প্রসেনজিৎ বেরা ও সঞ্জিৎ গোস্বামী, পুরুলিয়া
সম্মুখসমরে নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মধ্যিখানে রবি ঠাকুর। জয় শ্রীরাম ছেড়ে হঠাৎই 'গুরুদেব অমর রহে' ধ্বনি। মোদী বলছেন, 'বাংলায় চিত্ত কোনও কালেই ভয়শূন্য ছিল না। তৃণমূলের আমলে তো নয়ই।' মমতাও ছেড়ে কথা বলেননি। 'দাঙ্গাবাজ বিজেপির' উদ্দেশে রবীন্দ্রনাথ ধার করে বলেছেন, 'জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো।' তিনি এ-ও বলেছেন, 'আজ বিজেপির দাঙ্গা দেখে মনে হয় কবিগুরুকে জিজ্ঞেস করি, তুমি কি কেবলই ছবি?'
নরেন্দ্র মোদী রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে এলেই বাঙালির আবেগকে হাতিয়ার করেন। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার সৈনিক স্কুলের ময়দানে নির্বাচনী জনসভায় তিনি হাতিয়ার করলেন বাঙালির সব চেয়ে বড় আবেগকে। নির্বাচনী স্লোগানের ঢঙেই দু-দুবার জনতাকে দিয়ে 'গুরুদেব অমর রহে' বলালেন মোদী। মোদীর সভার ছাউনির বাইরে তখন লু বইছে। নাকে-মুখে কাপড়ে দিয়ে ছায়া খুঁজছেন জনতা। গরম হাওয়ার সঙ্গে বিপুল ভিড়ের কারণে উড়ছে ভয়ঙ্কর ধুলো। ঘনঘন উঠছে 'জয় শ্রীরাম। জয় জয় শ্রীরাম' ধ্বনি। সেই রাম-ধ্বনিকে চাপা দিয়ে মাইকে কখনও মুকুল রায়, কখন মনোজ টিগ্গা, কখনও বিশ্বপ্রিয় চৌধুরী মাইক্রোফোন নিয়ে 'ভারত মাতা কি জয়' স্লোগান দিচ্ছেন। জনতা বিপুল গর্জন করে পাল্টা 'জয়' বলছে। মাথায় গেরুয়া ফেট্টি পরা যুবকের দল মূল মঞ্চের সামনে থাকা তিনটি বড় ছাউনির বাইরে মাঠে ঘুরে ঘুরে 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান দিচ্ছেন।
এই আবহে সভায় এসেই মোদী জনতার উদ্দেশে বলেন, 'আজ গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী। আমি গুরুদেব অমর রহে বলছি। আপনারা দু-বার অমর রহে বলবেন।' মোদীর কথায় জনতা সাময়িক 'জয় শ্রীরাম' ছেড়ে দিয়ে গুরুদেবের উদ্দেশে 'অমর রহে। অমর রহে।' স্লোগান দেয়। জনতার এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া দেখেই মোদী বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গে এসে, এই পুরুলিয়া জেলায় এসে যে ভালবাসা পেয়েছে আমি অভিভূত। আমি এই ভালোবাসার প্রতিদান দেব। বিকাশের মাধ্যমে এই ভালোবাসা ফিরিয়ে দেব।'
কবির 'চিত্ত যেথা ভয় শূন্য…' এই লাইনগুলি প্রায়ই রাজনীতিবিদরা ব্যবহার করেন। এ দিন মোদী এই বাক্যগুলিতে কিছুটা হিন্দি মিশিয়ে বলেন, 'গুরুদেব বলেছিলেন, মন ভয়মুক্ত হো। মস্তক সম্মানসে উঁচা হো। কিন্তু এখানে কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তাঁরা গুরুদেবের এই আদর্শ মান্য করেনি। কমিউনিস্টরাও গুরুদেবের এই কথা শোনেনি। এখন তৃণমূলও গুরুদেবের এই শিক্ষাকে ভেঙে চুরচুর করে দিচ্ছে।' কেন তৃণমূল গুরুদেবের শিক্ষাকে ভেঙে চুরচুর করে দিচ্ছে? মোদীর ব্যাখ্যা, 'পশ্চিমবঙ্গে মানুষকে ভোট দিতে গেলে ভয় পেতে হয়। এখানে রাজনৈতিক প্রচার করতে গেলে হত্যা করা হয়। এখানে জয় শ্রীরাম বললে কিংবা জয় মা কালী বললে অথবা জয় মা দুর্গা বললে দিদি ভয় পেয়ে যান। যাঁরা এই কথা বলে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়।' মোদী এই রবীন্দ্র-বাণীকে হাতিয়ার করে বাঙালির আবগকে জয় করতে চাইলেও কিছুদিন আগেই রবীন্দ্রনাথ নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। গুজরাতের বিজেপি নেতার সেই মন্তব্য এখনও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে রয়েছে। মোদীর সভার আধঘণ্টা পরেই শিমুলিয়ার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একই কৌশল নিয়ে পাল্টা চাল দিয়েছেন। সারা দেশে 'বিজেপির দাঙ্গা' দেখে কবি বেঁচে থাকলে এখন রাখিবন্ধন করতেন বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। শিমুলিয়ার সভায় কবির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে মমতা বলেন, 'আজ রবীন্দ্রজয়ন্তী। এখন যদি রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকতেন তা হলে তিনি আজ হয়তো আবার রাখিবন্ধন করতেন। তাঁর ভাষাতেই বলি, জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো।'
সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও আবার রবীন্দ্র-বাণীকে হাতিয়ার করে রাজ্যে মেরুকরণের রাজনীতি সম্পর্কে জনতাকে সজাগ করতে চেয়েছেন। এ দিন টুইটারে রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের একাধিক রচনার অংশ তুলে ধরেছেন সূর্যকান্ত। যেখানে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, 'আমি হিন্দু, আমি মুসলমান। একথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেল। কিন্তু আমি মানুষ একথা কাহাকেও বলতে শুনি না। যারা মানুষ নয়, তারা হিন্দু হোক আর মুসলমান হোক। তাদের দিয়ে জগতের কোনও লাভ নাই।' প্রদেশ কংগ্রেস আবার রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে গিয়ে রাহুল গান্ধীর 'ন্যায়' প্রকল্পের প্রচার করেছে। কবির ছবি দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস রবীন্দ্রজয়ন্তীতে যে টুইট করেছে সেখানে কংগ্রেসে হাত সিম্বলের সঙ্গে রয়েছে 'এবার হবে ন্যায়' এই স্লোগানও। টুইটে লেখা রয়েছে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র।
সম্মুখসমরে নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মধ্যিখানে রবি ঠাকুর। জয় শ্রীরাম ছেড়ে হঠাৎই 'গুরুদেব অমর রহে' ধ্বনি। মোদী বলছেন, 'বাংলায় চিত্ত কোনও কালেই ভয়শূন্য ছিল না। তৃণমূলের আমলে তো নয়ই।' মমতাও ছেড়ে কথা বলেননি। 'দাঙ্গাবাজ বিজেপির' উদ্দেশে রবীন্দ্রনাথ ধার করে বলেছেন, 'জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো।' তিনি এ-ও বলেছেন, 'আজ বিজেপির দাঙ্গা দেখে মনে হয় কবিগুরুকে জিজ্ঞেস করি, তুমি কি কেবলই ছবি?'
নরেন্দ্র মোদী রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে এলেই বাঙালির আবেগকে হাতিয়ার করেন। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার সৈনিক স্কুলের ময়দানে নির্বাচনী জনসভায় তিনি হাতিয়ার করলেন বাঙালির সব চেয়ে বড় আবেগকে। নির্বাচনী স্লোগানের ঢঙেই দু-দুবার জনতাকে দিয়ে 'গুরুদেব অমর রহে' বলালেন মোদী। মোদীর সভার ছাউনির বাইরে তখন লু বইছে। নাকে-মুখে কাপড়ে দিয়ে ছায়া খুঁজছেন জনতা। গরম হাওয়ার সঙ্গে বিপুল ভিড়ের কারণে উড়ছে ভয়ঙ্কর ধুলো। ঘনঘন উঠছে 'জয় শ্রীরাম। জয় জয় শ্রীরাম' ধ্বনি। সেই রাম-ধ্বনিকে চাপা দিয়ে মাইকে কখনও মুকুল রায়, কখন মনোজ টিগ্গা, কখনও বিশ্বপ্রিয় চৌধুরী মাইক্রোফোন নিয়ে 'ভারত মাতা কি জয়' স্লোগান দিচ্ছেন। জনতা বিপুল গর্জন করে পাল্টা 'জয়' বলছে। মাথায় গেরুয়া ফেট্টি পরা যুবকের দল মূল মঞ্চের সামনে থাকা তিনটি বড় ছাউনির বাইরে মাঠে ঘুরে ঘুরে 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান দিচ্ছেন।
এই আবহে সভায় এসেই মোদী জনতার উদ্দেশে বলেন, 'আজ গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী। আমি গুরুদেব অমর রহে বলছি। আপনারা দু-বার অমর রহে বলবেন।' মোদীর কথায় জনতা সাময়িক 'জয় শ্রীরাম' ছেড়ে দিয়ে গুরুদেবের উদ্দেশে 'অমর রহে। অমর রহে।' স্লোগান দেয়। জনতার এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া দেখেই মোদী বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গে এসে, এই পুরুলিয়া জেলায় এসে যে ভালবাসা পেয়েছে আমি অভিভূত। আমি এই ভালোবাসার প্রতিদান দেব। বিকাশের মাধ্যমে এই ভালোবাসা ফিরিয়ে দেব।'
কবির 'চিত্ত যেথা ভয় শূন্য…' এই লাইনগুলি প্রায়ই রাজনীতিবিদরা ব্যবহার করেন। এ দিন মোদী এই বাক্যগুলিতে কিছুটা হিন্দি মিশিয়ে বলেন, 'গুরুদেব বলেছিলেন, মন ভয়মুক্ত হো। মস্তক সম্মানসে উঁচা হো। কিন্তু এখানে কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তাঁরা গুরুদেবের এই আদর্শ মান্য করেনি। কমিউনিস্টরাও গুরুদেবের এই কথা শোনেনি। এখন তৃণমূলও গুরুদেবের এই শিক্ষাকে ভেঙে চুরচুর করে দিচ্ছে।' কেন তৃণমূল গুরুদেবের শিক্ষাকে ভেঙে চুরচুর করে দিচ্ছে? মোদীর ব্যাখ্যা, 'পশ্চিমবঙ্গে মানুষকে ভোট দিতে গেলে ভয় পেতে হয়। এখানে রাজনৈতিক প্রচার করতে গেলে হত্যা করা হয়। এখানে জয় শ্রীরাম বললে কিংবা জয় মা কালী বললে অথবা জয় মা দুর্গা বললে দিদি ভয় পেয়ে যান। যাঁরা এই কথা বলে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়।' মোদী এই রবীন্দ্র-বাণীকে হাতিয়ার করে বাঙালির আবগকে জয় করতে চাইলেও কিছুদিন আগেই রবীন্দ্রনাথ নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। গুজরাতের বিজেপি নেতার সেই মন্তব্য এখনও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে রয়েছে। মোদীর সভার আধঘণ্টা পরেই শিমুলিয়ার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একই কৌশল নিয়ে পাল্টা চাল দিয়েছেন। সারা দেশে 'বিজেপির দাঙ্গা' দেখে কবি বেঁচে থাকলে এখন রাখিবন্ধন করতেন বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। শিমুলিয়ার সভায় কবির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে মমতা বলেন, 'আজ রবীন্দ্রজয়ন্তী। এখন যদি রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকতেন তা হলে তিনি আজ হয়তো আবার রাখিবন্ধন করতেন। তাঁর ভাষাতেই বলি, জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো।'
সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও আবার রবীন্দ্র-বাণীকে হাতিয়ার করে রাজ্যে মেরুকরণের রাজনীতি সম্পর্কে জনতাকে সজাগ করতে চেয়েছেন। এ দিন টুইটারে রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের একাধিক রচনার অংশ তুলে ধরেছেন সূর্যকান্ত। যেখানে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, 'আমি হিন্দু, আমি মুসলমান। একথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেল। কিন্তু আমি মানুষ একথা কাহাকেও বলতে শুনি না। যারা মানুষ নয়, তারা হিন্দু হোক আর মুসলমান হোক। তাদের দিয়ে জগতের কোনও লাভ নাই।' প্রদেশ কংগ্রেস আবার রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে গিয়ে রাহুল গান্ধীর 'ন্যায়' প্রকল্পের প্রচার করেছে। কবির ছবি দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস রবীন্দ্রজয়ন্তীতে যে টুইট করেছে সেখানে কংগ্রেসে হাত সিম্বলের সঙ্গে রয়েছে 'এবার হবে ন্যায়' এই স্লোগানও। টুইটে লেখা রয়েছে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র।