তাপস প্রামাণিক
অভিযোগ, শহরের অনেক সুইমিং পুলেই হাতুড়ে লাইফ সেভার দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। ডুবন্ত মানুষকে যাঁর জল থেকে টেনে তোলার কথা, তিনি জানেনই না, কী ভাবে উদ্ধার করতে হয়! মূলত খরচ বাঁচাতেই এই পথ ধরা হচ্ছে। আশঙ্কা, রবীন্দ্র সরোবরের (Rabindra Sarobar) মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যে কোনও সুইমিং পুলেও।
দীর্ঘদিন লাইফ সেভারের কাজ করছেন ভোলানাথ পাল। কলকাতা পুলিশের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের হয়ে ডুবুরির কাজও করেন। তাঁর আক্ষেপ, ''অনেক জায়গায় সাধারণ সাঁতারুকে দিয়ে লাইফ সেভারের কাজ করানো হয়। এতে ব্যয় কম হয়। আমাদের রাখলে তো সাত-আট হাজার টাকা খরচ।''
কলেজ স্কোয়্যার সুইমিং পুলে জলে ডুবে এক কিশোরের মৃত্যুর পর 'লাইফ সেভিং সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া' কে দিয়ে শহরের বিভিন্ন পুলের সমীক্ষা করায় কলকাতা পুরসভা। রিপোর্টে জানা যায়, সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে পরিকাঠামোর খামতি রয়েছে। অনেক জায়গায় প্রশিক্ষিত লাইফ সেভার নেই, থাকলেও কম। অনেক সেভার জলে না নেমে ডাঙায় বসে থাকেন। লাইফগার্ড চেয়ার থাকে না। ডুবন্ত মানুষকে উদ্ধারের মহড়া বছরে একবারও হয় না। পুলের সাজসরঞ্জামের অভাব। প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে ওষুধপত্রও অমিল। বিপদের সময়ে করণীয় কী, নোটিস বোর্ডে তা টাঙিয়ে রাখার কথা। অথচ বেশিরভাগ জায়গায় সেটুকুও নেই। অভাব সিসিটিভির। ২০১৭-র 'পুল সেফটি ম্যানুয়াল' মেনে চলছে না সুইমিং ক্লাবগুলি।
ওই রিপোর্টে সুপারিশ করা হয় - যাঁরা সাঁতার প্রশিক্ষণ নিতে আসবেন, তাঁদের কোনও রোগ আছে কি না, তা জানতে হবে। সুইমিং ক্লাবে একজন করে হেলথ অফিসার রাখতে হবে। পুরসভার এক শীর্ষকর্তা জানান, রিপোর্টটির ভিত্তিতে সুইমিং পুলগুলিকে নির্দেশিকা পাঠানো হয়। কিন্তু তারা সুপারিশ মেনে চলছে কি না, সেটি তলিয়ে দেখা হয়নি।
লাইফ সেভিং সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর অফ সুইমিং প্রদোষ সেন বলেন, ''সাধারণ সুইমিং পুলে দুর্ঘটনা কম হয়। যে সব জায়গায় পুকুরে সাঁতার শেখানো হয়, সেখানেই দুর্ঘটনাগুলি মূলত ঘটে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার খামতি রয়েছে অনেক জায়গায়। এ ব্যাপারে আর একটু সতর্কতা দরকার।''
কলেজ স্কোয়্যার সুইমিং ক্লাবের (College Square Swimming Club) সহ-সভাপতি দিলীপ মল্লিক বলেন, ''এখানে প্রশিক্ষকদের মধ্যে ছ'সাতজনের লাইফ সেভিং সার্টিফিকেট আছে। ক্লাবে ফার্স্ট-এইড বক্স আছে। সামনেই মেডিক্যাল কলেজ। তাই আলাদা করে ডাক্তার, অক্সিজেন সিলিন্ডার বা ওষুধপত্রের প্রয়োজন হয় না। সিসিটিভিতেও নজরদারি চলে।'' বিধান পার্ক সুইমিং কমপ্লেক্সের সম্পাদক সুভাষ ঘোষ বলেন, ''সব নিয়মই আমরা মানি।''
ঘাটতি যেখানে -
১) প্রশিক্ষণ প্রার্থীদের ফিটনেস পরীক্ষার সুযোগ নেই
২) লাইফ বয়া, দড়ি, অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্ট্রেচারের অভাব
৩) অনেক জায়গায় ট্রেনার কম
৪) হাতুড়ে লাইফ সেভার দিয়ে কাজ
৫) অনেক পুলে সিসিটিভি নেই
৬) উদ্ধারের মহড়া হয় না
৭) লাইফগার্ড চেয়ার থাকে না
৮) পুলের গভীরতা আন্দাজ করা যায় না