অ্যাপশহর

আড়ম্বরের আন্দাজ পেয়ে গোয়ার বদলে কলকাতা

আলোর রং গড়িয়ে পড়ছে পার্ক স্ট্রিটে। ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে পৌষালি ঠান্ডা বাতাস। চন্দ্রবিন্দু যেমন গেয়েছিল, ‘সেই হাওয়া ঝামরে পড়ছে আজ, আর রাস্তাঘাট আলোর মহারাজ...’।

EiSamay 25 Dec 2018, 8:18 am
EiSamay.Com 1
কমলেশ চৌধুরী

আলোর রং গড়িয়ে পড়ছে পার্ক স্ট্রিটে। ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে পৌষালি ঠান্ডা বাতাস। চন্দ্রবিন্দু যেমন গেয়েছিল, ‘সেই হাওয়া ঝামরে পড়ছে আজ, আর রাস্তাঘাট আলোর মহারাজ...’।

ভিড় ঠেলে সেই রাস্তা ধরে হেঁটে আসছিলেন রব কর্নফোর্ড উইলিয়ামস। ইংল্যান্ডের তরুণ। সঙ্গে স্ত্রী অ্যামি। ক্রিসমাস ইভে এত শহর থাকতে কলকাতায় কেন?

রবের জবাব শুনলে খুশি হতেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উদ্যোগেই বছরশেষে রং ধরে পার্ক স্ট্রিটে। থেকে যায় নতুন বছরেও। একসময়ের মিউজিক ওয়ার্ল্ডের সামনে দাঁড়িয়ে খই ফোটে রবের মুখে, ‘ভারতে অনেক দিন এসেছি। অনেক শহর ঘুরেছি। ক্রিসমাসের জন্য একবার ভেবেছিলাম গোয়ায় যাব, কিন্তু কলকাতায় চলে এলাম। কলকাতার ক্রিসমাস সেলিব্রেশন নিয়ে অনেক কথা শুনেছিলাম। খুব সাজায়, হুল্লোড় হয়। এখন চাক্ষুষ করছি। আমার স্ত্রীও খুব এনজয় করছে। অনেক রাত পর্যন্ত এখানেই আছি।’

রাস্তায় গাড়ির গতি কম। সন্ধ্যার ভিড় গোটাটাই ফুটপাথে। কেকের দোকানের সামনে লম্বা লাইন। যে দিকে চোখ যায় শুধু সেলফি তোলার হিড়িক। হাতে হাতে সেলফি স্টিক, মোবাইল আর এসএলআর ক্যামেরার ঝলকানি। কানে আসছে ভিখারিদের কৌটো নাড়ার আওয়াজ, হকারদের ডাক। এমন বিচিত্র কোলাহলের মধ্যে তালাবন্ধ অ্যালেন পার্কের সামনে কিঞ্চিৎ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ফিনল্যান্ডের দম্পতি।

জুহা লাইতালাইলেন আর সির্পা তেনহুনেন। জুহার অধ্যাপক স্ত্রী সির্পা গবেষণার কাজে মাস দুয়েক হল কলকাতায়। বছরশেষের উৎসব স্ত্রীর সঙ্গে কাটাতে দিন তিনেক হল চলে এসেছেন জুহাও। পেশার ফোটোগ্রাফার। ক্যান্ডিড পার্ক স্ট্রিট লেন্সবন্দি করার ফাঁকে বললেন, ‘কলকাতায় আসা নিয়ে এমনিতে কোনও প্ল্যান ছিল না। তবে এসে ভালো লাগছে। এতরকমের আলো, চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ক্রিসমাসে পার্কটা কেন বন্ধ? দেখছি, কালও বন্ধ থাকবে!’

অ্যালেন পার্ক থেকে সরে আসার ফাঁকে সির্পা শোনালেন বড়দিনের পরিকল্পনা, ‘কাল সকালে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালে যাব। পরে ক্রিসমাস লাঞ্চ।’

পার্কের সামনেই ছিলেন চিনা দম্পতি শেন ইয়েইহং আর শেন জুন। এক মাস ধরে ভারত ঘুরছেন। বড়দিনের দুপুরে দার্জিলিংয়ের পথে রওনা দেবেন। স্বামী ছবি তুলতে ব্যস্ত, স্ত্রী ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে শোনালেন পার্ক স্ট্রিটের অভিজ্ঞতা, ‘জায়গাটা আমাদের সাংহাইয়ের মতো। ক্রিসমাসের মধ্যে চলে এসে বেশ লাগছে।’ তবু জুনের আফশোস, ‘পার্কটা বন্ধ, ভেবেছিলাম, এখানকার কালচারাল কোনও প্রোগ্রাম হবে!’ চিলির বছর একুশের তরুণ গ্যাস্পার আলেহান্দ্রোকে আবার কলকাতার ক্যাকফোনি সে ভাবে ছোঁয়নি। শহরে এসেছেন সেতার শিখতে। রয়েছেন পার্ক স্ট্রিটের মায়াবী আলো থেকে বেশ কিছুটা দূরে, উত্তর শহরতলির মধ্যমগ্রামে। বড়দিনের বিকেল কাটবে দমদমে সেতারের অনুষ্ঠান দেখে। বললেন, ‘ক্রিসমাসের ছুটিটা কাজে লাগাতেই কলকাতায় আসা। কিন্তু উৎসবে গা ভাসাতে নয়, গুরুজির কাছে সেতারের শিক্ষাটা বাড়িয়ে নিতে চাই। ক্রিসমাসে সেতারের অনুষ্ঠানে যাব, ওটাই আমার সেলিব্রেশন!’

মঙ্গলবারের প্ল্যানে পার্ক স্ট্রিট থাক বা না-থাক, কনকনে হাওয়া ‘ঝামরে পড়বে’ ঠিকই। উত্তুরে বাতাস বঞ্চিত করবে না, হলফ করে বলছে হাওয়া অফিস। ক্রিসমাসে ইভে কলকাতার রাতের তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। মঙ্গলবারও তার আশপাশে থাকার কথা।

প্রকৃতির শৈত্য বনাম উৎসবের উষ্ণতার মধ্যেই বড়দিন কাটবে রব-জুন-জুহাদের।

পরের খবর

West bengal newsসম্পর্কে আরও বিস্তারিত ও নতুন খবর জানতে ক্লিক করুন। সব ধরনের ব্রেকিং, আপডেট এবং বিশ্লেষণ সবার প্রথম বাংলায় পড়তে ক্লিক করুন Bengali Newsএই সময় ডিজিটাল