মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য
সময় বলছে বাঙালির সেরা উত্সব কড়া নাড়ছে দরজায়৷ বর্ষার মেঘের মাঝেও পেঁজা তুলো ভাসছে আকাশে৷ কিন্ত্ত শহরের বাতাসে তার গন্ধ কই ? রাজপথে নেই ফ্লেক্স জুড়ে টিজার -থিমের মারামারি৷ ‘পুজো আসছে ’ মোডটাই যেন অন হচ্ছে না৷ মেঘের ঘনঘটায় কি তবে ফিকে হচ্ছে আবাহনীর আমেজ ?সকালে ঘুম থেকে উঠে খোলা জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেই নীল আকাশ৷ অন্য বছর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা বলে দেয় পুজো আর দেরি নেই৷ কিন্ত্ত এবার প্রায়ই ঘুম ভাঙছে বর্ষার মেঘের নির্ঘোষে৷ হাওয়া অফিসও মাঝেমধ্যেই শোনাচ্ছে , আগামী কিছুদিন বর্ষার রেশ পিছু ছাড়বে না৷ দক্ষিণ কলকাতার নামজাদা পুজো বালিগঞ্জ কালচারালের কর্তা, পেশায় চিকিত্সক সন্তর্ষি বসু যেমন এই ম্যাড়ম্যাড়ে প্রাক পুজোর পরিস্থিতিতে বেশ বিরক্ত৷ বলেই ফেললেন , ‘পুজো এবার এত আগে হচ্ছে যে বর্ষার রেশ কেটে পুজো পুজো ভাবটাই আসছে না৷ এক মাসেরও কম সময় , তাও কারও মনে হচ্ছে না যে পুজো আসছে৷ ’
ফি বছর যে পুজোর মাস দেড়েক আগে থেকেই রাজপথ ছেয়ে যায় পুজোর ফ্লেক্সে ! কোথায় কেমন পুজো , তা নিয়ে চলে একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার পালা৷ সে সবেরও যে প্রায় দেখা নেই রাস্তায়৷ দু’ধারে তাকালে হয় রাজনৈতিক নয়তো গয়নার বিজ্ঞাপন৷ থিম সংয়ের নাম গন্ধও শোনা যাচ্ছে না পুজো উদ্যোক্তাদের মুখে ! এ ব্যাপারে পাবলিক রিলেশন সংস্থা কার্পে দিয়েমের মালিক অরিন্দম বসুর মন্তব্য , ‘গত বছরও আমরা ৩টে পুজোর জনসংযোগের দায়িত্ব সামলেছিলাম৷ এ বার সেখানে মাত্র একটা পুজো আমাদের সেই কাজটা দিয়েছে৷ গত বছরের তুলনায় , অডিও -ভিস্যুয়াল ক্লিপিংস , জিঙ্গলসও প্রায় নেই বললেই চলে৷ তাই পুজো আগমনের ঢক্কা নিনাদও সেভাবে শোনা যাচ্ছে না৷ ’কিন্ত্ত শুধু মেঘকে দুষলেই হবে ? সমাজতাত্ত্বিকরা এই মুড বদলের পিছনে দেখছেন আরও বড় কারণকে৷ বিশেষজ্ঞ গার্গী বসুর কথায় , ‘পুজোর আমেজ আসত তার আনুষঙ্গিকের হাত ধরে৷ পুজোর নতুন জামা , নতুন জুতো , পুজোর গান , পূজাবার্ষিকী ---সব মিলিয়ে তৈরি হত ভালোলাগার রেশ৷ কিন্ত্ত এখন না পুজোর জন্য কেনাকাটা করা হয় , না পুজোর গান বেরোয়৷ পূজাবার্ষিকী পত্রিকা তো ভরা বর্ষায় হাতে চলে আসে৷ স্বভাবতই পুজোর আমেজটা আর তৈরি হয়ে উঠতে পারে না সেভাবে৷ ’
বিজ্ঞাপন কম আসার কারণটা কী ? বিজ্ঞাপনী সংস্থা কারুকৃতের মালিক দেবাশিস সাহা বলছেন , ‘জিএসটির একটা বড় প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়৷ অনেক পুজো কমিটিই ফ্লেক্স বা ব্যানারের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন৷ যাঁরা ফ্লেক্স দিচ্ছেন , তাঁরা সময়কালটা কমিয়ে দিচ্ছেন টাকা বাঁচাতে৷ তাই পুজোর একমাস বাকি থাকলেও শহরে সেরকম প্রচার নেই৷ ’ অন্য দিকে নোটবন্দিকে দুষছেন সুরুচি সংঘের কর্তা স্বরূপ বিশ্বাস৷ তাঁর মন্তব্য , ‘ডিমনেটাইজেশন এবং জিএসটি এবার পুজোর বাজেটে বড় প্রভাব ফেলেছে৷ অনেক বড় বড় স্পনসরই এবার পিছিয়ে গিয়েছেন বা তাঁদের স্পনসরশিপের টাকা কমিয়ে দিয়েছেন৷ যার ফলে অনেক পুজোকেই বড় সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে বা কাটছাঁট করতে হয়েছে পুজোর ব্যবস্থাপনা৷ ’ কুমোরটুলির ছবিও বলছে , মন্দার কথাই৷ এখনও কয়েকশো ঠাকুরের বায়না বাকি কুমোরটুলিতে৷
সেপ্টেম্বর পড়লেই অবশ্য শহরের রূপ বদলানোর আশা মিলছে৷ দেবাশিস সাহা বলছেন , ‘আর কিছু দিনের মধ্যেই ফ্লেক্স পড়তে শুরু করবে৷ তখনই ‘পুজো আসছে ’ মোড অন হয়ে যাবে দেখবেন৷ ’ স্বরূপও আশ্বাস দিচ্ছেন , ‘আমাদের ফ্লেক্স , হোর্ডিং আর কিছুদিনের মধ্যেই দেখতে পাবেন সকলে৷ ’পুজোর এখনও সময় আছে৷ হয়তো আরও কিছুদিন পর আমেজ আসবে৷ তবে পুজো নিয়ে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে , তাতে আসল টানটাই কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়৷ তাই হয়তো পুজো আসার সেই আমেজটা আসছে নাশীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়বাড়িতে মা চিংড়ির মালাইকারি রান্না করেছে জেনে , সকালে নারকোলের দুধ থেকে শুরু করে ঝোল টেস্ট করার নামে মালাইকারি চেখে নিলে যেমন দুপুরে স্বাদ ফিকে লাগে , আমাদেরও সেটাই হয়েছে৷
সময় বলছে বাঙালির সেরা উত্সব কড়া নাড়ছে দরজায়৷ বর্ষার মেঘের মাঝেও পেঁজা তুলো ভাসছে আকাশে৷ কিন্ত্ত শহরের বাতাসে তার গন্ধ কই ? রাজপথে নেই ফ্লেক্স জুড়ে টিজার -থিমের মারামারি৷ ‘পুজো আসছে ’ মোডটাই যেন অন হচ্ছে না৷ মেঘের ঘনঘটায় কি তবে ফিকে হচ্ছে আবাহনীর আমেজ ?সকালে ঘুম থেকে উঠে খোলা জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেই নীল আকাশ৷ অন্য বছর নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা বলে দেয় পুজো আর দেরি নেই৷ কিন্ত্ত এবার প্রায়ই ঘুম ভাঙছে বর্ষার মেঘের নির্ঘোষে৷ হাওয়া অফিসও মাঝেমধ্যেই শোনাচ্ছে , আগামী কিছুদিন বর্ষার রেশ পিছু ছাড়বে না৷ দক্ষিণ কলকাতার নামজাদা পুজো বালিগঞ্জ কালচারালের কর্তা, পেশায় চিকিত্সক সন্তর্ষি বসু যেমন এই ম্যাড়ম্যাড়ে প্রাক পুজোর পরিস্থিতিতে বেশ বিরক্ত৷ বলেই ফেললেন , ‘পুজো এবার এত আগে হচ্ছে যে বর্ষার রেশ কেটে পুজো পুজো ভাবটাই আসছে না৷ এক মাসেরও কম সময় , তাও কারও মনে হচ্ছে না যে পুজো আসছে৷ ’
ফি বছর যে পুজোর মাস দেড়েক আগে থেকেই রাজপথ ছেয়ে যায় পুজোর ফ্লেক্সে ! কোথায় কেমন পুজো , তা নিয়ে চলে একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার পালা৷ সে সবেরও যে প্রায় দেখা নেই রাস্তায়৷ দু’ধারে তাকালে হয় রাজনৈতিক নয়তো গয়নার বিজ্ঞাপন৷ থিম সংয়ের নাম গন্ধও শোনা যাচ্ছে না পুজো উদ্যোক্তাদের মুখে ! এ ব্যাপারে পাবলিক রিলেশন সংস্থা কার্পে দিয়েমের মালিক অরিন্দম বসুর মন্তব্য , ‘গত বছরও আমরা ৩টে পুজোর জনসংযোগের দায়িত্ব সামলেছিলাম৷ এ বার সেখানে মাত্র একটা পুজো আমাদের সেই কাজটা দিয়েছে৷ গত বছরের তুলনায় , অডিও -ভিস্যুয়াল ক্লিপিংস , জিঙ্গলসও প্রায় নেই বললেই চলে৷ তাই পুজো আগমনের ঢক্কা নিনাদও সেভাবে শোনা যাচ্ছে না৷ ’কিন্ত্ত শুধু মেঘকে দুষলেই হবে ? সমাজতাত্ত্বিকরা এই মুড বদলের পিছনে দেখছেন আরও বড় কারণকে৷ বিশেষজ্ঞ গার্গী বসুর কথায় , ‘পুজোর আমেজ আসত তার আনুষঙ্গিকের হাত ধরে৷ পুজোর নতুন জামা , নতুন জুতো , পুজোর গান , পূজাবার্ষিকী ---সব মিলিয়ে তৈরি হত ভালোলাগার রেশ৷ কিন্ত্ত এখন না পুজোর জন্য কেনাকাটা করা হয় , না পুজোর গান বেরোয়৷ পূজাবার্ষিকী পত্রিকা তো ভরা বর্ষায় হাতে চলে আসে৷ স্বভাবতই পুজোর আমেজটা আর তৈরি হয়ে উঠতে পারে না সেভাবে৷ ’
বিজ্ঞাপন কম আসার কারণটা কী ? বিজ্ঞাপনী সংস্থা কারুকৃতের মালিক দেবাশিস সাহা বলছেন , ‘জিএসটির একটা বড় প্রভাব পড়েছে ব্যবসায়৷ অনেক পুজো কমিটিই ফ্লেক্স বা ব্যানারের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন৷ যাঁরা ফ্লেক্স দিচ্ছেন , তাঁরা সময়কালটা কমিয়ে দিচ্ছেন টাকা বাঁচাতে৷ তাই পুজোর একমাস বাকি থাকলেও শহরে সেরকম প্রচার নেই৷ ’ অন্য দিকে নোটবন্দিকে দুষছেন সুরুচি সংঘের কর্তা স্বরূপ বিশ্বাস৷ তাঁর মন্তব্য , ‘ডিমনেটাইজেশন এবং জিএসটি এবার পুজোর বাজেটে বড় প্রভাব ফেলেছে৷ অনেক বড় বড় স্পনসরই এবার পিছিয়ে গিয়েছেন বা তাঁদের স্পনসরশিপের টাকা কমিয়ে দিয়েছেন৷ যার ফলে অনেক পুজোকেই বড় সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে বা কাটছাঁট করতে হয়েছে পুজোর ব্যবস্থাপনা৷ ’ কুমোরটুলির ছবিও বলছে , মন্দার কথাই৷ এখনও কয়েকশো ঠাকুরের বায়না বাকি কুমোরটুলিতে৷
সেপ্টেম্বর পড়লেই অবশ্য শহরের রূপ বদলানোর আশা মিলছে৷ দেবাশিস সাহা বলছেন , ‘আর কিছু দিনের মধ্যেই ফ্লেক্স পড়তে শুরু করবে৷ তখনই ‘পুজো আসছে ’ মোড অন হয়ে যাবে দেখবেন৷ ’ স্বরূপও আশ্বাস দিচ্ছেন , ‘আমাদের ফ্লেক্স , হোর্ডিং আর কিছুদিনের মধ্যেই দেখতে পাবেন সকলে৷ ’পুজোর এখনও সময় আছে৷ হয়তো আরও কিছুদিন পর আমেজ আসবে৷ তবে পুজো নিয়ে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে , তাতে আসল টানটাই কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়৷ তাই হয়তো পুজো আসার সেই আমেজটা আসছে নাশীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়বাড়িতে মা চিংড়ির মালাইকারি রান্না করেছে জেনে , সকালে নারকোলের দুধ থেকে শুরু করে ঝোল টেস্ট করার নামে মালাইকারি চেখে নিলে যেমন দুপুরে স্বাদ ফিকে লাগে , আমাদেরও সেটাই হয়েছে৷