অ্যাপশহর

প্রকাশের সঙ্গে কথা নয়, উপাচার্যদের বারণ পার্থর

ডিজিটাল অর্থনীতি নিয়ে জনসমাজে সচেতনতা তৈরি করতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ব্যবহার করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি৷

EiSamay.Com 8 Dec 2016, 9:27 am
এই সময়: নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ বার রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে জড়িয়ে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ আজ, বৃহস্পতিবার ডিজিটাল অর্থনীতির প্রয়োগ নিয়ে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষা সচিবদের নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক ডেকেছেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর৷ সেই বৈঠকে এ রাজ্যের উপাচার্যদের যোগ দিতে সরসরি বারণ করে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, যা নিয়ে ফের দ্বৈরথে কেন্দ্র-রাজ্য সমীকরণ৷
EiSamay.Com education minister partha chatterjee orders all vcs of west bengal not to attend ugc meeting
প্রকাশের সঙ্গে কথা নয়, উপাচার্যদের বারণ পার্থর


ডিজিটাল অর্থনীতি নিয়ে জনসমাজে সচেতনতা তৈরি করতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ব্যবহার করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি৷ সেই কারণ আজ, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকর৷ কিন্ত্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই বৈঠকে রাজ্যের উপাচার্যদের যোগ দিতে বারণ করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ এ দিন পার্থ বলেন, ‘উপাচার্যদের ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই৷ কোথাও পরীক্ষা চলছে কোথাও ভোটের প্রস্ত্ততি চলছে৷ এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কোনও বৈঠক করার দরকার নেই৷’

নোট বাতিল ইস্যুতে দেশের প্রায় সব বিরোধী দলই যখন রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে, ঠিক তখন ইউজিসিকে ব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকারের এ হেন পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক ছিলই৷ কিন্ত্ত নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে সরব হওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদী স্বরকে আরও তীব্র করার প্রয়াস নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বৈঠক কার্যত ‘বয়কট’-এর ডাক দিয়ে উল্টো তরজায় জড়িয়েছেন পার্থও৷ অনেকেরই প্রশ্ন, শিক্ষা কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ বিষয়, তাই এ ভাবে উপাচার্যদের ভিডিয়ো কনফারেন্সে যোগ না-দেওয়ার ফতোয়ায় আখেরে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ই৷ রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় বৈঠকে যোগ দেয়নি এই অভিযোগ তুলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে যদি ইউজিসি কোনও ব্যবস্থা নেয় তা হলে উপাচার্যরা কার দ্বারস্থ হবেন এ নিয়েও ঘোর সংশয় তৈরি হয়েছে শিক্ষামহলে৷

কিন্ত্ত অনেকেই বিষয়টিকে শুধুমাত্র শিক্ষাস্তরে আটকে রাখতে চাইছেন না৷ নোট বাতিল হওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষের হয়রানির প্রশ্নে যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রসার ঘটাতে চাইছেন সেই প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ মমতা আগেই নিজের আমলা-অফিসারদের জানিয়ে রেখেছেন, রাজ্যকে না জানিয়ে কোনও চিঠির জবাব অথবা রিপোর্ট পাঠানো যাবে না৷ এমনকী দিল্লির নির্দেশ মানার ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের ছাড়পত্র প্রয়োজন বলে ক’দিন আগেই আমলাদের এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷

রাজ্যের নানা প্রান্তে সেনার তল্লাশি নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যেভাবে তিনি সরব হয়েছেন, তাঁর বিমান-বিভ্রাট নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে লোকসভা ও রাজ্যসভায় তার চেয়েও বেশি সরব ছিলেন মমতার সাংসদরা৷ এর আগেও কেন্দ্রীয় সরকারের বহু অনুষ্ঠান যেমন, শিক্ষক দিবসে স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য মোদীর ভাষণ, বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিবস উদযাপনের মতো উদ্যোগ নিয়ে নিস্পৃহ থেকেছে রাজ্য সরকার৷ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনানোর জন্য রাজ্যের তরফে কোনও উদ্যোগ যেমন নেওয়া হয়নি, ঠিক তেমনই তা না-করার জন্য অতীতে কোনও বার্তাও দেওয়া হয়নি৷ কিন্ত্ত নোট বাতিল ইস্যুতে মোদীর একেবারে বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সৈনিক পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ হেন পদক্ষেপ অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতক মহলের একাংশ৷
কী করতে চাইছে ইউজিসি?
গত ৫ ডিসেম্বর নিজেরে ওয়েবসাইটে ইউজিসি জানায়, মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক চায় ডিজিটাল অর্থনীতি সম্পর্কে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা মানুষকে সচেতন করুক৷ কারণ ইউজিসি মনে করে, ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড, ই-ওয়ালেট, নেট ব্যাঙ্কিং বা ফোন ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে ক্যাশলেস লেনদেন বাড়লে সমাজ থেকে দুর্নীতি যেমন দূর হবে, তেমনই কালো টাকাও উদ্ধার হবে৷ তাই ডিজিটাল লেনদেনের ব্যাপারে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে অথবা দোকান বাজারে গিয়ে মানুষকে বোঝাক৷ এ কারণে এনসিসি এবং এনএসএসকে কাজে লাগানোর ব্যাপারেও প্রস্তাব দিয়েছে ইউজিসি৷ এই অভিযানকে সফল করতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষা সচিবদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী৷ এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এনএসএস বিভাগ৷

কিন্ত্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আপত্তির পর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বাদে আর কোনও প্রতিষ্ঠান বৈঠকে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে৷ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া জানিয়েছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাকের পরিদর্শন ছিল৷ তাই অন্য কিছুতে আমি নজর দিতে পারিনি৷ এরকম কোনও নির্দেশ বা চিঠি আমি হাতে পাইনি৷ ফলে বৈঠকে যোগ দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই৷’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ ইউজিসির তরফে ই-মেল পেলেও তিনি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় আদৌ আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বৈঠকে যোগ দিতে পারবেন কি না, স্থির করেননি৷ কিন্ত্ত বৈঠকে না যাওয়ার ফতোয়া নিয়ে শিক্ষামহলের অনেকেই পার্থর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন৷ গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অচিন্ত্য বিশ্বাসের কথায়, ‘এতটা রাজনীতিকরণ হলে কোনও শিক্ষাবিদের পক্ষে প্রতিষ্ঠান চালানোই দায়৷’

প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘ক্যাশলেস ইন্ডিয়া নিয়ে এমন অনুষ্ঠান করা নিয়েই আমার আপত্তি আছে৷ রাজ্য সরকারেরও সেই আপত্তি থাকার কথা৷ কিন্ত্ত তার জন্য উপাচার্যদের বৈঠকে যোগ না দেওয়ার তো কিছু নেই৷ বরং রাজ্যের প্রতিনিধি হয়ে তাঁরাই তো আপত্তির কথা কেন্দ্রে কাছে তুলে ধরতে পারতেন৷’

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল