অ্যাপশহর

টেমসের দেড়শো বছর পরে গঙ্গা মন্থনে মেট্রো

তার প্রায় দেড়শো বছর পরে আবার একটা ইতিহাস তৈরি হতে চলেছে৷ এবার জায়গার নাম কলকাতা৷

EiSamay.Com 20 Feb 2017, 7:41 am
এই সময় : সেটা ১৮৭০ সাল৷ লন্ডনে মেট্রো রেল চালু করার জন্য টেমসের তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ কাটা শুরু করেছিলেন মহারানি ভিক্টোরিয়ার ইঞ্জিনিয়ররা৷ পৃথিবীর ইতিহাসে নদীর তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ রেলপথ সেটাই প্রথম৷ তার প্রায় দেড়শো বছর পরে আবার একটা ইতিহাস তৈরি হতে চলেছে৷ এবার জায়গার নাম কলকাতা৷ ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার নদীর তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ কেটে রেললাইন পাতার কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হচ্ছে ২১ ফেব্রুয়ারি৷ সৌজন্যে , ইস্ট -ওয়েস্ট মেট্রো৷
EiSamay.Com metro tunnel below the river ganga
টেমসের দেড়শো বছর পরে গঙ্গা মন্থনে মেট্রো


হাওড়া ময়দান থেকে যে টানেল বোরিং মেশিন মাটির তলা দিয়ে জোড়া সুড়ঙ্গ কাটতে কাটতে হাওড়া স্টেশনের ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত পৌঁছেছে , সেটাই আগামিকাল , মঙ্গলবার গঙ্গার তলায় প্রথমবার ঢুকবে৷ এদেশে মেট্রোর ক্ষেত্রে তো বটেই , ভারতের সামগ্রিক রেল ইতিহাসেই তা প্রথম৷ তাই এই দিনটি ইস্ট -ওয়েস্ট মেট্রোর আধিকারিক ও কর্মীদের কাছে অবশ্যই বিশেষ৷ একই সঙ্গে হাওড়া ও কলকাতাবাসীর কাছেও দিনটি গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ ১৯৪৩ সালে দুই শহরকে সড়কপথে জুড়েছিল হাওড়া ব্রিজ৷ তার সাত দশক পর ফের দুই শহর বাঁধা পড়ছে পাতালপথে৷

শুধুই ইস্ট -ওয়েস্ট মেট্রো নয় , একই সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের কাছেও এই দিনটি নিঃসন্দেহে ‘রেড লেটার ডে ’৷ ২০০৯ সালে ফেজ ওয়ান ও ২০১০ -এ ফেজ টু-র কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই নানা কারণে এই প্রকল্পর পদে পদে থমকেছে৷ এর মধ্যে প্রায় বছর তিনেক নষ্ট হয়েছে গঙ্গার নীচে টানেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে৷ অবশেষে সব জট কাটিয়ে ভূগর্ভে নামতে তৈরি জার্মান প্রযুক্তিতে তৈরি ‘টানেল বোরিং মেশিন ’৷

ইস্ট -ওয়েস্ট মেট্রোর পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বিশ্বনাথ দেওয়ানজির কথায় , ‘সুড়ঙ্গ তৈরির কাজটা যন্ত্রের মধ্যেই সম্পন্ন হয়৷ এই যন্ত্র যতটা মাটি কাটে , তার চেয়ে কিছুটা ছোট মাপের সুড়ঙ্গ তৈরি করে৷ তাই , পিছিয়ে আসার কোনও উপায় নেই৷ ’ গঙ্গার নীচ দিয়ে টানেল কাটতে যা কিছু যন্ত্র লাগছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই যন্ত্রই৷ এর দেখভাল করতে ২৪ ঘণ্টা তিন শিফটে ১২০ জন ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে৷ মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে , এই যন্ত্র চালাতে ৬০০০ কিলোভোল্ট বিদ্যুত্ লাগে৷ এই কারণেই নিজস্ব বিশেষ জেনারেটর সেটের মাধ্যমে যন্ত্রকে বিদ্যুত্ সরবরাহ করার ব্যবস্থা রাখতে হয়েছে৷ এই যন্ত্র প্রতিদিন গড়ে ১০ মিটার করে মাটি কেটে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ শেষ করতে পারে৷ হাওড়া স্টেশনের ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পশ্চিম প্রান্তের যে অংশ থেকে মাটি কাটা শুরু হবে , সেখান থেকে গঙ্গার পাড় পর্যন্ত দূরত্ব ১২০ মিটার৷
গঙ্গায় পৌঁছনোর পর আরও ৫২০ মিটার পার করে তবে কলকাতায় এসে পৌঁছতে হবে যন্ত্রকে৷ এই ৬৪০ মিটার পথ পার করতে প্রায় সাড়ে তিন মাস সময় লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ সুড়ঙ্গটি হাওড়া স্টেশন চত্বরের নীচ দিয়ে গঙ্গা -অভিমুখে এগোবে৷ ইতিমধ্যেই নানা পরীক্ষা -নিরীক্ষার দ্বারা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে , টানেল কাটার সময় প্ল্যাটফর্ম-সহ উপরের কোনও নির্মাণের ক্ষতি হবে না৷ হাওড়া স্টেশনের যে অংশ দিয়ে টানেল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে , তার উপরে এবং কাছাকাছি রয়েছে রেলের বেশ কিছু হেরিটেজ বিল্ডিং৷

এদের অন্যতম হল ব্রিটিশ আমলে তৈরি ডিআরএম অফিস এবং খোদ হাওড়া স্টেশনের পুরোটাই৷ মার্চের তৃতীয় সন্তাহে যন্ত্রটির গঙ্গার নীচে প্রবেশ করার মুখে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা ভাবছেন ইস্ট -ওয়েস্ট মেট্রোর কর্তৃপক্ষ৷ ওই দিন হাজির থাকবেন এই প্রকল্পের বিশেষ দায়িত্বপ্রান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়৷ ভাবনা -চিন্তা চলছে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানোর৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পের অগ্রগতির পর্যালোচনা করছেন৷

প্রকল্পের গোটা অংশে একটি টানেলে আপ ও ডাউন লাইন বসলেও গঙ্গার নীচে থাকবে দু’টি টানেলই৷ একটি আপ ও একটি ডাউন৷ সেই কারণেই প্রতিটি টানেলকে মাত্র ৫ .৫ মিটার চওড়া করে তৈরি করা হচ্ছে৷ মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন , সুরক্ষার কারণেই এই সিদ্ধান্ত৷ বর্তমানে চালু মেট্রোয় টানেলে গাড়ি দাঁড়িয়ে গেলে অনেক সময় বিদ্যুত্ সংযোগ বন্ধ করে যাত্রীদের লাইন ধরে হাঁটিয়ে প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে হয়৷ সেই সময় , আপ ও ডাউন --- দু’টি লাইনই বন্ধ রাখতে হয়৷ কিন্ত্ত , নদীর নীচ দিয়ে টানেল হবে বলেই আপ ও ডাউনের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থা থাকছে৷ তবে , নদীর নীচে কোনও কারণে ট্রেন দাঁড়িয়ে গেলে এক ট্রেনের যাত্রীদের অন্য ট্রেনে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল