অ্যাপশহর

আত্মমগ্নতার উল্টো স্রোতে ফেসবুক ছাড়ছেন অনেকে

হঠাত্ ফেসবুকে অনীহা কেন ? মইদুলের বক্তব্য , ‘তথ্যের জন্য ফেসবুক করার কোনও প্রয়োজন নেই৷ আমার ক্ষেত্রে মতামত জানানোর জন্যও নয়৷ তা হলে রইল পড়ে নিজের প্রচার৷ সেটারও কোনও প্রয়োজন দেখি না৷

Ei Samay 2 Aug 2017, 10:32 am
এই সময়: কথা হচ্ছিল অধ্যাপক মইদুল ইসলামের সঙ্গে৷ কথা প্রসঙ্গে বললেন , ‘এমনিতে পড়াশোনা নিয়েই থাকি৷ সেটাই আমার কাজ৷ তার বাইরে যদি হাতে সময় থাকে, তা হলে আরও দুটো বই পড়া ভালো৷ কিন্ত্ত ফেসবুক করে সময় আর মন-মানসিকতা নষ্ট করার কোনও অর্থ নেই৷’
EiSamay.Com people leaving social media because facebook and twitter make you sad
আত্মমগ্নতার উল্টো স্রোতে ফেসবুক ছাড়ছেন অনেকে


সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সের এই অধ্যাপককে টিভি এবং খবরের কাগজের সূত্রে চেনেন অনেকেই৷ বছর খানেক আগেও ফেসবুকে তিনি ততটাই সক্রিয় ছিলেন যতটা খবরের কাগজে বা টিভিতে৷ তা হলে হঠাত্ ফেসবুকে অনীহা কেন ? মইদুলের বক্তব্য , ‘তথ্যের জন্য ফেসবুক করার কোনও প্রয়োজন নেই৷ আমার ক্ষেত্রে মতামত জানানোর জন্যও নয়৷ তা হলে রইল পড়ে নিজের প্রচার৷ সেটারও কোনও প্রয়োজন দেখি না৷

বরং প্রতিদিন যে হারে হেট স্পিচ বাড়ছে , লোকে গায়ে পড়ে ফেসবুকে এসে নিজেদের মত আমার উপর চাপিয়ে যাচ্ছে অথবা কুকথা বলছে --তাতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলাম না৷ ’একই কথা শোনাচ্ছেন চলচ্চিত্র পরিচালক অর্ণব মিদ্দাও৷ বছর দু’য়েক হয়ে গেল ফেসবুক থেকে বিদায় নিয়েছেন৷ সামাজিক বিষয়ে ছবি করছেন কিন্ত্ত নবীন এই পরিচালক মনে করেন না সমাজকে বোঝার জন্য আদৌ ফেসবুকের প্রয়োজন আছে৷ তাঁর বক্তব্য , ‘মাঝে মাঝে অনেকে প্রশ্ন করেন ফেসবুকে না থাকলে সমাজ -জনতা কী চাইছে , কী নিয়ে আলোচনা করছে , কোনটা ইন কোনটা আউট --বুঝবে কী করে ?

আমি তাদের বলি , মাঠে -ঘাটে ঘুরলে ও -সবের প্রয়োজন পড়ে না৷ ফেসবুকটা বড্ড একপেশে আর বড্ড অ্যাজেন্ডা ভিত্তিক৷ ’দিল্লির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্বাগত সরকার এখনও নিজের ফেসবুক প্রোফাইল ডিঅ্যাক্টিভেট করেননি বটে তবে খু-উ -ব প্রয়োজন ছাড়া লগ -ইন করেন না৷ তিনি মনে করেন , ‘ফেসবুক আসলে খুব কমফোর্ট জোনে পরিণত হয়েছে৷ এখানে সহমতের লোকেরা সব সময় একে অন্যের পিঠ চাপড়াচ্ছেন৷ বিতর্ক যদিও বা , তা-ও বেশির ভাগ সময়েই খেউরে পরিণত হচ্ছে৷ ’ বিশ্ব জুড়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নিয়ে একটি সার্ভেতে দেখা যাচ্ছে , ফেসবুক ইউজারের নিরিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পিছনে ফেলে দিয়েছে ভারত৷ আমেরিকায় ফেসবুক ব্যবহারকারী যেখানে ২.৪০ মিলিয়ন , সেখানে ভারত সামান্য এগিয়ে ২.৪১ মিলিয়নে রয়েছে৷ কিন্ত্ত এই ভিড়ের মধ্যেও মইদুল , অর্ণবরা যেন উল্টোমুখী ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরছেন৷ কিন্ত্ত কেন এই বিপরীতমুখী ট্রেন্ড? নোয়াম চমস্কি থেকে অনেক বিখ্যাত মানুষই মনে করেন , বর্তমান সময়টা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে বিপ্লবের যুগ৷ সমাজবিদদের বক্তব্য , ২০১০ সালে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে মানুষের ধারাবাহিক বিক্ষোভ , যা আরব বসন্ত হিসেবে পরিচিত --তার পুরোটাই ছিল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের উপর নির্ভর করে৷

ভারতেও নির্ভয়া ধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদ থেকে রোজ ছোট বড় অনেক প্রতিবাদই হচ্ছে ফেসবুকের ওয়ালে৷ এ সবের মাঝেই ফেসবুক ইউজারদের নিয়ে অভিযোগেরও শেষ নেই৷ যেমন সম্প্রতি বসিরহাট -বাদুড়িয়ায় আইন -শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার নেপথ্যে ছিল ফেসবুকে এক কিশোরের ভুয়ো ছবি পোস্ট৷ ফেসবুকে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশ অনেককে গ্রেন্তারও করেছে৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে হয়েছে , ফেসবুকের নামে ফেকবুক চলছে৷ ঈদের দিন বাবাকে আল্লার সঙ্গে তুলনা করে ছবি পোস্ট করায় ফেসবুকেই ধর্মান্ধদের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল সঞ্চালক -অভিনেতা মীরকে৷ আবার থানা -পুলিশ -আদালতে অভিযোগ না করে ফেসবুকের মাধ্যমেই একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন অনেকে৷ যাঁরা ফেসবুক ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন , তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য , এ সব ছাড়াও প্রতিনিয়ত ফেসবুকে বহু মানুষের আচরণ যেন সালিশি সভার মতো৷

সবাই সব ব্যাপারে জানেন , সবাই সব কিছুরই বিশেষজ্ঞ৷ মনোবিদ অধ্যাপিকা নীলাঞ্জনা সান্যালের কথায় , ‘অসভ্যতার প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে৷ যার যা খুশি কদর্য ভাবে করে ফেলতে পারছেন৷ যে কোনও সংবেদনশীল মানুষের পক্ষেই ফেসবুকে বেশি দিন টেকা সম্ভব নয়৷ ’সিগারেট ছাড়া খুব সহজ৷ অনেক বার তা ছাড়া যায়৷ তেমনই ফেসবুক ছাড়াও খুব সহজ হয়ে উঠেছে বলে কেউ কেউ ঠাট্টাও অবশ্য করছেন৷ ডাক্তারির ছাত্রী বৈশালি বিশ্বাসের কথাই ধরা যাক৷ বছর খানেক দাঁতে দাঁত চেপে ফেসবুক থেকে সরে ছিলেন তিনি৷ সম্প্রতি আবার ফিরে এসেছেন৷ কেন ? বৈশালির জবাব , ‘আমরা বন্ধুরা মিলে সামাজিক অনেক কাজকর্ম করছি৷ সেটা সম্পর্কে মানুষকে অবগত করা ফেসবুক ছাড়া সম্ভব ছিল না৷ তাই এক রকম নিমরাজি হয়েই ফিরে আসতে হয়েছে৷ ’ এর পরেও অবশ্য আত্মমগ্ন এই সময়ে মইদুলদের মতো মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল