অ্যাপশহর

ডেঙ্গি কোনও ইস্যু নয়, কোর্টে সাফাই রাজ্যের

‘ডেঙ্গি কোনও ইস্যু নয়’ বলে হাইকোর্টে বৃহস্পতিবার মিডিয়াকে কাঠগড়ায় তুলে দিল রাজ্য সরকার৷

EiSamay.Com 17 Nov 2017, 9:29 am
এই সময়: ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয় বলে আগেই দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর অভিযোগ ছিল, মিডিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছে৷ এ বার হাইকোর্টেও প্রশাসনের শীর্ষমহলের সেই অবস্থানেই অটল রইল রাজ্য সরকার৷
EiSamay.Com dengue is not an issue west bengal govt to calcutta high court
ডেঙ্গি কোনও ইস্যু নয়, কোর্টে সাফাই রাজ্যের


‘ডেঙ্গি কোনও ইস্যু নয়’ বলে হাইকোর্টে বৃহস্পতিবার মিডিয়াকে কাঠগড়ায় তুলে দিল রাজ্য সরকার৷ প্রায় আড়াই ঘণ্টা ডেঙ্গি নিয়ে বক্তব্যে একটা বড় সময় রাজ্য সরকারের তরফে খরচ করা হয় এই মামলাগুলির যৌক্তিকতা নিয়ে৷ রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, ‘হাফ ডজন মামলা করে গেল গেল রব তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে একটা নন-ইস্যু নিয়ে৷ যার পুরোটাই সংবাদমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে৷ আসলে এই সমস্যা এখন বিশ্ব জুড়ে৷’ কোনও প্রমাণ ছাড়া সংবাদমাধ্যম লিখছে বলে অভিযোগ তুলে এজি মিডিয়াকে নোটিস পাঠানোরও দাবি তোলেন৷ ভারপ্রান্ত প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অরিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ তখন বলে, ‘বর্তমানে ডেঙ্গি একটি সামাজিক সমস্যায় পরিণত৷ আমাদের ভাবতে হবে কী ভাবে এর মোকাবিলা করা যায়৷ সরকার এখনও স্পষ্ট করেনি ডেঙ্গিতে মৃত এবং আক্রান্তের সংখ্যা৷ সরকারের তথ্য পরিসংখ্যানে সন্ত্তষ্ট নয় আদালত৷’

রাজ্য ডেঙ্গি নিয়ে মামলাকে লঘু করে দেখাতে চাইছে বলে রে রে করে ওঠেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের মতো মামলাকারীদের আইনজীবীরা৷ সরকারের তরফে অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘এ সব মিডিয়ায় নাম তোলার ফন্দি’ বলে তাঁদের কটাক্ষ করে বিতর্ক বাড়িয়ে দেন৷ পরে আদালত দু’পক্ষকে থামায়৷ মামলাকারীদের পক্ষে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘তা হলে সরকার বলে দিক ১৯ জন ছাড়া আর কেউ ডেঙ্গিতে মারা যায়নি, আর ডেঙ্গি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে৷’ সরকার অবশ্য সে প্রশ্নের জবাব দেয়নি৷

ডেঙ্গিতে মৃতের নির্দিষ্ট সংখ্যা কত? গত শুনানিতে হাইকোর্টের তোলা প্রশ্নের জবাবে বিস্তর ধোঁয়াশা তৈরি হয় এ দিন রাজ্যের দেওয়া তথ্যে৷ তবে দিনের শেষে রাজ্যের বক্তব্যের নির্যাস , গত সাত দিনে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গিতে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে৷ গত জানুয়ারি থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত শুধু সরকারি হাসপাতালে ১৯ জনের মৃত্যুর রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও , তা নিয়ে খোলসা করে কিছু বলেনি সরকার৷ বেসরকারি হাসপাতালে এই সময়ের মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে রাজ্য৷ সেখানে বাকি মৃতরা আদৌ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না তা নিয়ে এখনও পরীক্ষা করছে রাজ্য৷ ফলে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মোট মৃতের সরকারি সংখ্যা ৩৮৷ আর ডেঙ্গিতে সরকারি -বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার৷ এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছ’হাজার৷ এজলাসে শুনানির সময় সরকারপক্ষের শিবিরে বসে আদালতের একের পর একে তোলা প্রশ্নের উত্তর জুগিয়ে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী৷

গত শুনানিতে ডেঙ্গি নিয়ে তথ্য গোপন , চিকিত্সকদের ডেঙ্গি হলেও তা না লিখতে চাপ দেওয়া-সহ একাধিক অভিযোগ তুলে দায়ের করা মামলার আইনজীবীরা কাঠগড়ায় তুলেছিলেন রাজ্যকে৷ কেন্দ্রের পক্ষে অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল কৌশিক চন্দ্র তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে বলেন, ‘জ্বর নিয়ে কিছু দিন আগে আমি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম৷ আউটডোরে ডেঙ্গি চিহ্নিত করে আমায় ভর্তি নেওয়া হয়৷ ভর্তি থাকাকালীন চিকিত্সাও হয় ডেঙ্গির৷ কিন্ত্ত হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার সময় ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে লেখা হয় ভাইরাল ফিভার৷’ মামলাকারীদের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে রাজ্যের তরফে এজি ডেঙ্গির সংজ্ঞা থেকে তার বিশ্বায়ন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট ধরে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন৷ এজি-র যুক্তি, শুধু মিডিয়ার রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে মামলা করা হচ্ছে৷ মিডিয়া যা খুশি সংখ্যা ছেপে দেবে আর রাজ্য তার জবাব দেবে, এটা হতে পারে না৷ তাই এত মৃত্যুর কথা মিডিয়া কোথা থেকে লিখছে, তার তথ্য প্রমাণ কোথায়, তা জানাক৷ সংবাদমাধ্যমকে এই মামলায় যুক্ত করারও দাবি তোলেন এজি৷ মিডিয়া রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলা খারিজ করার পক্ষেও সওয়াল করেন তিনি৷ আজ, শুক্রবার মামলার পরবর্তী শুনানি৷

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল