অ্যাপশহর

ভাঙচুর বন্ধে তত্পর মমতা

সিএমআরআই হাসপাতালে ভাঙচুরের কড়া সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

EiSamay.Com 18 Feb 2017, 9:17 am
এই সময়: সিএমআরআই হাসপাতালে ভাঙচুরের কড়া সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই ধরনের বিধ্বংসী আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সরাসরি সাধারণ মানুষকেই ডাক দিয়েছেন মমতা৷ উন্নয়নের স্বার্থে রাজ্যকে ভাঙচুরের রাজনীতির ছোঁয়াচ থেকে মুক্ত করা যে আশু প্রয়োজন সে কথাও তিনি বারবার বলেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা, ভাঙচুরের রাজনীতির জন্যই রাজ্যে শিল্প তৈরি হয় না, চাকরিও তৈরি হয় না৷ এই ব্যাপারে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি সমেত বিরোধীদেরও চেতাবনি দিয়ে মমতা বলেন, ‘এতদিনকার ভেঙে দিন গুঁড়িয়ে দিন স্লোগানটা এ বার পাল্টে দিন৷ ভেঙে দিন, গুঁড়িয়ে দিন কথাটাকে কবরে পাঠান৷ বাংলাকে ভালো থাকতে দিন, বাংলার ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে ভালো থাকতে দিন৷’
EiSamay.Com mamata banerjee criticizes the cmri incident
ভাঙচুর বন্ধে তত্পর মমতা


এ দিন দুপুরে নিজের বিধানসভা এলাকায় হরিশ পার্কে ৬ লাখ ৮০ হাজার লিটার জল ধারণের ক্ষমতা সম্পন্ন বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের উদ্বোধন করেন ভবানীপুরের বিধায়ক মমতা৷ সেখানেই বাংলার উন্নয়নের পক্ষে সওয়াল করে আলাদা করে সিএমআরআইয়ের নাম না-করেও তিনি বলেন, ‘কী দরকার নার্সিং হোমে গিয়ে ঝগড়া করার, ভাঙচুর করার! ক্ষোভ থাকতেই পারে৷ কিন্ত্ত রাগ হল, আর হাসপাতালে ভাঙচুর করা হল, এটা কি! হাসপাতালে রোগী ভর্তির ক্ষমতা এক হাজার, আর দু’হাজার মানুষ এসে গেল, তখন কি হবে? এটা তো রোগীর পরিজনদের বুঝতে হবে৷ ইমার্জেন্সি পরিস্থিতি হলে মাটিতেই চিকিত্সা করতে হবে৷’ তবে শুধু ভাঙচুরের মানসিকতার সমালোচনা করেই থেমে যাননি মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেছেন, ‘আমি নার্সিংহোমগুলির সঙ্গে কথা বলব৷ যাতে সবকিছু ভালো করে চলে৷’

রীতিমতো দৃষ্টান্ত দিয়ে ভাঙচুরের অপসংস্কৃতি ঠেকানোর পক্ষে জোরদার সওয়াল করেন মমতা৷ তিনি বলেন, ‘সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব, এটা চলতে পারে না৷ স্বাস্থ্য পরিষেবায় কত দামি দামি জরুরি মেশিনপত্র রয়েছে৷ তা তৈরি করতে, হাতে পেতে অনেক সময় লাগে৷’ পাশাপাশি, রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার, বিশেষ করে সরকারি ক্ষেত্রে বাড়বাড়ন্তের কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি জানান, রাজ্যে গত ৫ বছরে বেডের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ হাজার বেড়েছে৷ পিজির মতো সরকারি হাসপাতালে শিশুদের হার্ট সাজারি হচ্ছে বিনা পয়সায়৷ তাঁর মন্তব্য, ‘ভাবতে পারেন এম আর আইয়ের মতো দামি পরীক্ষার সুযোগ মিলছে বিনা পয়সায়৷ যাঁরা ভাঙচুর করে ছবি তুলে বড় বড় নানা ভাষণ দিচ্ছেন, এটা দাও সেটা দাও বলছেন, তাঁদের বলব যাঁরা এতদিন ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরা এইসব কাজগুলো করেননি কেন?’ ওই প্রসঙ্গেই স্বাস্থ্য পরিষেবায় সামাজিক সূচকগুলিতে রাজ্যের উন্নতির খতিয়ান দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷

যদিও মমতার এই মন্তব্যের পাল্টা কটাক্ষ ভেসে এসেছে বিরোধী শিবির থেকে৷ সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে গান কালচার তৈরি করেছেন৷ আর তার মাধ্যমেই মস্তানি, তোলাবাজিতে শিল্প হিসাবে গড়ে তুলছেন৷ উনি তো নিজেই বলেন, রাজ্যে এখন কোনও শ্রম দিবস নষ্ট হয়না৷ তাহলে তো হই-হই করে শিল্প আসার কথা৷ তাহলে আসছে না কেন? আসলে উনি চপ, চানাচুর, তেলেভাজা, মেলা, আমোদকেই শিল্প হিসাবে মনে করেন৷’ কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষও বলেন, ‘রাজ্যে শিল্প আসছে না অনিশ্চিত অর্থনীতির কারণে৷ যেখানে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাওয়ার গ্রিডের একটি প্রকল্পকেই সুরক্ষা দিতে পারছে না রাজ্য, সেখানে বেসরকারি বিনিয়োগ আসবে কেন?’

তবে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যদি কোনও অভিযোগ থাকে, যথাস্থানে জানান৷ স্থানীয় স্তরে কথা বলুন৷ কাউকে ভাঙতে দেখলে আটকান৷’ বিরোধীদেরও এক হাত নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, ‘যারা ভাঙচুর করে লম্বা ভাষণ দিচ্ছেন, তাঁরা কেউ রয়েছেন দিল্লিতে, কেউ বা এখানে ক্ষমতায় ছিলেন৷ দিল্লিতে এমন কেউ কেউ বা এমন দল আছেন, যাঁদের কাজ হচ্ছে গুন্ডা লাগিয়ে, এজেন্সি লাগিয়ে বা টাকা ছড়িয়ে অন্য দল বা সরকারকে ফেলা৷’ এই প্রসঙ্গে আরও একবার কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে একহাত নিয়েছেন মমতা৷ তাঁর কথায়, ‘আজকে কালো নোটের ১০১ দিন৷ দেশটা এতদিন যা এগিয়েছিল, আটকে দিল৷ আমি নয় অর্থনীতিতে অজ্ঞ, মনমোহন সিংহ তো অর্থনীতিটা বোঝেন৷ তিনি বলেছেন, এটা কালো টাকা করার এক সংগঠিত অপপ্রয়াস৷’

কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে দমননীতি ও স্বৈরাচারের অভিযোগও এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এই ব্যাপারে রাজ্যে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির তত্পরতা বা শাসকদলের একের পর এক হেভিওয়েট নেতার গ্রেপ্তারির প্রসঙ্গও পরোক্ষে ছুঁয়ে গিয়েছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘মমতা কালো নোটের বিরুদ্ধে৷ তাই হাজারটা সিবিআই নিয়ে এস৷ আমিও বলছি, সিবিআইকে লেলিয়ে দাও৷ আমি যতদিন দেহে প্রাণ থাকবে মানুষের কথা বলব৷’

রাজ্যের পূর্বতন শাসকদল সম্পর্কে তাঁর চাঁচাছোলা মন্তব্য, ‘সিপিএম লস্ট কেস, কোনও ক্রেডিবিলিটি নেই৷ মানুষ এই দলকে অনেক সুযোগ দিয়েছিল৷ কিন্ত্ত এরা ৩৪ বছরেও কিছু করেনি৷ অনেক অন্যায় করেছেন, তা-ও জেলে পুরিনি, চুপচাপ থাকুন৷’ কংগ্রেস সম্পর্কে তাঁর ধারণা, ‘তুমি দিল্লি নিয়ে ছিলে, দিল্লি নিয়েই থাকাই তোমার ভালো, বাংলার দিকে যেন নজর কোরো না৷’

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল