অ্যাপশহর

সচেতনতার অভাবেই যক্ষ্মার ঘুণ ফুসফুসে, উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যকর্তারাই

মাস গড়ালেও জ্বর আর কাশি সারছিল না ক্লাস থ্রি-র আয়ুষ্মান মিত্রের (নাম পরিবর্তিত)৷ দক্ষিণ কলকাতার নামজাদা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র সে৷ ব্রঙ্কাইটিসের চিকিত্‍সা করছিলেন স্থানীয় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ৷

EiSamay.Com 24 Mar 2017, 1:29 pm
এই সময়: মাস গড়ালেও জ্বর আর কাশি সারছিল না ক্লাস থ্রি-র আয়ুষ্মান মিত্রের (নাম পরিবর্তিত)৷ দক্ষিণ কলকাতার নামজাদা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র সে৷ ব্রঙ্কাইটিসের চিকিত্‍সা করছিলেন স্থানীয় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ৷ অথচ ঘুণাক্ষরেও কেউ ভাবতে পারেনি, উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারে৷ এ দিকে ছেলে ক্রমেই যেন শুকিয়ে যাচ্ছে৷ মাস দুয়েকের মাথায় যখন অসুখটা ধরা পড়ল, ততদিনে রোগ যথেষ্ট শিকড় ছড়িয়েছে তার ফুসফুসে৷
EiSamay.Com lack of awareness tb is increasing in city
সচেতনতার অভাবেই যক্ষ্মার ঘুণ ফুসফুসে, উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যকর্তারাই


হাওড়ার ক্লাস ফাইভের প্রিয়াংশু রায়ের (নাম পরিবর্তিত) আবার কাশি না, ছিল শুধুই জ্বর৷ টাইফয়েড থেকে শুরু করে ভাইরাল ফিভার- সব কিছুর চিকিত্‍সা হয়েছিল বেসরকারি ব্যাঙ্ককর্মীর একমাত্র ছেলের৷ কিন্ত্ত জ্বর আসা থামেনি৷ শেষে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ধরা পড়ে, তারও যক্ষ্মা হয়েছে৷ কেউ ভেবেই পায়নি, এমন পরিবারের ছেলের এহেন রোগ হতে পারে৷

অথচ আয়ুষ্মান বা প্রিয়াংশু কোনও বিক্ষিপ্ত নজির নয়৷ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যক্ষ্মাকে গরিবের রোগ ভাবার যে প্রবণতা রয়েছে আম জনমানসে, সেটাই কাল হয়েছিল দু’জনের ক্ষেত্রেই৷ বস্ত্তত এই কারণেই রোগ ধরা পড়তে দেরি হয়ে যায় অধিকাংশের ক্ষেত্রে৷ এবং সেটাকেই সবচেয়ে চিন্তার কারণ বলে মনে করছে স্বাস্থ্যমহল৷ আজ, শুক্রবার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের প্রাক্কালে চিকিত্‍সকরা জানাচ্ছেন, সচেতনতার এই অভাবের কারণেই আজও দেশের মধ্যে পয়লা নম্বর ঘাতক রোগ যক্ষ্মা এবং পরিসংখ্যান বলছে, আগের চেয়ে শিশু যক্ষ্মারোগীর সন্ধান ঢের বেশি মিলছে গত দু’-তিন বছরে৷
এক দশক আগেও যেখানে চার শতাংশের বেশি শিশু রোগীর সন্ধান মিলত না সেখানে এখন যক্ষ্মা আক্রান্তদের মধ্যে ৭-৯% ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে রোগীর বয়স ১২-র কম৷ ফলে স্বাস্থ্যকর্তাদের কপালের ভাঁজ ক্রমেই চওড়া হচ্ছে৷ রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা শান্তনু হালদার এর জন্য বড়দের সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন৷ তিনি বলেন,‘যক্ষ্মা ছোঁয়াচে রোগ৷ অথচ অনেকেই যক্ষ্মার সম্পূর্ণ চিকিত্‍সা করায় না৷ ফলে উপসর্গ তেমন প্রকট না-হলেও জীবাণুটা আদতে পুরো মরে না৷ শিশুদের দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে সেই জীবাণুই থাবা বসায় একরত্তিদের শরীরে৷’

স্বাস্থ্যভবনে কর্মরত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) যক্ষ্মা বিষয়ক উপদেষ্টা সঞ্জয় রাজবংশী জানান, এ দেশে যেহেতু প্রতি বছর প্রায় ২৮ লক্ষ মানুষ যক্ষ্মার শিকার হন, তাই এ রোগের জীবাণু ছড়িয়ে সর্বত্র৷ মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪০% মানুষ কখনও না কখনও যক্ষ্মার জীবাণুর সংস্পর্শে আসে৷ কিন্ত্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) পর্যাপ্ত থাকার জন্য তাঁর অসুখটা হয় না৷ আর যাদের ইমিউনিটি কম, বিশেষত শিশুরা, তারা সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ে৷ হু-র আর এক উপদেষ্টা শিলাজিত্‍ সরকারের কথায়,‘এত প্রচার করেও মানুষকে বোঝানো যাচ্ছে না যে যক্ষ্মার সঙ্গে রোগীর আর্থসামাজিক অবস্থার কোনও সম্পর্ক নেই৷ দু’সপ্তাহের বেশি কাশি বা জ্বর কিংবা দুটোই যদি থাকে, তা যক্ষ্মার সবচেয়ে বড় উপসর্গ৷’

হু-র ওই আধিকারিকরা বলেন,‘আরও একটি বিষয় রীতিমতো উদ্বেগের কারণ৷ দেশে অন্তত ১০ লক্ষ যক্ষ্মা আক্রান্ত মানুষের সম্পর্কে কোনও তথ্য মজুত নেই সরকারের কাছে৷ কারণ তাঁরা চিহ্নিতই নন৷’রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারাও জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ হলেও তার মাত্র অর্ধেক রোগীর তথ্যই মজুত রয়েছে স্বাস্থ্যভবনে৷ অথচ চিকিত্‍সকদের সন্দেহ, বাদবাকি অর্ধেক এই অচিহ্নিত রোগীকূলই ওষুধ প্রতিরোধী (মাল্টি-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট বা এমডিআর) যক্ষ্মা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী৷ তাঁরা নিজেরাও সকলে সুস্থ হন না, আবার জনসমাজেও সংক্রমণ ছড়ান৷ যক্ষ্মা নির্মূলকরণে মূল অন্তরাই এঁরাই৷ শিশুদের ফুসফুসেও যক্ষ্মা থাবা চওড়া করছে এদেরই মাধ্যমে৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল