এই সময়: দলনেত্রী এবং দলের ছাত্রনেত্রী শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যে দিন কড়া বার্তা দিলেন, সে দিনই দুই মন্ত্রীর অনুগামীদের বিবাদে বন্ধ হয়ে গেল খাস কলকাতার তিন তিনটি কলেজ৷ ঘটনাচক্রে ওই তিনটি কলেজই একই ভবনে অবস্থিত৷ সন্ত্রাস, মারধর, বিশৃঙ্খলার এমন উদাহরণ উত্তর কলকাতার শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজে তৈরি হল, যার জন্য ওই ক্যাম্পাসের দিবা, প্রাতঃ এবং সান্ধ্য কলেজের কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা সম্মিলিত ভাবে ঠিক করলেন, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে ওই তিনটি কলেজ৷ নেপথ্যে তৃণমূল দল ও তাদের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির চেনা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব৷ ওই কলেজে গোলমাল এতটাই লাগাম ছাড়িয়েছে যে সান্ধ্য কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল অশ্বিনী কুমার রায়কে রাস্তায় ফেলে পর্যন্ত মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ৷ হামলাকারীদের ওই শিক্ষক যাতে চিনতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে দাগী আসামীদের মতো চোখে লঙ্কার গুড়ো ছিটিয়ে দেওয়া হয়৷ এক ছাত্রের মাথায় ১৭টি বিয়ারের বোতল ভাঙা হয়৷ তাঁর অবস্থাও বেশ সংবেদনশীল৷ দুটি ঘটনাই ২৪ অগস্ট রাতের৷ এরপর ২৫ তারিখ অর্থাত্ বৃহস্পতিবারও কলেজে গোলমাল অব্যহত ছিল৷ এই প্রেক্ষিতে তিনটি কলেজের কর্তৃপক্ষ শুক্রবার একটি কনভেনশনের ডাক দেন৷ সেখানে সকলে ঐক্যমতে পৌঁছন, যতদিন না গোলমাল থামছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে ততদিন বন্ধ থাকবে জয়পুরিয়া৷ তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা নন্দীতা চক্রবর্তীকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি৷ বদলে অন্য এক অধ্যাপক সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘৩১ অগস্ট পর্যন্ত কলেজে ইউনিভার্সিটির পরীক্ষার আসন পড়েছে৷ আমরা শুধু পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা রাখছি৷ ক্লাস বন্ধ থাকবে৷ ৩১ তারিখের পর কবে কলেজ খুলবে সেটা পরে ঠিক করা হবে৷’ কলেজ বন্ধ রাখার পাশাপাশি একই সঙ্গে নিরাপত্তা দাবি করে এ দিন শ্যামপুকুর থানায় দাবিপত্রও দাখিল করেছেন সকল শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী৷ ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিনহা সরকার
বলেন, ওরা আমাদের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন৷ আমরা সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করব৷
প্রহৃত ভাইস প্রিন্সিপ্যাল অসম্মানে পদ ছাড়তে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন৷ প্রাতঃ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষাও ইস্তফা পত্র পাঠিয়েছেন৷ সাম্প্রতিক অতীতে ছাত্র সংঘর্ষের জেরে কলেজ কর্তৃপক্ষ এমন কঠোর পদক্ষেপ করছে তার কোনও নজির নেই৷ স্বভাবতই রাজ্যের শিক্ষায় আরও একবার অভব্যতা, আশালীনতার কালো মেঘ জমে উঠেছে৷ অবশ্য এ দিনই গান্ধী মূর্তি পাদদেশ থেকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছেন, ‘কলেজগুলিকে ভালো রাখুন৷ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সকলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখুন৷ সামনে শিক্ষক দিবস সে দিন ছোটো ছোটো অনুষ্ঠান করে শিক্ষকদের সম্মান দিন৷’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘আমি ওই কলেজে ইউনিট ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছি৷’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি জয়া দত্ত বলেন, ‘শিক্ষকরা যা বলছেন, তা হলে অত্যন্ত নিন্দনীয়৷ প্রয়োজনে দলের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে ইউনিট ভেঙে দেওয়া হবে৷ শিক্ষকদের পাশে আছি৷’
ঘটনার সূত্রপাত, গত বুধবার সন্ধ্যেবেলা৷ সূত্রের খবর, ওই দিন টিএমসিপির কেন্দ্রীয় সমাবেশের জন্য একটি প্রচার সভা চালাচ্ছিলেন সান্ধ্য বিভাগের একদল ছাত্র৷ সে সময় টিএমসিপিরই আর এক গোষ্ঠী এবং সোনাগাছি এলাকার কিছু বহিরাগত কলেজে ঢুকে পড়ে৷ তাঁদের হাতে ছিল হকি স্টিক, সাইকেলের চেন, ভাঙা কাচের বোতল এবং পাথর৷ প্রচার সভাকে লক্ষ করে এলোপাথারি বোতল-পাথর ছুঁড়তে শুরু করা হয়৷ মুহূর্তের মধ্যে কলেজে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়৷ যে যে দিকে পারেন ছুটে যান৷ সন্দীপন দে নামে তৃণমূলের এক সিআরকে লক্ষ করে বোতল মারা শুরু হয়৷ সন্দীপন কোনও রকমে কলেজের তিনতলায় একটি বাথরুমে লুকিয়ে পড়েন৷ সন্দীপনের কথায়, ‘এরপর দেখি কলেজের ছাত্র রোহিত সোনকার, মণীশ সোনকার বিক্রম সিংয়ের নেতৃত্বে একদল ছেলে বোতল হাতে উপরে উঠে এল৷ বাথরুমের দরজা ভেঙে আমায় টেনে বের করে৷ সঙ্গে সঙ্গে ওরা আমার মাথায় পর পর প্রায় ১৭টি বিয়ারের বোতল ভাঙে৷’ সঙ্গে সঙ্গে ওই ছাত্রকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁর মাথায় চারটি, ডান হাতে পাঁচটি বা হাতে চারটি সেলাই পড়ে৷ অবশ্য সব অভিযোগ খণ্ডন করে রোহিত সোনকার বলেছেন, ‘প্রাক্তন ছাত্রদের যতক্ষণ না কলেজে ঢোকা আটকানো যাচ্ছে, ততক্ষণ এ ঝামেলা থাকবেই৷ ওরা টাকা নিয়ে ছাত্র ভর্তি করায়৷ আমরা প্রতিবাদ করেছি বলে আমাদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে৷’
যখন ওই গোলমাল চলছে, তখন ক্লাস নিচ্ছিলেন ওই কলেজের সান্ধ্য বিভাগের শিফট ইনচার্জ এবং ভাইস প্রিন্সিপ্যাল অশ্বিনীবাবু৷ চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়তেই তিনি ক্লাসরুম থেকে বেড়িয়ে আসেন৷ অশ্বিনীর কথায়, ‘গোটা কলেজে তখন কাচেরb টুকরো ছড়িয়ে৷ সিড়িতে চাপ চাপ রক্তের দাগ৷ একদল ছাত্র তখন ভয়ে স্টাফ রুমে লুকিয়ে৷ ওদেরকে রক্ষা করতে ছুটে যাই৷ গোটা ঘটনাটা লিখিত ভাবে কলেজ পরিচালন সমিতির প্রেসিডেন্টকে জানাই৷’ এরপর কলেজে ঝামেলা থামতে রাত ৯টা ৫০ নাগাদ বাড়ি ফিরবেন বলে অশ্বিনী বের হন৷ শোভাবাজার মোড়ে তাঁকে প্রথমে ধাক্কা মারে এক যুবক৷ সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যান তিনি৷ চোখ থেকে চশমা খুলে যায়৷ তিনি বলছেন, ‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার চোখে পেপার স্প্রে ছড়িয়ে দেওয়া হয়৷ তারপর চলে এলোপাথারি মার৷’ অভিমানী শিক্ষকের আক্ষেপ, ‘ওই পদে আমি আর থাকতে চাই না৷ ৩২ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি৷ প্রতিদিন এমন ঝামেলা নিয়ে এ ভাবে কলেজ চালানো অসম্ভব৷’
কলেজ সূত্রে খবর, শুধু ২৪ তারিখই নয়, গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার ঝামেলা হয়ে আসছে৷ এর নেপথ্যে রয়েছে রাজ্যের দুই মন্ত্রীর খেলা৷ প্রতিদিন সকালের ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে বিকেলের ইউনিয়নের ঝামেলা লেগেই থাকে৷ সন্ধ্যে বেলার কলেজে তৃণমূলের যে গোষ্ঠী ক্ষমতাসীন তাঁদের সরিয়ে কোনও রকমে কলেজের দখল নিতে চায় অন্য গোষ্ঠী৷ অভিযোগ তাঁরাই বার বার কলেজে লালবাগান, সোনাগাছি থেকে লোক ঢুকিয়ে গোলমাল করছে৷ কলেজে ছাত্র ভর্তি থেকে টাকা তোলা, দাদাগিরি এ সব নিয়ে নিত্য ঝামেলা লেগেই থাকে৷ এক জন রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা৷ অন্যজন ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে৷ জয়পুরিয়া কলেজে অস্থিরতা তৈরির জন্য ঘুরিয়ে কলেজ পরিচালন সমিতি থেকে শশী পাঁজাকে হটানোর দাবি জানিয়েছেন মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে৷ তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীরা এখন আগের মতো ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারেন না৷ তাহলে কলেজের পরিচালন সমিতির মাথায় কেন মন্ত্রীরা থাকবেন? আমি শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, রাজ্যের কোনও কলেজ গভর্নিং বডিতে যেন মন্ত্রীদের আর না রাখা হয়৷’ ঘটনা হল, জয়পুরিয়া কলেজের গভর্নিং বডির সরকারের মনোনীত প্রতিনিধি মন্ত্রী শশী পাঁজা৷ কলেজ পরিচালন সমিতি থেকে মন্ত্রীদের সরানোর দাবি জানিয়ে সাধন আসলে শশীকেই বেকায়দায় ফেলতে চাইছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ জয়পুরিয়া কলেজের ঘটনা সম্পর্কে সাধনের কৌশলী মন্তব্য, ‘কলেজে ঠিক কী ঘটেছে, জানি না৷ তবে যেরকমটা শুনছি, সেটা যদি ঠিক হয়, তাহলে খুবই দুঃখজনক ব্যাপার৷ কলেজ সামলানোর দায়িত্ব কলেজ প্রশাসনের৷ এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই৷’
মন্ত্রী শশী পাঁজার সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি৷ রাতে তাঁর মোবাইলে ফোন করা হলে এক ব্যক্তি বলেন, ‘ম্যাডাম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে রয়েছে৷ তাই এখন কথা বলতে পারেবন না৷’ শশী ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা প্রসূন ঘোষ দাবি করেছেন, তিনি ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না৷ তিনি বলেন, দু’দিন আগে ছাত্রদের মধ্যে একটা গণ্ডগোল হয়েছিল বলে শুনেছি৷ কিন্ত্ত আজ কী ঘটেছে, বলতে পারব না৷
বলেন, ওরা আমাদের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন৷ আমরা সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করব৷
প্রহৃত ভাইস প্রিন্সিপ্যাল অসম্মানে পদ ছাড়তে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন৷ প্রাতঃ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষাও ইস্তফা পত্র পাঠিয়েছেন৷ সাম্প্রতিক অতীতে ছাত্র সংঘর্ষের জেরে কলেজ কর্তৃপক্ষ এমন কঠোর পদক্ষেপ করছে তার কোনও নজির নেই৷ স্বভাবতই রাজ্যের শিক্ষায় আরও একবার অভব্যতা, আশালীনতার কালো মেঘ জমে উঠেছে৷ অবশ্য এ দিনই গান্ধী মূর্তি পাদদেশ থেকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছেন, ‘কলেজগুলিকে ভালো রাখুন৷ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সকলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখুন৷ সামনে শিক্ষক দিবস সে দিন ছোটো ছোটো অনুষ্ঠান করে শিক্ষকদের সম্মান দিন৷’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘আমি ওই কলেজে ইউনিট ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছি৷’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি জয়া দত্ত বলেন, ‘শিক্ষকরা যা বলছেন, তা হলে অত্যন্ত নিন্দনীয়৷ প্রয়োজনে দলের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে ইউনিট ভেঙে দেওয়া হবে৷ শিক্ষকদের পাশে আছি৷’
ঘটনার সূত্রপাত, গত বুধবার সন্ধ্যেবেলা৷ সূত্রের খবর, ওই দিন টিএমসিপির কেন্দ্রীয় সমাবেশের জন্য একটি প্রচার সভা চালাচ্ছিলেন সান্ধ্য বিভাগের একদল ছাত্র৷ সে সময় টিএমসিপিরই আর এক গোষ্ঠী এবং সোনাগাছি এলাকার কিছু বহিরাগত কলেজে ঢুকে পড়ে৷ তাঁদের হাতে ছিল হকি স্টিক, সাইকেলের চেন, ভাঙা কাচের বোতল এবং পাথর৷ প্রচার সভাকে লক্ষ করে এলোপাথারি বোতল-পাথর ছুঁড়তে শুরু করা হয়৷ মুহূর্তের মধ্যে কলেজে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়৷ যে যে দিকে পারেন ছুটে যান৷ সন্দীপন দে নামে তৃণমূলের এক সিআরকে লক্ষ করে বোতল মারা শুরু হয়৷ সন্দীপন কোনও রকমে কলেজের তিনতলায় একটি বাথরুমে লুকিয়ে পড়েন৷ সন্দীপনের কথায়, ‘এরপর দেখি কলেজের ছাত্র রোহিত সোনকার, মণীশ সোনকার বিক্রম সিংয়ের নেতৃত্বে একদল ছেলে বোতল হাতে উপরে উঠে এল৷ বাথরুমের দরজা ভেঙে আমায় টেনে বের করে৷ সঙ্গে সঙ্গে ওরা আমার মাথায় পর পর প্রায় ১৭টি বিয়ারের বোতল ভাঙে৷’ সঙ্গে সঙ্গে ওই ছাত্রকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁর মাথায় চারটি, ডান হাতে পাঁচটি বা হাতে চারটি সেলাই পড়ে৷ অবশ্য সব অভিযোগ খণ্ডন করে রোহিত সোনকার বলেছেন, ‘প্রাক্তন ছাত্রদের যতক্ষণ না কলেজে ঢোকা আটকানো যাচ্ছে, ততক্ষণ এ ঝামেলা থাকবেই৷ ওরা টাকা নিয়ে ছাত্র ভর্তি করায়৷ আমরা প্রতিবাদ করেছি বলে আমাদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে৷’
যখন ওই গোলমাল চলছে, তখন ক্লাস নিচ্ছিলেন ওই কলেজের সান্ধ্য বিভাগের শিফট ইনচার্জ এবং ভাইস প্রিন্সিপ্যাল অশ্বিনীবাবু৷ চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়তেই তিনি ক্লাসরুম থেকে বেড়িয়ে আসেন৷ অশ্বিনীর কথায়, ‘গোটা কলেজে তখন কাচেরb টুকরো ছড়িয়ে৷ সিড়িতে চাপ চাপ রক্তের দাগ৷ একদল ছাত্র তখন ভয়ে স্টাফ রুমে লুকিয়ে৷ ওদেরকে রক্ষা করতে ছুটে যাই৷ গোটা ঘটনাটা লিখিত ভাবে কলেজ পরিচালন সমিতির প্রেসিডেন্টকে জানাই৷’ এরপর কলেজে ঝামেলা থামতে রাত ৯টা ৫০ নাগাদ বাড়ি ফিরবেন বলে অশ্বিনী বের হন৷ শোভাবাজার মোড়ে তাঁকে প্রথমে ধাক্কা মারে এক যুবক৷ সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যান তিনি৷ চোখ থেকে চশমা খুলে যায়৷ তিনি বলছেন, ‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার চোখে পেপার স্প্রে ছড়িয়ে দেওয়া হয়৷ তারপর চলে এলোপাথারি মার৷’ অভিমানী শিক্ষকের আক্ষেপ, ‘ওই পদে আমি আর থাকতে চাই না৷ ৩২ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি৷ প্রতিদিন এমন ঝামেলা নিয়ে এ ভাবে কলেজ চালানো অসম্ভব৷’
কলেজ সূত্রে খবর, শুধু ২৪ তারিখই নয়, গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার ঝামেলা হয়ে আসছে৷ এর নেপথ্যে রয়েছে রাজ্যের দুই মন্ত্রীর খেলা৷ প্রতিদিন সকালের ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে বিকেলের ইউনিয়নের ঝামেলা লেগেই থাকে৷ সন্ধ্যে বেলার কলেজে তৃণমূলের যে গোষ্ঠী ক্ষমতাসীন তাঁদের সরিয়ে কোনও রকমে কলেজের দখল নিতে চায় অন্য গোষ্ঠী৷ অভিযোগ তাঁরাই বার বার কলেজে লালবাগান, সোনাগাছি থেকে লোক ঢুকিয়ে গোলমাল করছে৷ কলেজে ছাত্র ভর্তি থেকে টাকা তোলা, দাদাগিরি এ সব নিয়ে নিত্য ঝামেলা লেগেই থাকে৷ এক জন রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা৷ অন্যজন ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে৷ জয়পুরিয়া কলেজে অস্থিরতা তৈরির জন্য ঘুরিয়ে কলেজ পরিচালন সমিতি থেকে শশী পাঁজাকে হটানোর দাবি জানিয়েছেন মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে৷ তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীরা এখন আগের মতো ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারেন না৷ তাহলে কলেজের পরিচালন সমিতির মাথায় কেন মন্ত্রীরা থাকবেন? আমি শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, রাজ্যের কোনও কলেজ গভর্নিং বডিতে যেন মন্ত্রীদের আর না রাখা হয়৷’ ঘটনা হল, জয়পুরিয়া কলেজের গভর্নিং বডির সরকারের মনোনীত প্রতিনিধি মন্ত্রী শশী পাঁজা৷ কলেজ পরিচালন সমিতি থেকে মন্ত্রীদের সরানোর দাবি জানিয়ে সাধন আসলে শশীকেই বেকায়দায় ফেলতে চাইছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ জয়পুরিয়া কলেজের ঘটনা সম্পর্কে সাধনের কৌশলী মন্তব্য, ‘কলেজে ঠিক কী ঘটেছে, জানি না৷ তবে যেরকমটা শুনছি, সেটা যদি ঠিক হয়, তাহলে খুবই দুঃখজনক ব্যাপার৷ কলেজ সামলানোর দায়িত্ব কলেজ প্রশাসনের৷ এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই৷’
মন্ত্রী শশী পাঁজার সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি৷ রাতে তাঁর মোবাইলে ফোন করা হলে এক ব্যক্তি বলেন, ‘ম্যাডাম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে রয়েছে৷ তাই এখন কথা বলতে পারেবন না৷’ শশী ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা প্রসূন ঘোষ দাবি করেছেন, তিনি ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না৷ তিনি বলেন, দু’দিন আগে ছাত্রদের মধ্যে একটা গণ্ডগোল হয়েছিল বলে শুনেছি৷ কিন্ত্ত আজ কী ঘটেছে, বলতে পারব না৷