অ্যাপশহর

এনআইএর হাত শক্ত করে রাজ্যকে উপেক্ষা

একই প্রস্তাব ২০১২ সালে ন্যাশনাল কাউন্টার টেররজিম সেন্টার (এনসিটিসি) গঠনের আগেও দেওয়া হয়েছিল৷

EiSamay.Com 24 Dec 2016, 9:30 am
চিত্রদীপ চক্রবর্তী ও অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়
EiSamay.Com more power toi be vested in the hands of nia
এনআইএর হাত শক্ত করে রাজ্যকে উপেক্ষা

একই প্রস্তাব ২০১২ সালে ন্যাশনাল কাউন্টার টেররজিম সেন্টার (এনসিটিসি) গঠনের আগেও দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্ত্ত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সেই প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী৷ মূলত তাঁর উদ্যোগেই সোজাসুজি না-হলেও ঘুরপথে এ বার এনআইএ-র হাতে বেশি ক্ষমতা তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক৷ সূত্রের খবর, এনসিটিসি-র মতোই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক চাইছে, এর পর থেকে দেশের কোনও রাজ্যে তল্লাশি চালাতে গেলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশ এবং রাজ্য সরকারকে না-জানিয়ে তদন্ত করা এবং প্রয়োজনে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার পূর্ণ ক্ষমতা এনআইএ-র হাতে তুলে দিতে৷

বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশ কিছু রাজ্যে এই বিষয় নিয়ে নতুন করে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত তৈরি হতে পারে৷ কারণ আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভাবেই রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত৷ ২০১৪ সালের অক্টোবরে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে এনআইএ কর্তারা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা এই তদন্তের দায়িত্ব নিচ্ছেন৷ বর্ধমান থানায় দায়ের করা রাজ্য পুলিশের মামলায় প্রেক্ষিতেই শুরু হয় তাঁদের তদন্ত৷ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী৷ বিতর্ক শুরু হয়েছিল এ রাজ্যের রাজনৈতিক স্তরেও৷
২০১১ সালে ভবানীপুর থানায় দায়ের করা একটি অপহরণের হুমকির মামলা দিয়ে এ রাজ্যে প্রথম কোনও ঘটনার তদন্ত শুরু করে এনআইএ৷ ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সেই মামলার তদন্ত শুরু হলেও তাতে তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি৷
তার পর এ রাজ্যে এনআইএ-র তত্পরতা যেমন বেড়েছে, ঠিক তেমনই তারা গড়ে তুলেছে নিজেদের পরিকাঠামো৷ পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যেই নিজেদের থানা এবং বিশেষ আদালত গঠন করে ফেলেছে এই কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ কিন্ত্ত খাগড়াগড় নিয়ে রাজ্য যে তাদের পুরোনো রাগ ধুয়ে ফেলেনি তার প্রমাণও পাওয়া যায় কয়েকমাস আগে৷ বিস্ফোরণের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংস্থা চার্জশিট জমা দিয়ে দিলেও কলকাতা পুলিশের এসটিএফ অভিযুক্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেয়৷ শুক্রবারই সেই মামলায় ব্যাঙ্কশাল আদালতে চার্জশিটও জমা দিয়েছে কলকাতা পুলিশ৷ যেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে৷

মন্ত্রক সূত্রের দাবি, দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এনআইকে এখন শুধু সন্ত্রাসমূলক ঘটনার তদন্তের বেড়াজালে আটকে না-রেখে তাদের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তারা৷ এমনকী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং নিজেও চাইছেন এনআইএ আরও বেশি শক্তিশালী হোক এবং দেশে জঙ্গি হামলার তদন্তের বাইরে নিজেদের পরিধি এবং গতিবিধি আরও বিস্তৃত করুক৷ এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের শীর্ষ আমলাদের সঙ্গে এনআইএ-র কর্তাদের এক দফা আলোচনাও হয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷

ঠিক এই কারণে এর আগে বাতিল হয়ে গিয়েছিলো এনসিটিসির ভাবনা৷ ২০১২ সালে ইউপিএ-২ সরকারের পক্ষ থেকে তত্কালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম এই ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার বা এনসিটিসি গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছিলেন৷ সেই সময় চিদম্বরমের ঠিক বিপরীত প্রান্তে থেকে ক্ষুব্ধ নরেন্দ্র মোদী চিঠি লিখেছিলেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে৷ রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে এনসিটিসি এই অজুহাতে নরেন্দ্র মোদীকে সেইসময় অনেকেই সমর্থন করেছিলেন৷ সামগ্রিক বিরোধিতায় এরপরে জল পড়ে যায় এনসিটিসি-র গঠনে৷ প্রায় পাঁচ বছর পরে আবার এনআইকে আরও বেশি ক্ষমতা প্রদানকে কেন্দ্র করে দেশের বেশ কিছু রাজ্যে নতুন করে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত শুরু হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হতেও পারে বলে মনে করছেন অনেকে৷

২০০৮ সালে মুম্বই হামলার পরে সংসদে একটি বিল পাশ করে তত্কালীন ইউপিএ ১ সরকার৷ তারপরে তত্কালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের সম্মতিতে ওই বিলে স্বাক্ষর হয় এবং ২০০৯ সালে গঠিত হয় এনআইএ৷ এর পরে একবার এনআইএ আইন সংশোধন হয়েছে৷ যখন থেকে জাল নোটের ব্যবসাকে সন্ত্রাসবাদী কাজ হিসেবে ধরা শুরু করেছে, তখন থেকেই বিষয়টি এনআইএ-র পরিধিতে আসে৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল