অমিত চক্রবর্তী
২০১৭ সালে মুর্শিদাবাদের কান্দির এক দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী স্কুলে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ে তার ওড়নায় টান এবং তার পরে জোর করে বিয়ের প্রতিশ্রুতি আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে এক যুবকের বিরুদ্ধে। বিয়ের প্রস্তাব না-মানলে মুখে অ্যাসিড ছোড়ার হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে দু'বছর জেল হয় ওই যুবকের। প্রমাণ খতিয়ে দেখে কান্দি আদালতের তরফে বলা হয়, হাত ধরে টানাটানি এবং ওড়না টেনে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে। POCSO আইনের ৮ ও ১২ নম্বর ধারায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে ওই আদালত। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪, ৩৫৪ বি, ৫০৬ ও ৫০৯ ধারাতেও দোষী সাব্যস্ত করা হয় যুবককে। ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয় হাইকোর্টে। তারই পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছে, যদি ওড়না বা হাত ধরে টানাও হয়, তা হলেও সেটা সেটা POCSO আইনে যৌন হেনস্থার সংজ্ঞার আওতায় পড়ে না। তবে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ এ ও ৫০৬ ধারায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা যেতেই পারে। বিচার করার সময়ে POCSO আইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী।
বিচারপতি চৌধুরী এই যুক্তি দিলেও আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, ওই যুবক আসলে কী করতে চেয়েছিলেন, সেটাই এখানে মূল বিবেচ্য হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে তাঁদের অস্ত্র সুপ্রিম কোর্টের রায়। গত ১৯ জানুয়ারি এক নাবালিকার যৌন হেনস্থা মামলায় বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চের বিচারপতি পুষ্প গনেড়িওয়ালার রায় ছিল, ত্বকে-ত্বকে সংস্পর্শ না-হলে তাকে POCSO আইনের অন্তর্ভুক্ত করা যায় না। ২৭ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট ওই রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়। সম্প্রতি বম্বে হাইকোর্টের ওই বিতর্কিত রায় বাতিল করে দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, এ ক্ষেত্রে যৌন লিপ্সাই বিবেচ্য হবে।
কলকাতা হাইকোর্টের মামলাটিতে অবশ্য নির্যাতিতার বয়ানে কিছু অসঙ্গতি পেয়েছে আদালত। বিচারপতি চৌধুরীর বক্তব্য, ২৪ অগস্ট বিকেল সাড়ে চারটেয় স্কুল থেকে ফেরার পথে রাস্তায় ওই ঘটনা ঘটেছে বলে FIR-এ জানান ছাত্রীর কাকা। সেখানে তিনি হাত ধরা বা টানার কথা বলেননি। কারও নামে অভিযোগও করেননি। অথচ নির্যাতিতা গোপন জবানবন্দিতে জানান, ২৭ অগস্ট সকাল সাড়ে দশটায় ঘটনা ঘটেছে। এর কিছুক্ষণ পরে তিনি বলেন, ২৪ অগস্ট বিকেলে ঘটনা ঘটেছে। এখানেই আদালতের পর্যবেক্ষণ, এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী যদি বা পরীক্ষার তারিখ ভুলেও যান, এটা আশ্চর্যের যে, তিনি ঘটনার সময়েও ভুলে গিয়েছেন! শুধু তাই নয়, যাঁদের সাক্ষী করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই অন্যের থেকে শুনে ঘটনাটি জেনেছিলেন। তাই তাঁদের সাক্ষ্য এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয় বলেও মনে করছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টে ওই যুবকের আইনজীবী নভোনীল দে বলেন, এফআইআর, সাক্ষীদের বক্তব্য, সেই ছাত্রীর গোপন জবানবন্দি থেকে POCSO ধারা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ- কোনওটার সঙ্গেই কারও মিল নেই। অথচ পুলিশ বেআইনি ভাবে যুবককে আরও বিপাকে ফেলতে কঠোর ধারা প্রয়োগ করেছে। নিম্ন আদালতও তা মেনে নিয়েই ওই ধারায় সাজা দিয়েছে। নিম্ন আদালতকে এ ব্যাপারে হাইকোর্টের বক্তব্য, এমন ক্ষেত্রে অভিযুক্তের 'বেনিফিট অফ ডাউট'-এ মুক্তি পেয়ে যাওয়ার অধিকার রয়েছে।