অনির্বাণ ঘোষ
ছিল না উপসর্গ। ফলে বোঝাই যায়নি করোনার হানা। সপ্তাহ তিন-চার পরে ব্যাপারটা যখন বোঝা গেল, তখন করোনা নয়, তার দোসর একটি অসুখ হামলা চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে ছোট্ট শরীরটা।
করোনার সেই দোসরের নাম মাল্টি-সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম ইন চিল্ড্রেন বা সংক্ষেপে এমআইএস-সি। শিশুদের একেবারে নতুন এই অসুখ মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে পেডিয়াট্রিক ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশ্যালিস্টদের কাছে। তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে, গোড়ার দিকে কোভিডের জেরে শিশুদের প্রাণসংশয়ের ঘটনা তেমন একটা না-ঘটলেও ইদানীং তার নজির প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। আরও বেশি করে দেখা যাচ্ছে এমআইএস-সি, যার জেরে তৈরি হচ্ছে এমন প্রাণঘাতী পরিস্থিতি, যার চিকিৎসায় শিশুদের সোজা পিকু-তে (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) রাখা ছাড়া উপায় থাকছে না।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে শুরু করে মুকুন্দপুর আমরি কিংবা পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ- সব হাসপাতালের পিকু-তেই এখন এমআইএস-সি রোগীর দেখা মিলছে নিয়মিত। চাইল্ড হেলথের পিকু-র প্রধান চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি জানাচ্ছেন, অ-করোনা হাসপাতাল হওয়ার পরেও গত দু'-আড়াই মাসে অন্তত ২০ জন এমআইএস-সি আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, 'অনেক বাচ্চাই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু উপসর্গ না-থাকায় বা অত্যন্ত কম থাকায় সে যে আদতে কোভিড পজিটিভ, তা কেউ বুঝছে না। সিংহভাগ ক্ষেত্রে টেস্টও হচ্ছে না। অথচ নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতিক্রিয়া, সেই ইমিউন রেসপন্সের কারণেই এদের মধ্যে অনেকের তিন থেকে ছ' সপ্তাহের মধ্যে এমআইএস-সি হচ্ছে।'
কী হয় এই অসুখে?
প্রভাসপ্রসূন জানাচ্ছেন, আচমকা প্রবল জ্বর আসছে। জ্বরটা থাকছে এক সপ্তাহেরও বেশি। সঙ্গে চোখ ও ঠোঁট লাল হয়ে উঠছে, গায়ে দেখা যাচ্ছে চাকা চাকা র্যাশ। দিন সাতেকের মাথায় নেতিয়ে পড়ছে শিশু। একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ছে। এমনকী, হৃদপেশির প্রদাহ বা মায়োকার্ডাইটিসের কারণে হার্ট ফেলিয়োর হয়ে যাচ্ছে ৬০-৭০% শিশুরই। এদের বেশির ভাগই গোড়ায় করোনা পজিটিভ হয়নি। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, পরিবারের কেউ না কেউ পজিটিভ। পরে ওই বাচ্চারও অ্যান্টিবডি টেস্ট পজিটিভ আসছে। তখন বোঝা যাচ্ছে, করোনা হামলা চালিয়েছিল আগেই।
তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় বাচ্চারা খুব সুরক্ষিত, এমনটা মনে করার দিন ফুরিয়েছে। মেডিক্যালের পিকু ইনচার্জ মিহির সরকার জানাচ্ছেন, তাঁদের পিকু-তে অন্তত ২২ জন এমআইএস-সি আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে করোনার সঙ্গে এমআইএস-সি নিয়ে যে সামান্য কয়েক জন ভর্তি হয়েছে, তাদের গড় বয়স পাঁচ বছর। বাকিরা তুলনায় একটু বড়, ৯-১২ বছর। শুক্রবার তিনি বলেন, 'এমআইএস-সি হয়নি, শুধুমাত্র করোনার জেরে জটিলতা হয়েছে, এমন শিশুরোগীর সংখ্যাও এখন বাড়ছে। আমাদের ইউনিটেই এমন ছ'টি বাচ্চা ভেন্টিলেশনে রয়েছে এখন।'
তবে আশার কথা একটাই- এমআইএস-সি আক্রান্তদের মধ্যে এখনও কেউ মারা যায়নি কলকাতায়। যদিও সারা দুনিয়ায় নতুন এই অসুখের মৃত্যুহার প্রায় ২%। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এখানে এ রোগে কেউ মারা যায়নি, নাকি রোগটাই চিহ্নিত হয়নি, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার। মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালের পিকু-র প্রধান চিকিৎসক সৌমেন মেউর জানান, তাঁদের অধীনে অন্তত ১৬ জন এমআইএস-সি রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। কেউ মারা যায়নি। তাঁর বক্তব্য, 'এমআইএস-সি প্রথম এপ্রিলে দেখা গিয়েছিল ব্রিটেনে। পরবর্তী দু'-তিন মাস ইউরোপ-আমেরিকায় অনেক শিশুই এ অসুখে মারা গিয়েছে। আসলে, এর চিকিৎসা সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও তখন তেমন কোনও ধারণা ছিল না। এখন আমরা এর যথাযথ চিকিৎসাটা জানি। তাই সাফল্যের হার ভালো।'
ছিল না উপসর্গ। ফলে বোঝাই যায়নি করোনার হানা। সপ্তাহ তিন-চার পরে ব্যাপারটা যখন বোঝা গেল, তখন করোনা নয়, তার দোসর একটি অসুখ হামলা চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে ছোট্ট শরীরটা।
করোনার সেই দোসরের নাম মাল্টি-সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম ইন চিল্ড্রেন বা সংক্ষেপে এমআইএস-সি। শিশুদের একেবারে নতুন এই অসুখ মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে পেডিয়াট্রিক ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশ্যালিস্টদের কাছে। তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে, গোড়ার দিকে কোভিডের জেরে শিশুদের প্রাণসংশয়ের ঘটনা তেমন একটা না-ঘটলেও ইদানীং তার নজির প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। আরও বেশি করে দেখা যাচ্ছে এমআইএস-সি, যার জেরে তৈরি হচ্ছে এমন প্রাণঘাতী পরিস্থিতি, যার চিকিৎসায় শিশুদের সোজা পিকু-তে (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) রাখা ছাড়া উপায় থাকছে না।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে শুরু করে মুকুন্দপুর আমরি কিংবা পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ- সব হাসপাতালের পিকু-তেই এখন এমআইএস-সি রোগীর দেখা মিলছে নিয়মিত। চাইল্ড হেলথের পিকু-র প্রধান চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি জানাচ্ছেন, অ-করোনা হাসপাতাল হওয়ার পরেও গত দু'-আড়াই মাসে অন্তত ২০ জন এমআইএস-সি আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, 'অনেক বাচ্চাই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু উপসর্গ না-থাকায় বা অত্যন্ত কম থাকায় সে যে আদতে কোভিড পজিটিভ, তা কেউ বুঝছে না। সিংহভাগ ক্ষেত্রে টেস্টও হচ্ছে না। অথচ নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতিক্রিয়া, সেই ইমিউন রেসপন্সের কারণেই এদের মধ্যে অনেকের তিন থেকে ছ' সপ্তাহের মধ্যে এমআইএস-সি হচ্ছে।'
কী হয় এই অসুখে?
প্রভাসপ্রসূন জানাচ্ছেন, আচমকা প্রবল জ্বর আসছে। জ্বরটা থাকছে এক সপ্তাহেরও বেশি। সঙ্গে চোখ ও ঠোঁট লাল হয়ে উঠছে, গায়ে দেখা যাচ্ছে চাকা চাকা র্যাশ। দিন সাতেকের মাথায় নেতিয়ে পড়ছে শিশু। একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ছে। এমনকী, হৃদপেশির প্রদাহ বা মায়োকার্ডাইটিসের কারণে হার্ট ফেলিয়োর হয়ে যাচ্ছে ৬০-৭০% শিশুরই। এদের বেশির ভাগই গোড়ায় করোনা পজিটিভ হয়নি। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, পরিবারের কেউ না কেউ পজিটিভ। পরে ওই বাচ্চারও অ্যান্টিবডি টেস্ট পজিটিভ আসছে। তখন বোঝা যাচ্ছে, করোনা হামলা চালিয়েছিল আগেই।
তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় বাচ্চারা খুব সুরক্ষিত, এমনটা মনে করার দিন ফুরিয়েছে। মেডিক্যালের পিকু ইনচার্জ মিহির সরকার জানাচ্ছেন, তাঁদের পিকু-তে অন্তত ২২ জন এমআইএস-সি আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে করোনার সঙ্গে এমআইএস-সি নিয়ে যে সামান্য কয়েক জন ভর্তি হয়েছে, তাদের গড় বয়স পাঁচ বছর। বাকিরা তুলনায় একটু বড়, ৯-১২ বছর। শুক্রবার তিনি বলেন, 'এমআইএস-সি হয়নি, শুধুমাত্র করোনার জেরে জটিলতা হয়েছে, এমন শিশুরোগীর সংখ্যাও এখন বাড়ছে। আমাদের ইউনিটেই এমন ছ'টি বাচ্চা ভেন্টিলেশনে রয়েছে এখন।'
তবে আশার কথা একটাই- এমআইএস-সি আক্রান্তদের মধ্যে এখনও কেউ মারা যায়নি কলকাতায়। যদিও সারা দুনিয়ায় নতুন এই অসুখের মৃত্যুহার প্রায় ২%। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এখানে এ রোগে কেউ মারা যায়নি, নাকি রোগটাই চিহ্নিত হয়নি, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার। মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালের পিকু-র প্রধান চিকিৎসক সৌমেন মেউর জানান, তাঁদের অধীনে অন্তত ১৬ জন এমআইএস-সি রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। কেউ মারা যায়নি। তাঁর বক্তব্য, 'এমআইএস-সি প্রথম এপ্রিলে দেখা গিয়েছিল ব্রিটেনে। পরবর্তী দু'-তিন মাস ইউরোপ-আমেরিকায় অনেক শিশুই এ অসুখে মারা গিয়েছে। আসলে, এর চিকিৎসা সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও তখন তেমন কোনও ধারণা ছিল না। এখন আমরা এর যথাযথ চিকিৎসাটা জানি। তাই সাফল্যের হার ভালো।'