অ্যাপশহর

নিঃসঙ্গতা গ্রাস করছে শৈশবকে

শিশুর হাতে মোবাইল, টিভি দেখার নেশা, ভিডিয়ো গেমস- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলির জন্য শিশুকে দায়ী করা অন্যায়। তাঁদের প্রশ্ন, এ সব শিশুর হাতে দিলেন কারা? কেনই বা শিশু এ সবে আকৃষ্ট হল? ফলে, এ সবের জন্য শিশুর আচরণগত যে সমস্যা আসছে, তার জন্যও শিশুদের দায়ী করা উচিত নয়।

EiSamay.Com 14 Nov 2019, 9:09 am
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: ক্রমেই কি বাবা-মায়ের স্নেহ, ভালোবাসার স্পর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই সময়ের শিশুরা? আজ, শিশুদিবসে সবথেকে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে এই প্রশ্নটি। মনোবিদ থেকে শুরু করে পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট, চিকিৎসক থেকে শুরু করে শো-বিজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্ব- সকলের কথায় বাবা-মায়ের ভূমিকাই সর্বাগ্রে। সব মত একত্র করলে যা দাঁড়ায়, তাতে কিন্তু দুশ্চিন্তার উপাদান যথেষ্ট। সকলের বক্তব্য, বাবা-মায়ের ব্যস্ততা এবং সন্তানের উপরে তাঁদের প্রত্যাশার বিপুল বোঝা- মূলত এই জোড়া ফলায় বিদ্ধ হচ্ছে শৈশব।
EiSamay.Com Loneliness


শিশুর হাতে মোবাইল, টিভি দেখার নেশা, ভিডিয়ো গেমস- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলির জন্য শিশুকে দায়ী করা অন্যায়। তাঁদের প্রশ্ন, এ সব শিশুর হাতে দিলেন কারা? কেনই বা শিশু এ সবে আকৃষ্ট হল? ফলে, এ সবের জন্য শিশুর আচরণগত যে সমস্যা আসছে, তার জন্যও শিশুদের দায়ী করা উচিত নয়। গলদ গোড়ায়। সেটি স্বীকার করেই অভিভাবকত্বের সংজ্ঞা নতুন করে লেখার পরামর্শ দিচ্ছেন সকলে।

পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পারমিতা সাহার বক্তব্য, ‘আজকাল বাবা-মা সন্তানকে সময় দিতে পারছেন না। মুশকিল হল, তাঁরা সন্তানকে দামি উপহার দেওয়া, বড় রেস্তোরাঁয় খাওয়ানোর মতো কাজ করে সেই খামতি ঢাকার চেষ্টা করছেন। সন্তানের কাছে স্নেহের সংজ্ঞাটাই তো এতে বদলে যাচ্ছে!’ পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ তুলে ধরছেন একাকিত্বের প্রসঙ্গ - ‘সেই হইহই করে ধুলো-কাদা মেখে খেলা কোথায়? আজকাল শিশুদের বিকেল আটকে প্রাইভেট টিউটরের কাছে। বিনোদন বলতে মোবাইল, টিভি।অণু-পরিবারের এই শিশুগুলিরজীবনে একটিই উপাদান রয়েছে- নিষ্ঠুর নিঃসঙ্গতা।’

এই দু’জনের কথার সমর্থন মেলে স্কুল কাউন্সেলর স্নিগ্ধা শ’র কথায়, ‘শিশুরা দেখছে বাবা-মা বেশিরভাগ সময়েই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বা নিজেদের কাজে ব্যস্ত। ফলে শিশুও মোবাইল বা টিভি-তে নিজের জগৎ খুঁজে নেয়। প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় শেয়ারিং অ্যান্ড কেয়ারিং-এর শিক্ষা পাচ্ছে না এ প্রজন্ম।’ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সাহেলী গঙ্গোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের কথাবার্তা বেশিরভাগই পড়াশোনা-কেন্দ্রিক। সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো মানে শপিং মল, রেস্তোরাঁ। সন্তান আদৌ ভালো আছে কি না, সে খবর রাখেন ক’জন?’ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস বাবা-মায়ের ব্যস্ততার প্রসঙ্গেই তুলে আনলেন স্বাস্থ্যের বিষয়টি- ‘বাবা-মায়ের সময় কম। পুষ্টিকর খাবার রান্নার সময় কোথায়? তাই প্রসেসড ফুড, ফাস্ট ফুডে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে শৈশব। ৯-১৩ বছরের শিশুদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে ওবেসিটি। ফলে অল্পবয়সেই ডায়াবিটিস, হার্ট, প্রেশারের মতো সমস্যায় পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।’

অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী অবশ্য এ সবের বাইরে গিয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন দূষণে- ‘পরিবেশের যা হাল, তাতে ক’দিন পরে বিশুদ্ধ হাওয়া কিনতে হবে। বাচ্চাকে যা-ই খাওয়াই, আগে ভাবতে হয় ভেজাল আছে কি না। দূষণমুক্ত পরিবেশ দিতে না-পারলে সন্তানকে সুস্থ ভাবে বড় করা কঠিন।’ অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘বাবা-মায়ের সুস্থ সম্পর্ক জরুরি। তাতে সন্তান বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে লড়ার রসদটা খুঁজে পায়। বাবা-মায়ের কেউই যে কারও থেকে ছোট বা বড় নন, সেটা বুঝিয়ে দিতেহবে সন্তানকে।’

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল