অ্যাপশহর

স্বত্ব শেষ হওয়ার ১৯ বছরপর রবীন্দ্রগানের স্বত্ব দাবি

প্রশ্নটা কিন্তু রয়েই যাচ্ছে, ২০০১ সালে যাঁর কাজের স্বত্ব শেষ হয়ে গিয়েছে, তার পরেও অন্য কোনও সংস্থা কী ভাবে রবীন্দ্রনাথের গানের স্বত্বের দাবি করছে? জারি বিতর্ক...

EiSamay.Com 25 Apr 2020, 12:43 pm

ঋতপ্রভ বন্দ্যোপাধ্যায়

EiSamay.Com dispute over copyright of rabindranath tagore songs
রবীন্দ্রনাথের গানের স্বত্ব

রবীন্দ্রসঙ্গীতের কপিরাইট বা স্বত্ব শেষ হয়েছে ২০০১ সালে। ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে যার স্বত্ব সম্পূর্ণরূপে বিশ্বভারতীর আর নেই। তার পরও সেই গানের কপিরাইট দাবি করছে 'ইন্ডিয়ান পারফরমিং রাইট সোসাইটি' বা আইপিআরএস। কী ভাবে এটা হচ্ছে, তা নিয়ে ধন্দে খোদ ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুদৃপ্ত ঠাকুর। যা নিয়ে ওই সংস্থার চেয়ারম্যান জাভেদ আখতারকে ই-মেল করতে চলেছেন শিশুতীর্থের প্রিন্সিপ্যাল সুদৃপ্ত। প্রয়োজনে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার কথাও ভেবেছেন তিনি। শান্তিনিকেতন থেকে সুদৃপ্ত 'এই সময়'-কে বলছেন, 'সাহানা বাজপেয়ীর বাড়িতে ওঁর গাওয়া একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত 'মহারাজ, একি সাজে…'-র সঙ্গে আমি এস্রাজ বাজিয়েছিলাম। সেই গানের ভিডিয়ো ইউটিউবে পোস্ট করেন সাহানা। সেই গানে কপিরাইট চেয়ে বসে ওই সংস্থা। এই অবস্থায়, রবীন্দ্রনাথের পরিবারের হয়ে আমি যদি কিছুই না করি, তা হলে পাপ হবে।'

সুদৃপ্ত এই বিষয়টি নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট করেন। তাতে লেখেন, এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন যাঁরা সেই পোস্টের নীচে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা লিখতে পারেন। সেখান থেকে জানা যায়, শুধু সাহানা নন, বহু শিল্পী যাঁরা মূলত স্বাধীন ভাবে গান রেকর্ড করেন, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হচ্ছে বা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছেন স্বতন্ত্র শিল্পী স্যমন্তক সিনহা। রয়েছেন অনিন্দিতা চক্রবর্তী এবং সুচেতনা গুপ্তর মতো বহু শিল্পী। কেউ কেউ এই বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের গান বের করে এনেছেন। কিন্তু, মূল সমস্যাটি রয়েই গিয়েছে।

শান্তিনিকেতন থেকে সাহানা বলছিলেন, 'আমার গানের ক্ষেত্রে ই-মেলে নোটিস পেয়েছি। স্যমন্তকের বেশ কিছু গানের ক্ষেত্রে এই নোটিস এসেছে। আমাদের মতো অনেকের এই সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু বুঝতে পারছি না, রবীন্দ্রনাথের গানে কোনও সংস্থা স্বত্বের দাবি করতে পারে কী করে?'

সম্প্রতি আইপিআরএস হাত মিলিয়েছে গুগ্‌ল-এর সঙ্গে। সঙ্গীতের লাইসেন্স নিয়ে একটি চুক্তি এই দুই সংস্থার মধ্যে হয়েছে। গুগ্‌লের তরফ থেকে একটি বিবৃতি বলছে, 'গীতিকার, সুরকার, প্রকাশক এবং গায়ক যাতে ঠিকমতো অর্থ পেতে পারেন, তার জন্য ইউটিউব বদ্ধপরিকর। একই সঙ্গে আমাদের উপভোক্তারা যাতে তাঁদের পছন্দমতো গান শুনতে পারেন, সে দিকেও আমরা নজর দিয়েছি।' এ জন্যই ভারতে এই চুক্তি। ঘটনা হল, ইউটিউবে গান বেশি শোনা হলে অর্থ পান শিল্পীরা। একটি হিসেব অনুযায়ী, কোনও গান ৩৬ হাজার বার শোনা হলে, মোটের উপর সাড়ে আট ডলার পেতে পারেন কোনও শিল্পী। আশঙ্কা, কপিরাইটের এই চক্করে শিল্পী সেই অর্থ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

সংস্থার চেয়ারম্যান জাভেদ আখতারকে 'এই সময় সংবাদপত্র'-এর তরফে একটি ই-মেল করা হয় বিষয়টি জানতে চেয়ে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার উত্তর আসেনি।

সুদৃপ্ত বলছেন, 'ওই সংস্থার আইনগত বৈধতা সম্পর্কে আমি জানি না। আমি জাভেদ আখতারকে ই-মেল করব। তার উত্তর কী পাই দেখি। তার পর ভাবব, কী ভাবে এগোব।'

সাহানা বলছিলেন, 'আমি ডিসপিউট ক্লেইম করে আমার ভিডিয়ো ছাড়িয়ে আনতে পারি। কিন্তু, অনেকেই সেটা পারেননি। এটা কী ভাবে হতে পারে? অতুলপ্রসাদ সেনের কোনও গানে এটা হচ্ছে না, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ক্ষেত্রে কেন এটা হচ্ছে?'

সুদৃপ্তর ফেসবুক পোস্টে সুচেতনা গুপ্ত লিখছেন, 'আমিও এই এক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম। ডিসপিউট ফাইল করে গানগুলোকে বের করে আনতে পেরেছি।' অনিন্দিতা চক্রবর্তী লিখছেন, 'গতবছর জি-সিরিজ-এর তরফ থেকে নোটিস পাই। ডিসপিউট ক্লেইম করি, কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। জানি না এর পর কী করতে হবে।'

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল