অ্যাপশহর

হোয়াটসঅ্যাপে অভিভাবকদের ‘গ্র‌ুপ’ই চিন্তার কারণ

স্কুলের বাইরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে মায়েদের, কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাবাদের কূটকচালির দৃশ্য চেনা। কার বাচ্চা কতটা দুষ্টু, কোন দিদিমণির চরিত্র কেমনের মতো আলোচনা এখন স্কুলগেটের গণ্ডি ছাড়িয়ে ঢুকেছে বেডরুম-ড্রয়িংরুমেও।

EiSamay 25 Aug 2018, 12:12 pm

হাইলাইটস

  • স্কুলের বাইরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে মায়েদের, কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাবাদের কূটকচালির দৃশ্য চেনা।
  • কার বাচ্চা কতটা দুষ্টু, কোন দিদিমণির চরিত্র কেমনের মতো আলোচনা এখন স্কুলগেটের গণ্ডি ছাড়িয়ে ঢুকেছে বেডরুম-ড্রয়িংরুমেও।
  • সৌজন্যে হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুক। প্রায় সব স্কুলেই নানা ক্লাসের অভিভাবকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা, নোটস চালাচালির জন্য এমন শয়ে শয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্র‌ুপ বানিয়েছেন।
  • কিন্তু উদ্দেশ্য ছাপিয়ে সেখানে যা সব শেয়ার হচ্ছে, তা উদ্বেগ বাড়িয়েছে স্কুলগুলির।
EiSamay.Com Capture
জয় সাহা
বেহালার রিয়া (নাম পরিবর্তিত) স্কুলের বন্ধুর জন্মদিনে নিমন্ত্রণ পায় নিউ আলিপুরে। সবাই দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলে পড়ে। ক্লাস থ্রি-র রিয়া বন্ধুর বিশাল বাড়িতে গিয়ে বিপুল খেলনাপত্র দেখে একটু দুষ্টুমি করে ফেলে। রাতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্র‌ুপে একরত্তির রিয়ার দুষ্টুমি নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন সহপাঠীদের বাবা-মায়েরা। রিয়ার নাম ধরেই অনেকে বলতে থাকেন, সে 'ম্যানার্স' জানে না। বড়লোকের বাড়িতে গিয়ে এত 'হ্যাংলামি' করারই বা কী আছে সুলভ 'পরামর্শ' আসতে থাকে।

ক্লাসে একটু বেশি কথা বলে চতুর্থ শ্রেণির সায়ন। তাকে চুপ করাতে গিয়ে শিক্ষকদের কত বেগ পেতে হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা প্রথমে ছিল হালকা। কিন্তু কোনও এক ক্লাস টেস্টের সময়ও সায়ন এমন ব্যবহার করায় তার পাশে বসা বন্ধুটির মা রেগে আগুন। অন্য মায়েদের সঙ্গে জোট বেঁধে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ গ্র‌ুপে নিদান দেন, এর পর থেকে যেন কেউ সায়নের পাশে বসে ক্লাস না-করে। তাতে সায় দেন অন্য মায়েরাও। সায়নের মায়ের সঙ্গে সে দিন গভীর রাত পর্যন্ত গ্র‌ুপে ঝগড়া চলে অন্যদের। বেদম মারে অসুস্থ হয়ে পড়ে সায়ন।

স্কুলের বাইরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে মায়েদের, কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাবাদের কূটকচালির দৃশ্য চেনা। কার বাচ্চা কতটা দুষ্টু, কোন দিদিমণির চরিত্র কেমনের মতো আলোচনা এখন স্কুলগেটের গণ্ডি ছাড়িয়ে ঢুকেছে বেডরুম-ড্রয়িংরুমেও। সৌজন্যে হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুক। প্রায় সব স্কুলেই নানা ক্লাসের অভিভাবকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা, নোটস চালাচালির জন্য এমন শয়ে শয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্র‌ুপ বানিয়েছেন। কিন্তু উদ্দেশ্য ছাপিয়ে সেখানে যা সব শেয়ার হচ্ছে, তা উদ্বেগ বাড়িয়েছে স্কুলগুলির।

সেখানে 'বুলিং' অর্থাৎ সামাজিক ভাবে হেয় করা থেকে এমন নানা বিষয়ে আলোচনা চলছে, যা শিক্ষার পরিবেশের জন্য খুব একটা শ্রেয় নয় বলে মনে করছেন অনেকে। রিয়া আর সায়নের মতো এমন ঘটনা ঘটে চলেছে অনেকের সঙ্গেই। চিন্তা বাড়ছে বাবা-মায়েদের। চাপের শিকার হচ্ছে একরত্তি পড়ুয়ারা। এ সব নিয়ে চিন্তায় রয়েছে স্কুলগুলিও। পেরেন্টাল কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষের বক্তব্য, 'বাচ্চাদের ছোটখাটো সমস্যাগুলিতে বড়দের এত মতামত দেওয়ার প্রয়োজনটাই বা কোথায়? ওদের ব্যাপার ওরাই সামলাক। ওদের শৈশবটাকে এ ভাবে নষ্ট করে দেবেন না।'

অনেক ভুক্তভোগী অভিভাবক গ্র‌ুপ ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবলেও, তা করতে পারছেন না। কেন? রিয়ার মা নন্দিনী যেমন বলছেন, 'গ্র‌ুপ ছাড়িনি কারণ স্কুলে কী পড়ানো হচ্ছে, কী হোমওয়ার্ক দেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে তথ্য জানা যাবে না। অনেক স্কুলে এ সব জানানোর জন্য স্কুলই অ্যাপ, ওয়েবসাইট করেছে বলে শুনেছি। কিন্তু মেয়ের স্কুলে এমন কোনও ব্যবস্থা নেই। যে দিন হবে, সে দিনই গ্র‌ুপটা ছাড়ব।'

স্কুলগুলি মা-বাবাদের এই মানসিকতার বিরুদ্ধে। যেমন মডার্ন হাইস্কুলের অধ্যক্ষা দময়ন্তী মুখোপাধ্যায় বলছেন, 'এই সমস্যা দানবীয় আকার ধারণ করেছে। ছাত্রীদের ঝগড়ার পাশাপাশি আমাদের অনেক সময়ই বাবা-মায়েদের ঝগড়াও সামলাতে হচ্ছে। কেন হোমওয়ার্ক, ক্লাসনোট নেওয়ার জন্য এমন একটা গ্র‌ুপের দরকার পড়বে, সেটাও আমরা বুঝতে পারছি না। এতে বাচ্চাদের উপরেও তো খারাপ প্রভাব পড়ছে। ওরা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারছে না।' ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের সহ-অধ্যক্ষা কৃষ্ণকলি মুখোপাধ্যায় বলছেন, 'আমাদের নিজস্ব অ্যাপ আছে। সেখানে অভিভাবকরা ক্লাস এবং হোমওয়ার্ক সংক্রান্ত সব খবর পেয়ে যান। বাবা-মায়েদের নিয়ে যে ওয়ার্কশপ হয় সেখানে এই ব্যাপারটি নিয়ে বোঝানো হচ্ছে।' রামমোহন মিশন স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস বলেন, 'এই সমস্যায় অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করতে হবে। আমরা অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করব।'

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল