অনির্বাণ ঘোষ একেবারে গোড়ার দিকে, মাত্র চার সপ্তাহের ব্যবধানে যাঁরা কোভিশিল্ড টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের জন্য বুস্টার ডোজের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে ঠিকই। এর আরও কারণ, সম্প্রতি জার্মানি-সহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশে ফের প্রবল ভাবে ছড়াচ্ছে কোভিড। ফলে দেশে কিছু মহল থেকে বুস্টার ডোজের দাবি জোরালো ভাবে উঠেছে। তবে সরকারি স্তরে সেই সম্ভাবনার চেয়েও ঢের বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে- ৮০% দেশবাসীর সম্পূর্ণ টিকাকরণ।
কেননা, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, অতিমারি ঢিমে তালে চলতেই থাকবে। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো দেশজোড়া তৃতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা নস্যাৎ করলেও, করোনার জেরে প্রাণহানি ঠেকাতেই যত বেশি সম্ভব দেশবাসীকে দু'টি ডোজ টিকা দিয়ে দিতে চাইছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা। উদ্দেশ্য যতটা না সংক্রমণ ঠেকানো, তার চেয়ে অনেক বেশি আদতে আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া ঠেকানো।
এদিন ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের এক সদস্যও জানিয়েছেন, বুস্টার ডোজ নিয়ে কী নীতি নেওয়া হবে, তা চলতি মাসের মধ্যেই ঘোষণা করা হতে পারে। তবে তার আগে জোর দেওয়া হবে প্রাপ্তবয়স্কদের দু'ডোজ টিকাকরণ শেষ করার উপরেই। তাঁর ব্যাখ্যা, 'ভারতের অতিমারি পরিস্থিতির ভিত্তিতেই একটি সামগ্রিক টিকা নীতি গৃহীত হওয়া উচিত, অন্য দেশের পরিস্থিতির বিচারে নয়।'
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গত মাস দুয়েকের দৈনিক আক্রান্তের লেখচিত্র থেকে আঁচ করা হচ্ছে, তৃতীয় ঢেউ তোলপাড় করবে না। তাঁদের ব্যাখ্যা, প্রথম ঢেউয়ের পর যখন সংক্রমণের গ্রাফ কমে গিয়েছিল, এখন করোনা লেখচিত্র তার চেয়েও নীচে। তখন ৭ ফেব্রুয়ারি নাগাদ দেখা গিয়েছিল, এক সপ্তাহের গড় দৈনিক সংক্রমণ সর্বনিম্ন ১১,২০১ ছিল। তার পর দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে মে নাগাদ। কিন্তু এখন সেই সাপ্তাহিক রোজকার আক্রান্তের সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ১০,৫৫৬ (১৯ নভেম্বর)। এবং তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা যে সময়টায় করা হয়েছিল, সেই অক্টোবর-নভেম্বরেও টানা নিম্নগামী ধারাই বজায় রেখেছে কোভিড লেখচিত্র।
আইসিএমআরের মহামারীবিদ্যা ও সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান সমীরণ পণ্ডা 'এই সময়'কে ফোনে বলেন, 'দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েও দেখা গিয়েছিল, ৮০% শতাংশ সংক্রমণের ঘটনা মাত্র ১০টি রাজ্য থেকে। সেই প্রবণতাটা এখন আরও বেড়ে গিয়েছে। কেরালা ও উত্তর-পূর্বের কয়েকটি রাজ্য বাদে সর্বত্রই করোনার প্রকোপ অনেকটাই কম। বহু রাজ্যে সংখ্যাটা দৈনিক ১০০-রও নীচে। এ বার কোভিড-গ্রাফের যাবতীয় ওঠানামাটা হবে মূলত কয়েকটি রাজ্যভিত্তিক এবং কিছু ক্ষেত্রে একেবারে জেলাভিত্তিক।'
তিনি জানান, ইতিমধ্যে প্রায় ৩০% ভারতীয়ের দু' ডোজ টিকাকরণও হয়ে গিয়েছে, যা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া অনেকটাই ঠেকাবে। তাই এই মুহূর্তে আর দেশজোড়া তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। বুস্টার ডোজ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, 'এখনও পর্যন্ত দেশে যে বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ মিলছে, তার ভিত্তিতে বুস্টার ডোজের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।'
যদিও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা এ কথাও স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, করোনা এখনই চলে যাচ্ছে না দেশ থেকে। তাই গণটিকাকরণে জোর দিতে চাইছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ সৌগত ঘোষ বলেন, 'কয়েক জনের খুব ভালো সুরক্ষার চেয়েও বেশি জরুরি হলো সকলের একটা ন্যূনতম গড়পরতা সুরক্ষা। তাতে গোষ্ঠীবদ্ধ সুরক্ষা বা হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠবে তাড়াতাড়ি।'
একই সুর সমীরণের গলাতেও। তাঁর কথায়, '১২-১৬ সপ্তাহের ব্যবধানে কোভিশিল্ডের দু'টি ডোজে ইমিউনিটি সবচেয়ে ভালো তৈরি হয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার, প্রথম দিকে যে সব চিকিৎসা কর্মী ও প্রবীণ নাগরিক এই টিকা ৪-৬ সপ্তাহের ব্যবধানে নিয়েছিলেন, তাঁদের ইমিউনিটি খারাপ, এমনটা ভাবা ভুল। তাঁদের অ্যান্টিবডি কমে গিয়েছে বলে যে ইমিউনিটিও কমে গিয়েছে, সে আশঙ্কাও অমূলক। দীর্ঘমেয়াদি ইমিউনিটি টিকে থাকে স্মৃতিকোষ বা মেমরি সেলের দৌলতে পাওয়া সুরক্ষায়।'
তাই জনস্বাস্থ্যের নিরিখেই কম সংখ্যার মানুষকে বুস্টার ডোজ দেওয়ার চেয়ে আগে দেশের ৮০% মানুষকে দু'টি ডোজ দেওয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা। এ ব্যাপারে বাংলার স্বাস্থ্যকর্তারাও একমত। স্বাস্থ্যভবনের এক আধিকারিক বলেন, 'অতিমারির দাপট অনেক কমে এসেছে। সে জন্য একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ঝুঁকিমুক্ত করার চেয়েও বেশি জরুরি সামগ্রিক ভাবে জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি কমানো।'
কেননা, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, অতিমারি ঢিমে তালে চলতেই থাকবে। প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো দেশজোড়া তৃতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা নস্যাৎ করলেও, করোনার জেরে প্রাণহানি ঠেকাতেই যত বেশি সম্ভব দেশবাসীকে দু'টি ডোজ টিকা দিয়ে দিতে চাইছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা। উদ্দেশ্য যতটা না সংক্রমণ ঠেকানো, তার চেয়ে অনেক বেশি আদতে আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া ঠেকানো।
এদিন ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের এক সদস্যও জানিয়েছেন, বুস্টার ডোজ নিয়ে কী নীতি নেওয়া হবে, তা চলতি মাসের মধ্যেই ঘোষণা করা হতে পারে। তবে তার আগে জোর দেওয়া হবে প্রাপ্তবয়স্কদের দু'ডোজ টিকাকরণ শেষ করার উপরেই। তাঁর ব্যাখ্যা, 'ভারতের অতিমারি পরিস্থিতির ভিত্তিতেই একটি সামগ্রিক টিকা নীতি গৃহীত হওয়া উচিত, অন্য দেশের পরিস্থিতির বিচারে নয়।'
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গত মাস দুয়েকের দৈনিক আক্রান্তের লেখচিত্র থেকে আঁচ করা হচ্ছে, তৃতীয় ঢেউ তোলপাড় করবে না। তাঁদের ব্যাখ্যা, প্রথম ঢেউয়ের পর যখন সংক্রমণের গ্রাফ কমে গিয়েছিল, এখন করোনা লেখচিত্র তার চেয়েও নীচে। তখন ৭ ফেব্রুয়ারি নাগাদ দেখা গিয়েছিল, এক সপ্তাহের গড় দৈনিক সংক্রমণ সর্বনিম্ন ১১,২০১ ছিল। তার পর দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে মে নাগাদ। কিন্তু এখন সেই সাপ্তাহিক রোজকার আক্রান্তের সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ১০,৫৫৬ (১৯ নভেম্বর)। এবং তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা যে সময়টায় করা হয়েছিল, সেই অক্টোবর-নভেম্বরেও টানা নিম্নগামী ধারাই বজায় রেখেছে কোভিড লেখচিত্র।
আইসিএমআরের মহামারীবিদ্যা ও সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান সমীরণ পণ্ডা 'এই সময়'কে ফোনে বলেন, 'দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েও দেখা গিয়েছিল, ৮০% শতাংশ সংক্রমণের ঘটনা মাত্র ১০টি রাজ্য থেকে। সেই প্রবণতাটা এখন আরও বেড়ে গিয়েছে। কেরালা ও উত্তর-পূর্বের কয়েকটি রাজ্য বাদে সর্বত্রই করোনার প্রকোপ অনেকটাই কম। বহু রাজ্যে সংখ্যাটা দৈনিক ১০০-রও নীচে। এ বার কোভিড-গ্রাফের যাবতীয় ওঠানামাটা হবে মূলত কয়েকটি রাজ্যভিত্তিক এবং কিছু ক্ষেত্রে একেবারে জেলাভিত্তিক।'
তিনি জানান, ইতিমধ্যে প্রায় ৩০% ভারতীয়ের দু' ডোজ টিকাকরণও হয়ে গিয়েছে, যা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া অনেকটাই ঠেকাবে। তাই এই মুহূর্তে আর দেশজোড়া তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। বুস্টার ডোজ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, 'এখনও পর্যন্ত দেশে যে বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ মিলছে, তার ভিত্তিতে বুস্টার ডোজের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।'
যদিও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা এ কথাও স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, করোনা এখনই চলে যাচ্ছে না দেশ থেকে। তাই গণটিকাকরণে জোর দিতে চাইছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ সৌগত ঘোষ বলেন, 'কয়েক জনের খুব ভালো সুরক্ষার চেয়েও বেশি জরুরি হলো সকলের একটা ন্যূনতম গড়পরতা সুরক্ষা। তাতে গোষ্ঠীবদ্ধ সুরক্ষা বা হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠবে তাড়াতাড়ি।'
একই সুর সমীরণের গলাতেও। তাঁর কথায়, '১২-১৬ সপ্তাহের ব্যবধানে কোভিশিল্ডের দু'টি ডোজে ইমিউনিটি সবচেয়ে ভালো তৈরি হয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার, প্রথম দিকে যে সব চিকিৎসা কর্মী ও প্রবীণ নাগরিক এই টিকা ৪-৬ সপ্তাহের ব্যবধানে নিয়েছিলেন, তাঁদের ইমিউনিটি খারাপ, এমনটা ভাবা ভুল। তাঁদের অ্যান্টিবডি কমে গিয়েছে বলে যে ইমিউনিটিও কমে গিয়েছে, সে আশঙ্কাও অমূলক। দীর্ঘমেয়াদি ইমিউনিটি টিকে থাকে স্মৃতিকোষ বা মেমরি সেলের দৌলতে পাওয়া সুরক্ষায়।'
তাই জনস্বাস্থ্যের নিরিখেই কম সংখ্যার মানুষকে বুস্টার ডোজ দেওয়ার চেয়ে আগে দেশের ৮০% মানুষকে দু'টি ডোজ দেওয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা। এ ব্যাপারে বাংলার স্বাস্থ্যকর্তারাও একমত। স্বাস্থ্যভবনের এক আধিকারিক বলেন, 'অতিমারির দাপট অনেক কমে এসেছে। সে জন্য একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ঝুঁকিমুক্ত করার চেয়েও বেশি জরুরি সামগ্রিক ভাবে জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি কমানো।'