অ্যাপশহর

মার্শাল-প্যাঁচে ডাক্তাররা

মার খেতে খেতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর চিকিত্সকদের একাংশ পিঠ বাঁচাতে এখন মার্শাল আর্টের শরণ নিয়েছেন৷

EiSamay.Com 1 Jul 2017, 11:56 am
অনির্বাণ ঘোষ
EiSamay.Com doctors get martial arts training
মার্শাল-প্যাঁচে ডাক্তাররা

মার খাওয়া ঠেকাতে ডাক্তারদের মার্শাল আর্ট শেখা কি একান্ত জরুরি?

মার খেতে খেতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর চিকিত্সকদের একাংশ পিঠ বাঁচাতে এখন মার্শাল আর্টের শরণ নিয়েছেন৷ ইজরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের ঢঙে তাঁরাও ‘ক্র্যাব মাগা’র প্যাঁচ-পয়জারে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাইছেন৷ আর তাতেই দানা বেঁধেছে বিতর্ক৷ আজ, শনিবার চিকিত্সক দিবসের প্রাক্কালে ডাক্তারবাবুদের একাংশই প্রশ্ন তুলছেন , আদৌ কি এ সবের দরকার ছিল ? অন্যান্য পেশার মানুষও বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করছেন , এটাই কি জনরোষ সামলানোর একমাত্র উপায় ? নাকি আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগে আত্মসমীক্ষার প্রয়োজনটাই বেশি জরুরি ছিল ? সোশ্যাল মিডিয়ায় গড়ে ওঠা চিকিত্সকদের সংগঠন ডোপা (ডক্টর্স ফর পেশেন্ট ) সম্প্রতি সতীর্থদের এই ‘ক্র্যাব মাগা ’ শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷

চিকিত্সক মহলে তাতে সাড়াও পড়েছে বেশ ভালোই৷ জুলাইয়ের প্রথম বা দ্বিতীয় সন্তাহে খাস কলকাতাতেই এ নিয়ে দিনভর কর্মশালা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে , যেখানে যোগ দিতে পারেন হাজার দেড়েক ডাক্তারবাবু৷ তাঁরা সকলেই আত্মরক্ষার অধিকার ও তাগিদের পক্ষে সরব৷ তাঁদের সেই আবেগকে মান্যতা দিয়েও সমাজের একটা বড় অংশ বিষয়টি মন থেকে মেনে নিতে পারছে না৷ এবং সেই বিরুদ্ধ মতের তরফে সর্বাগ্রে সওয়াল করছেন সেই ডাক্তারবাবুরাই৷

প্রবীণ স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ তৃষিত রায়ের প্রশ্ন, ‘চিকিত্সকের উপর হামলার ঘটনা আদতে যেখানে দীর্ঘকালীন সামাজিক ব্যাধি , সেখানে মার্শাল আর্ট কতটা সুরক্ষা দিতে পারবে ডাক্তারবাবুদের ? উল্টে এতে গণ্ডগোল বাড়বে৷ এই সিদ্ধান্ত কি আদতে পুলিশ কিংবা নিরাপত্তাকর্মীদের প্রতিই অনাস্থা নয় ?’ তাঁর মতে , মার্শাল আর্টের চিন্তাভাবনা অবাস্তব৷ কেননা , চিকিত্সকের উপর হামলা কিংবা ডাক্তার - রোগী সম্পর্কের অবনতির যে অসুখ , তার শিকড় অনেক গভীরে৷ ‘বরং নিজেদের সমষ্টিগত ভাবে আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করা দরকার আমাদের যাতে এমন মারমুখী পরিস্থিতির জন্মই না হয় ,’ মন্তব্য তৃষিতের৷ কটাক্ষ করে তিনি বলেন , ‘ডোপার যুক্তি মানতে হলে তো সাংবাদিক থেকে শুরু করে স্টেশন মাস্টার , সকলেরই মার খাওয়ার ভয়ে মার্শাল আর্ট শেখা উচিত৷ ’প্রবীণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলছেন , ‘এটা দরকার ছিল কি না বলা মুশকিল৷ হয়তো অন্য উপায়ও ছিল৷ কিন্ত্ত বাড়তে থাকা জনরোষের কারণেই হয়তো ওঁরা ভেবেছেন , মার্শাল আর্ট শেখাটা এই সময়ে জরুরি হয়ে পড়েছে৷ ’

বিষয়টিকে হাস্যকর আখ্যা দিচ্ছেন বিখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বাসুদেব মুখোপাধ্যায়ও৷ তাঁর কথায় , ‘মার্শাল আর্ট শিখে লাভটা কী হবে ? উন্মত্ত জনতা যখন ধেয়ে আসবে , তখন কী মার্শাল আর্টে রক্ষা পাওয়া যাবে ?’ তাঁর মতে , প্রয়োজনে বাউন্সার বা সুরক্ষাকর্মীদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে৷ সুরক্ষার কাজটা তাঁদেরই , ডাক্তারবাবুদের নয়৷ ডোপার কর্তা শারদ্বত মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য যুক্তি , ‘কারও প্রতি অনাস্থা থেকে আমরা আত্মরক্ষার উপায় শেখার আহ্বান জানাইনি৷ প্রত্যন্ত এলাকায় বাস্তবে কারও সাহায্য মেলে না৷ পুলিশও পৌঁছাতে পারে না৷ অবশ্য সব চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানে পুলিশ থাকাও সম্ভব নয়৷
তাই নিজেদের বাঁচানোর উপায় যদি আমরা নিজেরাই শিখে নিই , ক্ষতি কী ? তাছাড়া , ক্র্যাব মাগা শিখলে তা চিকিত্সকের মানসিক দৃঢ়তা বাড়াতেও সাহায্য করবে৷ ’ একই সুর রাজ্যের চিকিত্সা -শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের৷ এনআরএসের অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি সেখানে একই উদ্দেশ্যে তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন৷ দেবাশিসের বক্তব্য , ‘বিষয়টা তো শুধু আত্মরক্ষার নয়৷ এই প্রশিক্ষণ স্ট্রেস কমাতে , মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে৷ আর কেউ যদি অন্যের সাহায্য ছাড়াই নিজেকে বাঁচানোর তালিম নেন , তাতে সমস্যাটা কোথায় ?’ কার্ডিয়াক সার্জেন কুণাল সরকার অবশ্য ভিন্নমত দেবাশিসের সঙ্গে৷ তিনি বলেন , ‘এটাই আক্ষেপ ও দুর্ভাগ্যের যে , এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে ডোপাকে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হল৷ তবে এতে লাভ হবে না৷ রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকরা আসল সমস্যাটা ঘুরিয়ে দিয়ে ডাক্তারদের শত্রু বানিয়ে দিয়েছে জনমানসে৷ সেইটা দূর করতে হবে৷ অন্যথায় আমাদের অবস্থা হবে দুর্ভিক্ষের মধ্যে গুদামঘরের প্রহরীদের মতো৷ ’

অন্যান্য পেশার মানুষরাও রায় দিচ্ছেন মার্শাল আর্টের বিরুদ্ধেই৷ সাহিত্যিক বাণী বসুর কথায় , ‘হাস্যকর ব্যাপার৷ এ সব শিখে জনরোষ ঠেকানো যায় নাকি ? ডাক্তারবাবুরা কি নিরাপত্তার দায়িত্বও নিয়ে নেবেন নাকি ? তার চেয়ে বরং আরও একটু দরদী হলে অপ্রীতিকর ঘটনা কমানো যাবে সমাজে৷ ’ একই সুর ‘অলীক সুখ ’-এর ডাক্তারবাবু চরিত্রে সাড়া ফেলে দেওয়া নাট্যাভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার৷ তাঁর প্রশ্ন, ‘ওঁরা কি সিরিয়াসলি এমন প্রস্তাব দিচ্ছেন নাকি ! এ সবের দরকার কী ?’ অভিনেতা কৌশিক সেনের মতেও , চিকিত্সকরা নির্ঘাত ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে এমনটা করতে যাচ্ছেন৷ ‘এতে ডাক্তার -রোগী সম্পর্কটা আরও খারাপ হয়ে যাবে না তো ?’ আশঙ্কা কৌশিকের৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল