অযোধ্যায় সাড়ম্বরে হল রামমন্দিরের ভূমিপুজো। আর সুদূর বাংলায় লকডাউনের মধ্যেই তা উদযাপনে মেতে উঠলেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। ফলে করোনাকালে সংক্রমণ আশঙ্কা বাড়ল আরও কয়েকগুণ।
EiSamay.Com5 Aug 2020, 5:34 pm
সব প্রতিক্ষার অবসান। বহু বিতর্কের মাঝেই অযোধ্যায় রাম মন্দিরের শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর শিলান্যাস করে গোটা দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রামভক্তদের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতাও জ্ঞাপন করেন মোদী। তিনি বলেন,'এই স্লোগান শুধু অযোধ্যা নয়, গোটা বিশ্বে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।' তাঁর কথায়, যে বছরের পর বছর তাঁবুতে দিন কাটিয়েছেন রাম লালা। এবার তাঁর নিজের একটা মন্দির হবে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরিস্থিতি রুখতে আজ সম্পূর্ণ লকডাউন। কিন্তু বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব আগেই বলে রেখেছিল, লকডাউন থাকলেও দিকে-দিকে তাঁরা পুজে ও মিছিল করবেন। প্রশাসনকে রীতিমতো চ্যালঞ্জ করেই এ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হল রামের পুজো। কোথাও হল বাইক বা সাধারণ মিছিল। বহু ক্ষেত্রেই হল না সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মানা। যা দেখে বিশেষজ্ঞদের একাংশ রীতিমতো শিউড়ে উঠেছেন। তাঁদের মতে, ব্যক্তিগত বিশ্বাস ব্যক্তিগতভাবে বাড়িতে পালন করাই যেত। কিন্তু যেভাবে রাস্তায় নেমে, মাস্ক ছাড়া অনেকেই আনন্দে মাতলেন তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
রামে রাজনীতি?
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ আগেই দাবি করেছিলেন, এর আগে বহুবার বদলানো হয়েছে লকডাউনের তারিখ। তাই রাজ্যের মানুষের আবেগকে কথা মাথায় রেখে বদলানো হোক পাঁচ তারিখের লকডাউন। কিন্তু বিজেপির সেই আবেদনে সাড়া না দিয়ে উল্টে রাজ্যের হিন্দু সম্প্রদায়ের আবেগকে অসম্মান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মঙ্গলবার এই অভিযোগও করেন দিলীপ ঘোষ। যদিও বুধবার সকালে ট্যুইটে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, 'হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান -একে অপরের ভাই-ভাই! আমার ভারত মহান, মহান আমার হিন্দুস্তান! আমাদের দেশ তার চিরায়ত বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে, এবং আমাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঐতিহ্যকে সংরক্ষিত রাখব।'
কোথায় লকডাউন?
রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগেই সবরকম ভাবে সেজে উঠছিল উত্তরপ্রদেশের বহু চর্চিত শহর অযোধ্যা। তার মধ্যে হয়েছে নতুন বিমানবন্দর, ঝাঁ চকচকে রেলস্টেশন। রামমন্দিরের শহর অযোধ্যাকে সাজিয়ে তুলতে ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। ২০২৪ নাগাদ মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হলে সেই পথে অনেকটাই সাফল্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছে সরকার। আর সেই অযোধ্যার রেশ এসে পড়েছে এ রাজ্যেও। এদিন সকাল থেকেই দিকে-দিকে শুরু হয় রামের পুজো। কলকাতা থেকে জেলা বাদ যায়নি কোথাও। লকডাউনের মধ্যেই রাস্তায় নেমে আনন্দে মাতে বহু বিজেপি কর্মীসমর্থক।
নিয়মভঙ্গই কি রাম সেবা?
আর লকডাউন বনাম ভূমিপুজো আবহে বেশ কিছু জায়গায় সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়েন বিজেপি কর্মীরা। বুধবার সকালে নিউটাউনে ভূমিপুজো উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় বলে খবর। বিজেপির পতাকা ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অপরদিকে মঙ্গলবার রাতে রাজারহাটের নারায়ণপুরের এক মন্দিরে ভূমিপুজো উদযাপনের প্রস্তুতি চলছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাতে বাধা দিতে বোমা, গুলি চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। খড়গপুরেও রামের মন্দিরের শিলান্যাস অনুষ্ঠানের হোডিং ছেঁড়া নিয়ে সংঘাত তৈরি হয়।
বিশ্বাস নাকি ইভেন্ট?
রাজ্যের দিকেদিকে শঙ্খধ্বনি নয়, বাজি ফাটিয়ে, 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনি দিয়ে ভূমিপুজো উদযাপন হল দক্ষিণ ২৪ বারুইপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রোকোণার মতো জায়গায়। এ দিন সকালে বারুইপুর আমতলা রুটে জোড়া দোকান এলাকায় লকডাউন বিধি ভেঙে জমায়েত করেন বিজেপি কর্মী–সমর্থকরা। নেতৃত্বে ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বিজেপি–র সহ সভাপতি সুফল ঘাটু। অভিযোগ, রামচন্দ্রের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর বেপরোয়া ভাবে বাজি ফাটানো হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরে পুলিশের উপর হামলার অভিযোগও উঠেছে।
করোনার আতঙ্ক কোথায়?
রাজ্যজুড়ে সম্পূর্ণ লকডাউনের বারাসাতে টাকি রোডের লাউডস্পিকার চালিয়ে রমরম করে হল পুজোর আয়োজন। বেলা এগারোটা থেকেই শুরু হল রাম পুজো। কার্যালয়ের নামের ছবিতে ফুল, মালা দিয়ে সাজিয়ে মন্ত্রোচ্চারণে হয়ে গেল পুজো। আয়োজনকারীদের বেশিরভাগের পরনে ছিল গেরুয়া। ভালোই ভিড় হয়েছিল সেখানে। কারও কারও মুখে আবারও মাস্কও ছিল না। সামাজিক দূরত্ববিধিও শিকেয় উঠল। শুধু এক্ষেত্রেই নয়, রাজ্যজুড়েই বিজেপির বিভিন্ন পার্টি অফিসের বাইরে প্রায় একই ছবি। বারাসত পুরসবার বিভিন্ন ওয়ার্ডে পুজো উপলক্ষে লাড্ডু বিতরণও হল। মোদ্দা কথা, লকডাউন কার্যত শিকেয় উঠল।
West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল
We use cookies and other tracking technologies to provide services in line with the preferences you reveal while browsing the Website to show personalize content and targeted ads, analyze site traffic, and understand where our audience is coming from in order to improve your browsing experience on our Website. By continuing to browse this Website, you consent to the use of these cookies. If you wish to object such processing, please read the instructions described in our privacy policy/cookie policy.