অ্যাপশহর

বকেয়া বিপুল টাকা, মোদীকে চিঠি মমতার

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসের জিএসটির ক্ষতিপূরণের টাকা ফেব্রুয়ারি মাসে সবে ছাড়া হয়েছে। এর ফলে সরকারি খরচ চালাতে অসুবিধা হচ্ছে। রাজ্যের অর্থ পরিচালন ব্যবস্থার উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

EiSamay.Com 21 Feb 2020, 1:27 pm
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যের বকেয়া পাওনার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্র টাকা না-দেওয়ায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে রাজ্য সরকার। অবিলম্বে বকেয়া পাওনাগণ্ডা মেটানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
EiSamay.Com mamata
মমতা ব্যানার্জি


বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসের জিএসটির ক্ষতিপূরণের টাকা ফেব্রুয়ারি মাসে সবে ছাড়া হয়েছে। এর ফলে সরকারি খরচ চালাতে অসুবিধা হচ্ছে। রাজ্যের অর্থ পরিচালন ব্যবস্থার উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যদিও জিএসটির ক্ষতিপূরণের টাকা সময়ে পাওয়াটা রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। সেই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় করের অংশ হিসেবে রাজ্যের যে টাকা প্রাপ্য, সেটাও সময়ে মেটানো হচ্ছে না। ২০১৯-’২০ সালে এই খাতে রাজ্যের পাওনা বাবদ মোট ১১,২১২ কোটি টাকা মেটায়নি কেন্দ্র। ২০১৭-’১৮ সালে বাজেটে কেন্দ্রীয় করের অংশ হিসেবে বাংলাকে যত টাকা দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল, পরবর্তীকালে তা আরও কমিয়ে দেওয়া হয়। গত দু’বছর ধরে মাসের পয়লা তারিখে এই টাকা ছেড়ে দিত কেন্দ্র। কিন্তু সেটা আচমকা বদলে দেওয়া হয়েছে। এখন ২০ তারিখ করে টাকা ছাড়া হচ্ছে। কেন্দ্র টাকা দিতে দেরি করায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে রাজ্য। কারণ, রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যেতে এবং প্রতিশ্রুতি পালনে মাসের শুরুতেই সবথেকে বেশি টাকা মেটাতে হয় রাজ্য সরকারকে। সে জন্য মাসের প্রথমে বেশি টাকা প্রয়োজন হয়। সে কথা মাথায় রেখে আগের মতো মাসের প্রথম দিনে টাকা ছেড়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পেও দিল্লির কাছে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে রাজ্যের। মূলত গরিবরাই এই সব প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে থাকে। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে যত দ্রুত সম্ভব এই সব প্রকল্পে রাজ্যের বকেয়া পাওনা মিটিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

বিশেষ অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন তহবিলে কেন্দ্রের কাছ থেকে বিপুল টাকার অনুদান পেয়ে থাকে রাজ্যগুলি। এই খাতে কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্যের বকেয়া পাওনার পরিমাণ প্রায় ২৩৩০ কোটি টাকা। সেই টাকা দিতেও টালবাহানা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার ফলে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া এলাকায় উন্নয়নের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ওই সব এলাকায় বসবাসকারী কয়েক কোটি অনগ্রসর মানুষকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার কাজও থমকে দাঁড়াচ্ছে।

চিঠিতে এই বলে মন্তব্য করা হয়েছে, গত পাঁচ বছর ধরে দেখে মনে হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার অতিমাত্রায় সেস এবং সারচার্জের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এটা খুবই উদ্বেগের যে, ২০১৪-’১৫ সালে যেখানে কেন্দ্রীয় কর রাজস্বের মাত্র ৬.১৭ শতাংশ আসতো সারচার্জ এবং সেস থেকে আসতো, সেটা ২০১৯-’২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮.৪ শতাংশ। এর কোনও ভাগ পায় না রাজ্য সরকার। এটাও রাজ্যের প্রতি একপ্রকার বঞ্চনা।

কেন্দ্র ও রাজ্যের সাংবিধানিক দায় ও দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে জানিয়েছেন, উভয়েরই সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। মানুষের প্রতিশ্রুতি পালনে উভয়েরই বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কেন্দ্রের কাছে ৫০ লক্ষ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা ছাড়াও বিগত বাম সরকারের রেখে যাওয়া ৩ লক্ষ কোটি টাকার দেনা শোধ করতে হচ্ছে রাজ্যকে। এর মধ্যেও ২০১৯-’২০ সালে রাজ্যের জিডিপি’র হার বেড়ে হয়েছে ১০.৪ শতাংশ। সেখানে জাতীয় জিডিপি ৫ শতাংশে নেমে গিয়েছে। শিল্পোৎপাদনের হারও বেড়েছে। রাজ্যের এই উন্নয়নের গতিতে অব্যাহত রাখতে বকেয়া টাকা অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল