অ্যাপশহর

সাপে কাটার চিকিৎসায় আশা জাগিয়ে আসছে ট্যাবলেট

সাপে কাটার চিকিৎসায় আশার আলো। সামনে এসেছে 'ভ্যারেসপ্ল্যাডিব' নামে একটি ওষুধ। সাপে কাটার পর এই ট্যাবলেট বাড়িতেই খেয়ে নিলে তা বিষের বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করবে সঙ্গে সঙ্গে।

Authored byঅনির্বাণ ঘোষ | Ei Samay 22 Mar 2021, 11:25 am

হাইলাইটস

  • সামনে এসেছে 'ভ্যারেসপ্ল্যাডিব' নামে একটি ওষুধ
  • সাপে কাটার পর এই ট্যাবলেট বাড়িতেই খেয়ে নিলে তা বিষের বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করবে সঙ্গে সঙ্গে
  • ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে
EiSamay.Com snake
প্রতীকী ছবি
অনির্বাণ ঘোষ
এক ছোবলেই ছবি হওয়ার দিন কি ঘুচতে চলেছে? মিঠুন চক্রবর্তীর সংলাপ ব্রিগেডে সম্প্রতি রাজনৈতিক মাত্রা যোগ করলেও, আমজনতার কাছে ছোবল মানেই কিন্তু 'ছবি' হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ষোলো আনা। একটি গবেষণার হাত ধরে অবশ্য সেই আশঙ্কা কিছুটা দূর হওয়ার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে কলকাতায়।

সাপের কামড় খাওয়া সিংহভাগ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে হাসপাতালে না-পৌঁছানো, অথবা দেরিতে পৌঁছনোর জন্যই। কেননা, সপার্ঘাতের একমাত্র চিকিৎসা অ্যান্টি-স্নেক ভেনম বা এএসভি মেলার উপায় হাসপাতাল ছাড়া নেই। স্বাভাবিক কারণেই সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যাটা করোনাকালে, বিশেষত লকডাউনের সময় বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। কারণ, অধিকাংশ সাপে কাটার চিকিৎসাটাই শুরু হয়নি, অথবা এত দেরিতে শুরু হয়েছে যে তা মৃত্যু ঠেকাতে পারেনি। এই অবস্থায় সামনে এসেছে 'ভ্যারেসপ্ল্যাডিব' নামে একটি ওষুধ। সাপে কাটার পর এই ট্যাবলেট বাড়িতেই খেয়ে নিলে তা বিষের বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করবে সঙ্গে সঙ্গে। অচিরেই ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

তবে বিশেষজ্ঞরা এ-ও বলে রেখেছেন, এই ওষুধ কতটা কার্যকর হবে, তা বোঝা যাবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরেই। কিন্তু তার আগেই আশার আলো দেখা যাচ্ছে এই কারণেই যে, এই প্রথম হাসপাতালে পৌঁছে এএসভি দেওয়ার আগেই সাপে কাটার চিকিৎসা শুরু হওয়া সম্ভব। এই 'ওরাল' চিকিৎসার দিশা দেখাচ্ছে মার্কিন সংস্থা ওফিরেক্স ইনকর্পোরেশন। প্রথম পর্যায় ও দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপের পর এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু করতে যাচ্ছে তারা। ভ্যারেসপ্ল্যাডিবের ২৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট সব রকম সাপের বিষ সামলাতে কতটা কার্যকর, বোঝা যাবে তাতেই।

মার্কিন মুলুকে তিনটি কেন্দ্রের পাশাপাশি আপাতত ভারতের চারটি কেন্দ্রেও এই ট্রায়াল হবে। প্রকল্পটির ট্রায়াল ফেসিলিটেটর স্নেহেন্দু কোনার জানান, পূর্বাঞ্চলের একমাত্র কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল। ৭২ জনের উপর হবে প্রাথমিক ট্রায়াল। প্রথাগত চিকিৎসার পাশাপাশি এর মধ্যে ৩৬ জন পাবেন প্লেসিবো (যার ঔষধিগুণ নেই) এবং বাকি ৩৬ জন পাবেন ভ্যারেসপ্ল্যাডিব। চিকিৎসা চলাকালীন প্রতি পদে রক্তপরীক্ষা করে দেখা হবে, কতটা বিষকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম এই ওরাল ওষুধ। তার পর হবে তুলনামূলক বিশ্লেষণ। তিনি বলেন, 'ন্যাশনালের কথা ভাবা হয়েছে এখানকার গবেষণা পরিকাঠামো ও সর্পদষ্ট রোগীর সংখ্যা দেখে।'

জুনেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের শিখরে বঙ্গ?

এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীন সর্পাঘাত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রধান চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার বলেন, 'খুব ভালো প্রয়াস। যদি ট্রায়ালে দেখা যায়, ওষুধটার এফিকেসি বা কার্যকারিতা বেশ ভালো, তা হলে বাজারজাত হওয়ার পর বহু প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে। তবে আমাদের দেশে যে কোনও ট্রায়াল বা গবেষণামূলক কাজের বড় বাধা হল আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা ও লালফিতের ফাঁস। সেটা না-হলেই মঙ্গল।' সোসাইটি ফর নেচার কনজার্ভেশন রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিটি এনগেজমেন্টের এগজিকিউটিভ সদস্য, সরিসৃপ বিশেষজ্ঞ বিশাল সাঁতরার সংযোজন, 'ওষুধটা যেহেতু ওরাল, তাই কত তাড়াতাড়ি তা রক্তে মিশে গিয়ে সাপের বিষকে প্রশমিত করছে, সেটাই দেখার।'

তবে এখানেও প্রশ্ন থাকছে। ভারতে যে চারটি সাপের কামড়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান, তাদের বলা হয় বিগ ফোর। এখন যে পলিভ্যালেন্ট এএসভি ব্যবহার করা হয়, তা চার বিষধরের কামড়েই সমান ভাবে কাজে দেয় কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে বিশেষজ্ঞদের মনে।

প্রকল্পের মুখ্য গবেষক, ন্যাশনালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ট্রায়াল শুরু হওয়াটা এখন সময়ের অপেক্ষা। যদিও পার্থপ্রতিম বলছেন, 'আসল অপেক্ষা হলো ন্যাশনালের এথিক্স কমিটির সম্মতিটা পেয়ে যাওয়া। তা হলেই অভিনব কাজটা শুরু করে দিতে পারব।'

টাটকা ভিডিয়ো খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন এই সময় ডিজিটালের YouTube পেজে। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।
লেখকের সম্পর্কে জানুন
অনির্বাণ ঘোষ

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল