অ্যাপশহর

টালা ব্রিজ ভাঙলে বিকল্প ব্যবস্থাই বড় চ্যালেঞ্জ

উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ, কেবল, ইন্টারনেটের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পরিষেবা সচল রাখাও বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে প্রশাসনের কাছে। সল্টলেক, রাজারহাট, দমদমে প্রতিদিন ৭৫ লক্ষ গ্যালন জল সরবরাহ হয় টালা জলাধার থেকে।

EiSamay.Com 14 Oct 2019, 8:45 am
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: টালা ব্রিজ না হয় ভাঙা হল। তবে এর সুদূরপ্রসারি প্রভাব ঠেকানো যাবে কেমন করে? এই প্রশ্নটাই এখন ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে। বিশেষজ্ঞ সংস্থার সুপারিশ মেনে টালা ব্রিজ ভেঙে ফেললে শুধু যানবাহন চলাচলের বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করলেই হবে না, আরও বেশ কিছু সমস্যা মেটাতে হবে। উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ, কেবল, ইন্টারনেটের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পরিষেবা সচল রাখাও বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে প্রশাসনের কাছে। সল্টলেক, রাজারহাট, দমদমে প্রতিদিন ৭৫ লক্ষ গ্যালন জল সরবরাহ হয় টালা জলাধার থেকে। সেই জলের পাইপলাইন গিয়েছে টালা ব্রিজের নীচ দিয়ে। শুধু তাই নয়, বরাহনগর-সহ উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে যে জল সরবরাহ হয়, তার পাইপলাইন টালা ব্রিজের নীচে একদম গা ঘেঁষে রয়েছে। এ ছাড়াও গ্যাস সরবরাহের লাইন, পাইকপাড়া, টালা, দমদমের বিদ্যুৎ সংযোগের লাইন, নিকাশির পাইপলাইনও রয়েছে ব্রিজের নীচে। তাই এই প্রত্যেকটি পরিষেবার বিকল্প ব্যবস্থা না করে টালা ব্রিজ ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে চূড়ান্ত দুর্ভোগের মুখে পড়বেন শহরের বড় অংশের মানুষ।
EiSamay.Com tala bridge


টালা জলাধার থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বেই টালা ব্রিজ। উত্তর কলকাতার বৃহত্তম জলাধার থেকে ৭২ মিটারের পাইপলাইন ব্রিটিশ আমলেই বসানো হয়েছে শোভাবাজার, শ্যামবাজার, মানিকতলা এলাকায় জল সরবরাহের জন্য। ওই পাইপলাইন টালা ব্রিজ থেকে ৪৬ ফুট দূরত্বে রয়েছে। তেমনই ওই ব্রিজের নীচ দিয়েই পাইকপাড়া, সেভেন ট্যাঙ্ক, দমদম রোড, লেকটাউন হয়ে জল পৌঁছয় দক্ষিণ দমদম, বিধাননগর পুরনিগম এলাকায়। রবিবার ওই ব্রিজের নীচে দেখা গেল সরবরাহ বন্ধ হয়েও এখনও রয়ে গিয়েছে গ্যাসের লাইন। ওই পাইপলাইনের সংযোগস্থল থেকে এখনও গ্যাসের গন্ধ আসছে। ব্রিজের নীচে রয়েছে তিনটি সংস্থার কেবল পরিষেবার তার।

৭৩ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস ভূপেশচন্দ্র কুণ্ডুর। তাঁর আশঙ্কা, ‘টালা ব্রিজ বন্ধ হলে দেরিতেও হলেও গন্তব্যে পৌঁছনো যাবে। তবে এই ব্রিজের তলা দিয়ে যাওয়া পাইপলাইনের বিকল্প ব্যবস্থা না করলে লক্ষ-লক্ষ মানুষ জল পাবেন না। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।’ টালা ব্রিজের নীচে ভূগর্ভস্থ এলাকার ম্যাপ তৈরির কাজ শুরু করছে পূর্ত দপ্তর। এ জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। মূলত টালা ব্রিজের নীচে ঠিক কী কী রয়েছে, পাইপলাইন কোথা দিয়ে গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে ম্যাপিং করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্রিজটি ভেঙে নতুন করে তৈরি করার ক্ষেত্রে এই ম্যাপ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে।

বছর সাতেক আগে টালা এলাকায় জলের পাইপলাইন ফেটে বিপত্তি হয়। ওই সময় টালা ব্রিজের নীচে থাকা পাইপলাইন দিয়ে দ্রুত সেই জল বের করা সম্ভব হয়। ওই প্রসঙ্গ টেনে সেখানকার দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা অরিৎ রায় বলছেন, ‘ব্রিজ ভাঙার আগে বিকল্প নিকাশি ব্যবস্থা করাও জরুরি। না হলে জলের পাইপ লাইন ফাটলে পুরো এলাকা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জলমগ্ন হয়ে যাবে।’

দীর্ঘ দিন থেকেই টালা এলাকার সরকার বাগান সহ-অন্যান্য এলাকায় পাইপলাইনে গ্যাস পরিষেবা বন্ধ থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দা, শম্ভু মুখোপাধ্যায়, অরুণাভ চক্রবর্তীরা আশঙ্কায়। তাঁরা মনে করছেন, ব্রিজ ভেঙে ফেলার আগে গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন তুলে না নিলে ওই গ্যাস থেকে এলাকার পরিবেশ দূষিত হবে। টালা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্য কল্যাণ চৌধুরী বলেন, ‘সঠিক পরিকল্পনা এবং সাবধানতা অবলম্বন না করলে এই চত্বরের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, আগাম পরিকল্পনা করে পদক্ষেপ করা হোক।’

কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলেন, ‘টালা সেতুর বিপর্যয়ের জন্য পানীয় জলের পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’ তবে বিদ্যুৎ, নিকাশি, কেবল, ইন্টারনেটের তার বা পাইপলাইন নিয়ে তেমন কোনও সমস্যা পোহাতে হবে না বলেই দাবি তরুণের।

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল