এই সময়: ২০১৫-এর ৪ জানুয়ারি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কাছেই ৮ নম্বর আরপুলি লেনে বাড়ির একতলার ১৬ ফুট-বাই-১৪ ফুটের ঘরে ঢুকতেই যে গ্যাসের গন্ধ নাকে এসেছিল তদন্তকারী অফিসারদের, সেই গ্যাসেই মৃত্যু হয়েছিল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী সুমন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দীর্ঘ পাঁচ বছর আইনি লড়াইয়ের পর এমনই সিদ্ধান্ত জাতীয় পরিবেশ আদালতের। বিচারপতি এসপি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য সত্যবান সিং গারবিয়ালের বেঞ্চ সেই অভিযোগকে মান্যতা দিয়ে গ্যাস কোম্পানিকে এই মেধাবী ছাত্রীর মৃত্যুর দায়ে ৬৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে। এক মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। না-হলে ১২ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হবে। পরিবেশ প্রশ্নে গাফিলতিতে কারও মৃত্যু বা অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় এত বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণের নজির নেই বলেই আইনজ্ঞরা মনে করছেন। গ্যাস সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, রায়ের প্রতিলিপি হাতে পেয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। তারা সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারে বলে ইঙ্গিত।
সুমন্তিকার মৃত্যুতে প্রথমে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের আর্জি জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল। মামলা চলাকালীন ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বাড়ানোর আবেদন পেশ করা হয়। আদালত অবশ্য গাফিলতির জেরে মেধাবী এক পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়েই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ৬৪ লক্ষ করেছে। অভিযুক্ত সংস্থার বিরুদ্ধে গাফিলতিতে মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজু করে তদন্ত করেছিল কলকাতা পুলিশও। চার্জশিটও তিন বছর আগে ব্যাঙ্কশাল আদালতে জমা পড়েছে। ফৌজদারি সেই মামলাতেও বিচারপ্রক্রিয়া চলছে।
সে দিন আরপুলি লেনের ওই ঘর থেকে অচৈতন্য অবস্থায় প্রেসিডেন্সির ফিজিক্সের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া সুমন্তিকা ছাড়াও তাঁর রুমমেট সুবর্ণা লামাকেও উদ্ধার করা হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে সুমন্তিকাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বেশ কয়েক দিন চিকিৎসায় সুস্থ হন সুবর্ণা। প্রথমে খাবারে বিষক্রিয়ায় সুমন্তিকার মৃত্যু হতে পারে বলে মনে করা হলেও ঘরে যে গ্যাসের গন্ধ মিলেছিল, সেটির ভূমিকাও নিয়েও সন্দিহান ছিলেন মুচিপাড়া থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তকারীরা। ওই গ্যাসের নমুনা ফরেন্সিক এবং মৃতের শরীরের কিছু অংশের নমুনা ভিসেরা পরীক্ষায় পাঠানো হয়। ঘটনার দিন থেকে ধারাবাহিক ভাবে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে 'এই সময়'। সুমন্তিকার বাবা-মা এবং আইনজীবীও এ দিন বারে বারে এই সময়-এর ভূমিকার কথা স্মরণ করেছেন। পরিবেশ আদালতেও এই সব প্রতিবেদেন, তথ্য বড় পেশ হয়। পরিবারের তরফে আইনজীবী সোমনাথ রায়চৌধুরী বুধবার বলেন, 'ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ সাক্ষ্যপ্রমাণ-সহ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করতে হয়। পরিবেশ আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলায় দেখা হয় প্রিপন্ডার্যান্স অব প্রোবাবিলিটি বা কোন সম্ভাবনাটি সবচেয়ে বেশি যুক্তিপূর্ণ। আমরা গ্যাস লিকে মৃত্যুর বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম। যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ বিবেচনায় সেই সম্ভাবনাই সবচেয়ে জোরালো মনে করেছে আদালত।'
পুলিশ ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল থেকে গ্যাসের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি জিসিজিএসসিএল যে গ্যাস সরবরাহ করে, তারও নমুনা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, দু'টিই এক। ঘটনাস্থলে গিয়ে ফরেন্সিক বিভাগের দুই বিশেষজ্ঞ যে রিপোর্ট দেন, তাতেও বলা হয়, ওই ঘরে গ্যাসের উপস্থিতি প্রবল ছিল। ঘণ্টা চারেক পাখা চালিয়েও প্রাবল্য কমেনি। পর দিন গন্ধ আরও বাড়ে। জানলার পাশে সুমন্তিকার খাটের কাছে গ্যাসের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ধরা পড়ে। সেই গ্যাসে প্রথমে অস্বস্তি হলেও বেশ কিছুক্ষণ পর তেমন টের পাওয়া যায় না। কিন্তু ওই গ্যাসের আবহে দীর্ঘক্ষণ থাকলে জীবন সংশয় হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টেও গ্যাস বিশ্লেষণে কার্বন মনোক্সাইড ও মিথেনের উপস্থিতি মেলে। কার্বন মনোক্সাইড প্রাণঘাতী। এই মামলায় সুবর্ণা লামা ও কলকাতা পুলিশের তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষের বক্তব্যও খতিয়ে দেখেছে আদালত। পুলিশের জমা করা নথিতে দেখা যায়, ওই বাড়ির জানলার পাশে ৮০ সেন্টিমিটার নীচে পুরোনো গ্যাসলাইনে একটি ফাটল ছিল। গ্যাস লিকেই সুমন্তিকার মৃত্যু বলে দাবি করেন আইনজীবী।
তবে জিসিজিএসসিএলের তরফে আইনজীবী মধুমিতা ভট্টাচার্য দাবি করেছিলেন, পাইপলাইনে লিকেজ ছিল না। ওই গ্যাসও প্রাণঘাতী নয় এবং বাতাসের চেয়ে হাল্কা হওয়ায় উপরে উঠে যাওয়ার কথা। যদিও যাবতীয় তথ্যপ্রমাণে গ্যাসে মৃত্যুর সম্ভাবনাই প্রবল বলে সিদ্ধান্তে এসেছে আদালত। এই ধরনের গ্যাস পরিবহণে প্রয়োজনীয় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেই বলেও আদালতের নজরে আনা হয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বাধ্যতামূলক অনুমতি বা 'কনসেন্ট টু অপারেট'ও জিসিজিএসসিএলের ছিল না বলে উঠে আসে শুনানিতে।
সুমন্তিকার মৃত্যুতে প্রথমে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের আর্জি জানিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল। মামলা চলাকালীন ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বাড়ানোর আবেদন পেশ করা হয়। আদালত অবশ্য গাফিলতির জেরে মেধাবী এক পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়েই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ৬৪ লক্ষ করেছে। অভিযুক্ত সংস্থার বিরুদ্ধে গাফিলতিতে মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজু করে তদন্ত করেছিল কলকাতা পুলিশও। চার্জশিটও তিন বছর আগে ব্যাঙ্কশাল আদালতে জমা পড়েছে। ফৌজদারি সেই মামলাতেও বিচারপ্রক্রিয়া চলছে।
সে দিন আরপুলি লেনের ওই ঘর থেকে অচৈতন্য অবস্থায় প্রেসিডেন্সির ফিজিক্সের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া সুমন্তিকা ছাড়াও তাঁর রুমমেট সুবর্ণা লামাকেও উদ্ধার করা হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে সুমন্তিকাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বেশ কয়েক দিন চিকিৎসায় সুস্থ হন সুবর্ণা। প্রথমে খাবারে বিষক্রিয়ায় সুমন্তিকার মৃত্যু হতে পারে বলে মনে করা হলেও ঘরে যে গ্যাসের গন্ধ মিলেছিল, সেটির ভূমিকাও নিয়েও সন্দিহান ছিলেন মুচিপাড়া থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তকারীরা। ওই গ্যাসের নমুনা ফরেন্সিক এবং মৃতের শরীরের কিছু অংশের নমুনা ভিসেরা পরীক্ষায় পাঠানো হয়। ঘটনার দিন থেকে ধারাবাহিক ভাবে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে 'এই সময়'। সুমন্তিকার বাবা-মা এবং আইনজীবীও এ দিন বারে বারে এই সময়-এর ভূমিকার কথা স্মরণ করেছেন। পরিবেশ আদালতেও এই সব প্রতিবেদেন, তথ্য বড় পেশ হয়। পরিবারের তরফে আইনজীবী সোমনাথ রায়চৌধুরী বুধবার বলেন, 'ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ সাক্ষ্যপ্রমাণ-সহ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করতে হয়। পরিবেশ আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলায় দেখা হয় প্রিপন্ডার্যান্স অব প্রোবাবিলিটি বা কোন সম্ভাবনাটি সবচেয়ে বেশি যুক্তিপূর্ণ। আমরা গ্যাস লিকে মৃত্যুর বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম। যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ বিবেচনায় সেই সম্ভাবনাই সবচেয়ে জোরালো মনে করেছে আদালত।'
পুলিশ ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল থেকে গ্যাসের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি জিসিজিএসসিএল যে গ্যাস সরবরাহ করে, তারও নমুনা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, দু'টিই এক। ঘটনাস্থলে গিয়ে ফরেন্সিক বিভাগের দুই বিশেষজ্ঞ যে রিপোর্ট দেন, তাতেও বলা হয়, ওই ঘরে গ্যাসের উপস্থিতি প্রবল ছিল। ঘণ্টা চারেক পাখা চালিয়েও প্রাবল্য কমেনি। পর দিন গন্ধ আরও বাড়ে। জানলার পাশে সুমন্তিকার খাটের কাছে গ্যাসের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ধরা পড়ে। সেই গ্যাসে প্রথমে অস্বস্তি হলেও বেশ কিছুক্ষণ পর তেমন টের পাওয়া যায় না। কিন্তু ওই গ্যাসের আবহে দীর্ঘক্ষণ থাকলে জীবন সংশয় হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টেও গ্যাস বিশ্লেষণে কার্বন মনোক্সাইড ও মিথেনের উপস্থিতি মেলে। কার্বন মনোক্সাইড প্রাণঘাতী। এই মামলায় সুবর্ণা লামা ও কলকাতা পুলিশের তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষের বক্তব্যও খতিয়ে দেখেছে আদালত। পুলিশের জমা করা নথিতে দেখা যায়, ওই বাড়ির জানলার পাশে ৮০ সেন্টিমিটার নীচে পুরোনো গ্যাসলাইনে একটি ফাটল ছিল। গ্যাস লিকেই সুমন্তিকার মৃত্যু বলে দাবি করেন আইনজীবী।
তবে জিসিজিএসসিএলের তরফে আইনজীবী মধুমিতা ভট্টাচার্য দাবি করেছিলেন, পাইপলাইনে লিকেজ ছিল না। ওই গ্যাসও প্রাণঘাতী নয় এবং বাতাসের চেয়ে হাল্কা হওয়ায় উপরে উঠে যাওয়ার কথা। যদিও যাবতীয় তথ্যপ্রমাণে গ্যাসে মৃত্যুর সম্ভাবনাই প্রবল বলে সিদ্ধান্তে এসেছে আদালত। এই ধরনের গ্যাস পরিবহণে প্রয়োজনীয় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেই বলেও আদালতের নজরে আনা হয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বাধ্যতামূলক অনুমতি বা 'কনসেন্ট টু অপারেট'ও জিসিজিএসসিএলের ছিল না বলে উঠে আসে শুনানিতে।