছেন , ‘ভুল আমার একটা হয়েছে৷ আরও ভালো করে খতিয়ে দেখা উচিত ছিল৷ পুলিশের কাছেও বলেছি সে কথা৷ ’ বিধাননগর কমিশনারেটের বক্তব্য , এই এলাকার বাড়িওয়ালারা ভাড়াটে বা কাজের লোকের তথ্য পুলিশকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেন না৷ বাড়িওয়াদের বক্তব্য , বেশি তথ্য চাইলেই কাজের লোক ছেড়ে দিচ্ছে , ভাড়াটে আসছে না৷ নিট ফল , পুলিশের কাছে এলাকাবাসীদের সম্পূর্ণ ডেটাবেসই নেই৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল